দিনের প্রথম উইকেট লেগ বিফোর। শেষ উইকেটও লেগ বিফোর। কাকতাল! দিনের শুরুর প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে উইকেট নেন ডান হাতি পেসার হাসান মাহমুদ। তার বলে লেগ বিফোর হন আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক অ্যান্ডি বালবার্নি। আইরিশ অধিনায়ক রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি। দিনের শেষ ওভারের (৯০ ওভার) শেষ বলে বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের শেষ বলটি ভিতরে ঢোকে। সফরকারী ব্যাটার জর্দান নিল বলের লাইন মিস করেন। বল আঘাত হানে ব্যাকফুটে। তাইজুলের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন জর্দান। এবারও টিভি আম্পায়ার জানান, আউট। প্রথম উইকেটের মতো শেষ উইকেটও লেগ বিফোর। দুটিতেই রিভিউ নিয়ে রক্ষা পাননি আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্টের প্রথম দিনের পুরোটা সময় খেলা হয়েছে। কিন্তু স্টেডিয়ামের আকাশ ঢাকা ছিল কুয়াশায়। কুয়াশাভেজা দিনে সিলেটের উইকেটে পেসাররা উইকেট পেয়েছেন। কিন্তু দিনটা ছিল বাংলাদেশের স্পিনারদের। তাইজুল, মুরাদ, মিরাজ ত্রয়ী স্পিনারের সাঁড়াশি আক্রমণে তিন শ পার করতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। অবশ্য অলআউটও হয়নি। পল স্টার্লিং ও কেড কারমাইকেলের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করেছে আয়ারল্যান্ড। প্রতিপক্ষের ৮ উইকেটের ছয়টিই নিয়েছেন টাইগার তিন স্পিনার।
বাংলাদেশের ১০৮ নম্বর ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অভিষেক হয়েছে বাঁ-হাতি স্পিনার হাসান মুরাদের। অভিষেকের দিনে বাজিমাত করেছেন মুরাদ। দিন শেষ করেছেন ২ উইকেট নিয়ে। টাইগার ইনিংসের চতুর্থ বোলার হিসেবে দিন শেষে তার স্পেল ২০-৫-৪৭-২। তবে সফল ছিলেন অফ স্পিনার মিরাজ। দিন শেষে তার স্পেল ২৩-৬-৫০-৩। দেশসেরা স্পিনার তাইজুল দিনের শেষ বলে উইকেট নেন লেগ বিফোরে। বাঁ-হাতি স্পিনারের স্পেল ২১-৬-৭২-১। তিন স্পিনারের দিন হলেও দুই পেসারও উইকেট নিয়েছেন। নাহিদ রানার স্পেল ১৪-০-৬৫-১ এবং হাসান মাহমুদের স্পেল ১২-৪-৩২-১। স্ট্যাম্পিং করায় মুশফিকুর রহিমকে টপকে গেছেন লিটন দাস। মুশফিকের স্ট্যাম্পিং ছিল ১৫টি। লরকান টাকার অ্যান্ড্রু বালবার্নিকে স্ট্যাম্পিং করে লিটনের স্ট্যাম্পিং এখন ১৭টি।
গতকাল টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামে নাজমুল হোসেন শান্তর একাদশ। দুই পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজান নাজমুল। নতুন বলে বোলিং করেন হাসান মাহমুদ। ইনিংসের প্রথম ওভারের ৪ নম্বর বলে লেগ বিফোর করেন প্রতিপক্ষের অধিনায়ক বালবার্নিকে। দলের স্কোর কার্ডে তখনো কোনো রান যোগ হয়নি। এরপর স্টার্লিং-কারমাইকেল দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৯৪ রান। দুজনে যখন বড় জুটি গড়ার পথে তখন আঘাত হানেন পেসার নাহিদ। অবশ্য স্টার্লিং সাজঘরে ফেরেন লাঞ্চ বিরতির পরের ওভারের তৃতীয় বলে। স্টার্লিং আউট হন ব্যক্তিগত ৬০ রানে। ৭৬ বলে ৯ চারের ইনিংসটি একেবারে নিশ্ছিদ্র ছিল না। ব্যক্তিগত ৮ ও ১০ রানে দুবার জীবন পান স্টার্লিং। কারমাইকেল ১২৯ বলে ৭ চারে ৫৯ রানের ইনিংস খেলার পথে জীবন পান একবার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা গতকাল ৫টি ক্যাচ মিস করেছেন। ক্যাচ মিসে আইরিশদের প্রথম দিনে অলআউট করতে পারেনি নাজমুল বাহিনী। টাইগার ডান হাতি পেসার হাসান মাহমুদ মিডিয়া মুখোমুখিতে ক্যাচ মিসকে খেলার অংশ বলেন, ‘এটা পার্ট অব দ্য গেম, ক্যাচ ছাড়বেই। কিন্তু আমরা চেষ্টা করি। এটা আসলে পজিটিভ হিসেবে নেই যে, সুযোগ আসছে। ফিল্ডাররা আরও রেডি থাকে পরের সুযোগের জন্য। অবশ্যই ভালো লাগে না ক্যাচ মিস হলে। কিন্তু সবাই চেষ্টা করছে।’ অবশ্য বরাবরই স্লিপ ফিল্ডিংয়ে টাইগার ফিল্ডাররা মিস করছেন ক্যাচ।
ক্যাচ মিসের সুবিধা নিয়ে সফরকারী আইরিশরা প্রথম দিন বেশ ভালোভাবে পার করেছেন। তারা বেশ স্ট্রোক খেলেছেন। ছক্কা মেরেছেন ৫টি ও বাউন্ডারি ২৯টি। স্টার্লিং ও কারমাইকেলের জোড়া হাফ সেঞ্চুরির পর স্পিনাররা বল ঘুরিয়েছেন। প্রথম দিনই বল ঘুরেছে এবং নিচু হয়েছে। পেসার হাসান মাহমুদ বলেন স্পিনাররা আরও সুবিধা পাবেন উইকেটে, ‘আমি বলব যে স্পিনারদের জন্য ভালো সুযোগ। যতদিন যাবে উইকেটটা আরও একটু ঘুরবে বা আরও একটু টার্ন হবে। বোলাররা যদি কনসিস্টেন্ট থাকে তাদের লাইন লেংথে, আমার মনে হয় যে স্পিনাররাই দিন শেষে ম্যাচ জেতাবে আমাদের।’
সিলেটের উইকেটে আগের ৪ টেস্টের পরিসংখ্যানও জানাচ্ছে, স্পিনাররাই বেশ সুবিধা আদায় করে নিয়েছেন। অবশ্য সর্বশেষ টেস্টে অসাধারণ বোলিং করেছিলেন জিম্বাবুয়ের ফাস্ট বোলার মুজারাবানি।
সিলেটের পরিসংখ্যান বলছে, চার টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করা দল জয়ী হয়েছে তিন ম্যাচে। শুধু সর্বশেষ টেস্টে রান তাড়া করে জিতেছে জিম্বাবুয়ে।