গলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ। ঠাণ্ডা কিংবা অত্যধিক গরমে গলা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। টনসিল, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদি গলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় এ অঙ্গ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ জন্যই গলাকে রোগমুক্ত রাখতে অনেকটা সচেতন থাকতে হয়। যোগব্যায়ামে গলাকে রোগমুক্ত রাখার জন্য চমৎকার এক ব্যায়াম রয়েছে। এটি হলো মৎস্যাসন। আসন অবস্থায় দেহ অনেকটা মাছের মতো দেখায় বলে এ আসনের নাম মৎস্যাসন। দুই ধরনের মৎস্যাসন চর্চা বহুল প্রচলিত। এ আসনের জন্য প্রথমে সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন, পায়ের পাতা জোড়া থাকবে। হাতের তালু দুটো চিৎ অবস্থায় নিতম্বের নিচে রাখুন। এবার হাতের ওপর ভর রেখে কোমরে চাপ দিয়ে সাধ্যমতো বুক উঁচু করুন এবং মাথা পেছন দিকে নিয়ে এসে সামনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত এ অবস্থায় থেকে এরপর আস্তে আস্তে হাতের ওপর ভর রেখে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। এভাবে আসনটি দু-তিন বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। এ আসনের আরেকটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। এবার পা দুটো পদ্মাসনে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এখন হাত দুটো মাথার দুই পাশে রেখে চাপ দিয়ে কাঁধ, পিঠ, কোমর মেঝে থেকে তুলে ঠিক ধনুকের মতো করুন। শুধু মাথার ব্রহ্মতালু মেঝেতে থাকবে। এবার ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙ্গুল এবং বাঁ হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙ্গুল ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০-৩০ সেকেন্ড এ অবস্থায় থাকুন। আসন ছাড়ার সময় একটু সাবধান হতে হবে। তাড়াতাড়ি করতে গেলে ঘাড়ে চোট লাগতে পারে। প্রথমে হাত আলগা করুন। হাতের তালু বা কনুই মেঝেতে রাখুন। এরপর হাতের ওপর জোর রেখে মাথা সোজা করুন এবং মাথা, কাঁধ, পিঠ ও কোমর মেঝেতে রাখুন। এবার পা আলগা করে ছড়িয়ে দিন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পদ্মাসনের হাত-পা বদল করে আসনটি আবার করুন। এভাবে দু-তিন বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। আসন দুটো অভ্যাসে থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল, থাইমাস প্রভৃতি গ্রন্থির খুব ভালো কাজ হয়। অর্থাৎ গলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক রোগের নিরাময় হয় এ আসনে। যাদের হাঁপানি, সর্দি-কাশির ধাত, ব্রঙ্কাইটিস, টনসিলের দোষ আছে তাদের এ আসন অবশ্যই করা উচিত। এ আসন মাথাধরা, অনিদ্রা, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা দূর করে। আসনটির সঙ্গে শশঙ্গাসন বা পদ-হস্তাসন জাতীয় মেরুদণ্ড সামনে বাঁকানো যায় মতো আসনের অভ্যাস রাখলে স্লিপড ডিস্ক, লাম্বার স্পন্ডিলোসিস জাতীয় রোগ কোনো দিন হতে পারে না। এ ছাড়াও যাদের বুকের খাঁচার কোনো দোষত্রুটি থাকে, আসনটি তাদের জন্য বিশেষ উপকারী। প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অন্তর্মুখী রস নিঃসরণে এ আসন বিশেষভাবে সাহায্য করে। এ রসক্ষরণ যদি প্রয়োজনমতো না হয়, তবে দেহের ক্যালসিয়াম জীর্ণ হয়ে দেহের কাজে আসে না। ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতি দেখা দেয়। তা ছাড়া প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অন্তঃক্ষরণ কম হলে খাদ্যবস্তু হজম হয় না, ফলে অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, পেটফাঁপা প্রভৃতি নানারকম পেটের রোগ দেখা দেয়।