সিলেটে উপচেপড়া দর্শকের সমাগম ঘটেছিল। বর্তমানে দেশের ফুটবলে যে করুণদশা তাতে গ্যালারি ছাড়িয়ে দর্শক মাঠে নেমে যাবে তা ছিল চিন্তার বাইরে। অনেকদিন পর উন্মাদনা দেখা গেল। এতে করে ফুটবলপ্রেমীরা দারুণ খুশি। কিন্তু দর্শকরা হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। কারণ ঢাকায় জিতলেও সিলেটে প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে গেছে। প্রথম ম্যাচে জয়ের পর অনেকে বলেছিলেন, এশিয়ান গেমসে প্রস্তুতি যে ভালো হচ্ছে তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু সিরিজ ড্র হওয়াতে অনেকে মন ক্ষুণ্ন। বলছেন এই মান নিয়ে গেমসে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মোকাবিলা করবে কিভাবে? 'বি' গ্রুপে বাংলাদেশকে খেলতে হবে উজবেকিস্তান, হংকং ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এটা ঠিক ফুটবলে পদক জেতার ক্ষীণ সম্ভাবনা নেই। সেই সামর্থ্যও বাংলাদেশের নেই। অধিনায়ক মামুনুল বলেছেন, আমাদের টার্গেট গ্রুপ পর্বে ভালো খেলা। আমরা শোচনীয় হারে দেশবাসীকে হতাশায় ডুবাতে চাই না। মামুনুলের কথায় যুক্তি আছে, কেননা এশিয়ান গেমসে ভালো নৈপুণ্য প্রদর্শন বড় প্রাপ্তি। গ্রুপ নির্ধারণের পর দেশের বেশ ক'জন ফুটবল বিশ্লেষক বলেছেন, উজবেকিস্তানকে হারানো সম্ভব না হলেও ছেলেরা যদি মাঠে নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারে তাহলে ড্র নয় আফগানিস্তান ও হংকংকে হারানোটা কঠিন কিছু হবে না।
আফগানিস্তান বর্তমানে সাফ চ্যাম্পিয়ন। হংকংয়ের কাছে গেল এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ১-৪ গোলে পরাজিত হয়েছিল। তারপরও দু'দল আহামরি এমন কোনো শক্তিশালী নয় যে তাদেরকে হারানোই যাবে না। কিন্তু সিলেটে বাংলাদেশ যে অগোছালো খেলাটা খেলল তাতে কি গেমসে দুই ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে আশা করা যায়? আর্মি স্টেডিয়ামে জয়ের পর দুই ডাচ্ কোচ লোডডিক ক্রুইফ ও রেনে কোস্টার এতটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন যে মাঠে নেমে খেলোয়াড়দের সঙ্গে উল্লাস করেছেন। কিন্তু সিলেটে হারের পর দু'জনই দারুণ ক্ষুব্ধ। তারা নাকি মাঠে কারো কারো ভিতরে খামখেয়ালিপনার ভাব খুঁজে পেয়েছেন। ম্যাচটি যে জিততে হবে এই মনোভাব নিয়ে তারা খেলেননি। কোচ নাকি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন খেলতে পারে না অথচ মাঠে নিজেদের ওভার স্মার্ট হিসেবে জাহির করতে চায়। গতকাল বিকেএসপিতে অনুশীলনের আগে খেলোয়াড়দের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন দুই ডাচ্ কোচ ও ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু। কোচ নাকি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন সিলেটে তোমরা যে খেলাটা খেলছ তাতে আমি ও রেনে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নয়। কোনো কোনো খেলোয়াড় তাকে বুঝাতে চেয়েছেন এত দর্শক দেখে আমরা নার্ভার্স হয়ে পড়েছিলাম। তাই কিছুটা এলোমেলো হয়ে পড়েছিলাম। কোচ এই যুক্তি কোনোভাবে মানেননি। তার কথা নেপাল তাহলে ম্যাচ জিতল কেন? তার মতে, নেপালও আহামরি ভালো খেলেনি কিন্তু বাংলাদেশের ভুলটা কাজে লাগিয়ে ম্যাচ জিতে গেছে। ম্যাচে অসংখ্য ভুলের কথা তুলে ধরেছেন। অযথা মাঠে লম্বা পাস দেওয়া হয়েছে। কাউকে নির্দিষ্ট না করে বল দেওয়া হয়েছে। যা কাজে লাগিয়েছে নেপাল। মাথা ঠাণ্ডা করে খেললে অবশ্যই ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। ক্রুইফ নেপালের প্রশংসা করে বলেছেন, প্রথম ম্যাচে হারলেও তারা লক্ষ্য রেখেছিল বাংলাদেশের দুর্বল দিকগুলো।
গোল সম্পর্কে বলেন, বল কোনোভাবে জালে জড়ানোর কথা নয়। ডিফেন্ডাররা একটু সতর্ক থাকলেই রুখে দেওয়া যেত। অন্য পজিশন নিয়ে মনক্ষুণ্ন থাকলেও রক্ষণভাগের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আর্মির বিপক্ষে কিভাবে ৪ গোল হজম করল তা নিয়ে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এশিয়ান গেমসে প্রতিপক্ষদের শক্তির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে এমন ম্যাচ খেললে তো পাত্তাই পাবে না। কোচ ম্যান টু ম্যানের ভুল তুলে ধরেছেন। বাকি যে সময় অনুশীলন চলবে তা শোধরানোর কথা বলেছেন। কোরিয়া যাওয়ার আগে বিদেশি দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা কমই বলা যায়। পুলিশের সঙ্গে একটা ম্যাচ হতে পারে। সেখানেই কোচ সিদ্ধান্ত নেবেন গেমসে বেস্ট ইলেভেনে কাকে কাকে খেলানো যায়।