'বিধাতা যাকে দেয়, দু-হাত উজাড় করে দেয়'- এই প্রবাদটি দারুণভাবে মিলে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে। মাস খানেক আগেই তো ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন, আর গতকাল দ্রুততম ১৫০ রানের রেকর্ডটাও নিজের করে নিলেন প্রোটিয়া মারকুটে এই ব্যাটসম্যান। আর দুই দুটি রেকর্ডই কিনা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে!
কাল সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ডি ভিলিয়ার্স যেভাবে ব্যাটিং করেছেন, 'ঝড়' 'সাইক্লোন' কিংবা 'টর্নেডো'- কোনো বিশেষণ দিয়ে তার ইনিংসের বিশেষত্বকে যথার্থভাবে তুলে ধরা যায় না! মাত্র ৬৬ বলে ১৬২ রান। তাও আবার এমন দলের বিরুদ্ধে করেছেন, যে দলটি আগের ম্যাচেই ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কাল ভিলিয়ার্স যখন ব্যাটিং করছিলেন, তখন টিভি পর্দার সামনে থাকা দর্শকরা তো বটেই গ্যালারিতে বসে থাকা দশর্করাও হয়তো 'হাইলাইটস' মনে করেছিলেন! একের পর এক বাউন্ডারি। যে দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসের প্রথম ৩০ ওভারে করেছিল মাত্র ১৪৭ রান, ৫০ ওভার শেষে সেই দলের স্কোর ৪০৮। অবিশ্বাস্য। অকল্পনীয়। সত্যিই ক্রিকেটে কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে বাস্তবের সঙ্গে তার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপ ফেবারিট ভাবা হলেও আগের ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে লজ্জাজনকভাবে হেরে যায় তারা। অন্যদিকে আইরিশদের বিরুদ্ধে অঘটনের শিকার হলেও পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দারুণ জয় পায় ক্যারিবীয়রা। গত ম্যাচে ক্রিস গেইল খেলেছিলেন ২১৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে অনেকটা 'আন্ডার ডগ' হিসেবেই খেলতে নামতে হয়েছিল প্রোটিয়াদের। অথচ সেই ম্যাচেই কিনা ইতিহাস গড়ে ২৫৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। এটা সম্ভব হয়েছে ডি ভিলিয়ার্সের ক্যারিশম্যাটিক ব্যাটিংয়ের জন্যই। এমন ব্যাটিংয়ের পর প্রোটিয়া দলপতি ম্যাচসেরা হবেন সেটাই স্বাভাবিক। হয়েছেনও। তবে অসাধারণ এই ইনিংসের জন্য কৃতিত্বটা দিয়েছেন সতীর্থদের। ম্যাচ শেষে ডি ভিলিয়ার্স বলেন, 'সত্যি কথা বলতে কি, এমন ইনিংস খেলে আমি নিজেই অবাক হয়েছি। তবে ম্যাচটা আমি দারুণ উপভোগ করেছি। অবশ্য এই ইনিংসটা খেলা সম্ভব হয়েছে সতীর্থদের জন্যই। তারা যদি প্রথম দিকে ব্যাটিং করে একটা বড় ভিত্তি না দিত, তাহলে তো আর আমি এত বেশি শট খেলতে পারতাম না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজ (কাল) আমি যা যা করতে চেয়েছি, সবই মনের মতো করেই করেছি। এটাও ঠিক যে ভাগ্য আমার সহায় ছিল।'
শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতের কাছে হেরেছিল ১৩০ রানের বিশাল ব্যবধানে। ভারতের ৩০৭ রানের জবাবে ওই ম্যাচে মাত্র ১৭৭ রান করেছিল প্রোটিয়া। তারপর ক্রিকেটারদের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সমালোচনার ঝড়। আর ওই ম্যাচই ভিলিয়ার্সকে ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রোটিয়া মারকুটে ব্যাটসম্যান বলেন, 'আগের ম্যাচটা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে। আর আমার টার্গেট ছিল এই ম্যাচে অবশ্যই জিততে হবে। সে তাড়না থেকেই আমি অনেক বেশি শট খেলেছি।'
ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ডের ম্যাচে ক্যারিবীয় বোলারদের পর ব্যাটসম্যানরাও সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ৪০৯ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মাত্র ১৫১ রানেই গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। আগের ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ন গেইল আউট হয়েছেন মাত্র ৩ রানে। সর্বোচ্চ ৫৬ রান এসেছে অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের ব্যাট থেকে। অবশ্য বোলিংয়ে সবচেয়ে বড় ঝড়টা গেছে ক্যারিবীয় দলপতির মাথার ওপর দিয়েই। তিনি ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ১০৪। ম্যাচ শেষে হোল্ডার বলেন, 'কিছুই বলার নেই। ডি ভিলিয়ার্স যেভাবে ব্যাটিং করেছেন এরপর আর করার কিছু ছিল না। এটা আসলে আমাদের জন্য একটা বাজে দিন ছিল।'