সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড? মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড? নাকি আবার সেই অ্যাডিলেড ওভাল? কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ের জন্য কোন ময়দানটা পছন্দ হবে মাশরাফিদের! অ্যাডিলেড ওভালে দুই দিন আগেও বিজয়োৎসব করেছে বাংলাদেশ। এই মাঠে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার আশা করা ঠিক হবে না। যত যাই হোক, এমনকি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিলটনের সিডনি পার্কে ম্যাচ জিতলেও এ গ্রুপে টাইগারদের দ্বিতীয় স্থানে থাকাটা কঠিনই। নেট রান রেটে অস্ট্রেলিয়ার উপরে উঠতে হলে মিরাকলই প্রয়োজন। এই সমীকরণ যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে বাংলাদেশ শেষ আটে যাবে 'এ' গ্রুপের তিন অথবা চার নম্বর দল হিসেবে।
তৃতীয় দল হিসেবে শেষ আটে খেললে বাংলাদেশকে আরও একবার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের (এমসিজি) বিশালতার মুখোমুখি হতে হবে। এই মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে ৯২ রানে পরাজয়ের তিক্ত স্মৃতি রয়েছে এ বিশ্বকাপেই। লঙ্কানদের ৩৩২ রান তাড়া করতে যেয়ে ২৪০ রানেই থমকে গিয়েছিল টাইগারদের ইনিংস। মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে হলে বাংলাদেশকে মুখোমুখি হতে হবে সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার। শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারালে ৮ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় দ্বিতীয় স্থানেই থাকবে। পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ তো শেষ আট নিশ্চিত করার জন্য এখনো লড়াই করছে। গতকাল ভারতের কাছে আয়ারল্যান্ড হেরে যাওয়ায় অবশ্য সুবিধা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ড যদি পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারালেই নিশ্চিত করবে কোয়ার্টার ফাইনাল। এ গ্রুপে তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে বি গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার। সেক্ষেত্রে একটা সুখস্মৃতি তো আছেই মাশরাফিদের। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে শন পলক-জ্যাক ক্যালিসদের দুরন্ত দলটাকে ৬৭ রানে একরকম উড়িয়েই দিয়েছিলেন হাবিবুল বাশাররা। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সেই সুখস্মৃতি ফিরে আসতেই পারে! অবশ্য আয়ারল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারালে পাকিস্তানও দ্বিতীয় স্থানে উঠে যেতে পারে বি গ্রুপে। সেক্ষেত্রে মেলবোর্নে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে পারে টাইগাররা। পাকিস্তানকেও বিশ্বকাপের মঞ্চে হারানোর সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নর্দ্যাম্পটনের কাউন্টি গ্রাউন্ডে ৬২ রানে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল টাইগাররা।
বাংলাদেশ যদি এ গ্রুপে চার নম্বর হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে আসে তবে সামনে থাকবে প্রতিবেশি ভারত। বি গ্রুপে টানা পাঁচ জয়ে এরই মধ্যে গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে ধোনির দল।
ভারতের বিপক্ষে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে খেলতে হবে মাশরাফিদের। ভারতীয়দের বিপক্ষেও মাশরাফিদের বিজয়ের স্মৃতি আছে। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে টাইগারদের কাছে হেরেই গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন গাঙ্গুলি-টেন্ডুলকাররা। ভারতের দেওয়া ১৯২ রানের লক্ষ্যে পৌঁছেছিল বাংলাদেশ ৫ উইকেট আর ৯ বল হাতে রেখেই। সে ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন মাশরাফিই। ভারতের বিপক্ষে এরপর আরও ১২টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে টাইগাররা। একবার জিতলেও হেরেছে ১১বারই!
রেকর্ড যাই হোক, বিশ্বকাপের মঞ্চ বলেই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশকে অনেক শক্ত সমর্থ এক দল বলে মনে হচ্ছে। এমনকি ভারতীয় মিডিয়াও এখন আর বাংলাদেশকে সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছে না। বিশেষ করে ইংরেজদের হারানোর পর। মরগানদের এ দলটার কাছেই বিশ্বকাপের আগে দু দুটো ম্যাচে পরাজিত হয়েছিলেন ধোনিরা। সবমিলিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ভারত-বাংলাদেশ সম্ভাব্য ম্যাচও এনে দিচ্ছে বাড়তি আকর্ষণ।
এই তিনটি সমীকরণ ছাড়াও একটি সম্ভাব্যতা বিচার করা যায়। যদি বাংলাদেশ শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে নেট রান রেটে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে যায় আর অন্যদিকে বি গ্রুপে পাকিস্তানকে হারিয়ে তিন নম্বরে চলে আসে আয়ারল্যান্ড তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাডিলেড ওভালে মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড! সেক্ষেত্রে সেমিফাইনাল মাশরাফিদের জন্য কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে!