সীমানা রশি ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফিল্ডাররা! সিঙ্গেল রান হয় হোক, বাউন্ডারি আটকাতে মহা-তৎপরতা! অতন্দ্র প্রহরীর মতো সতর্ক ফিল্ডাররা! কিন্তু ওভারের শেষ বলে ঠিক উল্টো চিত্র! ফিল্ডাররা ঢুকে যাচ্ছেন ৩০ গজ বৃত্তে। বাউন্ডারি হলেও আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো ক্রমেই যেন সিঙ্গেল রান না হয়। গতকাল সাকিব আল হাসান যখন ব্যাট করছিলেন তখন পাকিস্তানের ফিল্ডিং ছিল অনেকটাই এমন।
ইনজুরির জন্য বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান শাহাদাত হোসেন রাজীব খেলতে পারবেন না। তাই সাকিবের সঙ্গে শহীদের জুটি-ই ছিল শেষ জুটি! দলীয় ১৪০ রানের মাথায় তাইজুল আউট হওয়ার পর সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়েন আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া পেসার মোহাম্মদ শহীদ। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের দৃষ্টিতে তখন রাজ্যের হতাশা। গ্যালারির দিকে একবার তাকালেন। বাংলাদেশের ইনিংস তখন ধ্বংসপ্রাপ্ত এক নগরী, তারপরও গ্যালারি থেকে ভেসে আসছে 'বাংলাদেশ' 'বাংলাদেশ' চিৎকার! পাঁচ অক্ষরের এই শব্দটাই যেন সাকিবকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করল।
সাকিব খেললেন ৯১ বলে ৮৯ রানের হার না মানা জাদুকরী এক ইনিংস। ১৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে দুটি বিশাল ছক্কা। একটুর জন্য সেঞ্চুরিটা হলো না। সঙ্গী না থাকায় ১১ রানের হতাশা নিয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরতে হলো সাকিবকে।
অবশ্য সাকিব সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিলেন শুভাগত হোমের বিদায়ের পরই। তাইজুল ও শহীদকে তো আর সঙ্গী বলা যায় না! বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নন-স্ট্রাইক প্রান্তে দাঁড়িয়ে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার ও শুভাগত হোমের সাজঘরে ফেরা দেখেছেন আর আফসোস করেছেন হয়তো! তাইজুলের ওপর যদিও কিছুটা ভরসা ছিল কিন্তু শহীদের ওপর কি আর বিশ্বাস করা চলে! কিন্তু সেই শহীদের সঙ্গেই গড়লেন ইনিংস সেরা ৬৩ রানের জুটি। যে জুটিতে শহীদের জোগান মাত্র এক রান!
এক প্রান্ত আগলে রেখে পাকিস্তানের বোলারদের প্রহার করেছেন সাকিব। অষ্টম উইকেট হিসেবে যখন তাইজুল আউট হলেন তখন সাকিবের রান ছিল মাত্র ২৬। তাও আবার ৫৫ বল খেলে। সেখান থেকে ৭২ বলে পূরণ করেন হাফসেঞ্চুরি। শেষ ১৯ বলে করেন ৩৮ রান। একসময় মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সাকিব যখনই শহীদের ওপর ভরসা করলেন তখনই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। ইয়াসির শাহর বলে আউট হয়ে গেলেন শহীদ। তখন সবার দৃষ্টি ড্রেসিং রুমের দিকে! যদি শেষ পর্যন্ত শাহাদাত ব্যাট হাতে নেমে পড়েন। কিন্তু শাহাদাত আর ব্যাট হাতে মাঠে নামেননি। সাকিবকেও ফিরতে হয়েছে অতৃপ্তি নিয়ে।
অবশ্য কাল একবার সৌভাগ্যের ছোঁয়ায় ব্যক্তিগত ২৩ রানের মাথায় নতুন জীবনও পেয়েছিলেন সাকিব। ৩৪.৩ ওভারে পাকিস্তানের পেসার ওয়াহাব রিয়াজের বলে সরাসরি বোল্ড হয়েছিলেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় ওভার স্টেপিং করেছেন রিয়াজ। 'নো' বলের সুবাদে বেঁচে যান সাকিব। তারপর সেই ওয়াহাব রিয়াজকেই সবচেয়ে বেশি প্রহার করেছেন।
সাকিবের ব্যাটে ভর করেই কাল প্রথম ইনিংসে ২০৩ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, ফলোঅনে পড়ার পরও বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামে পাকিস্তান। ৬ উইকেটে ১৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেন মিসবাহ্-উল হক।
৫৪৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে এক উইকেটে ৬৩ রান করে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। এখনো দুই দিন বাকি। ফল অবধারিত। তবে সেটা বাংলাদেশের বিপক্ষেই যেতে পারে। কেননা চতুর্থ ইনিংসে এত বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। তারপরও দিনশেষে সম্ভাবনার কথা শোনালেন সাকিব আল হাসান। তিনি বলেন, 'লড়াই ছাড়া আমরা পাকিস্তানকে সহজে ছাড় দেব না। যদি কাল (আজ) প্রথম ঘণ্টায় আমরা কোনো উইকেট না হারাই তবে ভালো কিছু করা সম্ভব।' তবে বাস্তবতাও মেনে নিচ্ছেন সাকিব, 'যে অবস্থা তাতে মনে হয় আমরা হারতেছি। এমন টেস্টে ভালো করা খুবই কঠিন।' তবে সাকিব অনুপ্রাণিত হচ্ছেন, খুলনা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং নিয়ে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার বলেন, 'খুলনার ইনিংসটা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। বাড়িয়ে দেবে আত্দবিশ্বাস। এখন দেখা যাক।'
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ৫৫৭/৮ ডিক্লে.
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৪৭.৩ ওভারে ২০৩ (সাকিব ৮৯*, ইমরুল ৩২, মাহমুদুল্লাহ ২৮, তাইজুল ১৫, ইয়াছির ৩/৫৮, ওয়াহাব ৩/৭৩, জুনায়েদ ২/২৬)।
পাকিস্তান ২য় ইনিংস : ৪১.১ ওভারে ১৯৫/৬ ডিক্লে. (মিসবাহ ৮২, ইউনুস ৩৯, আজহার ২৫, সরফরাজ ১৮*, শহীদ ২/২৩, মাহমুদুল্লাহ ১/৮, শুভাগত ১/১৮, সৌম্য ১/৪৫, তাইজুল ১/৫৬)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ১৪ ওভারে ৬৩/১ (তামিম ৩২*, ইমরুল ১৬, মুমিনুল ১৫*, ইয়াছির ১/৭)।