আসিয়ানভুক্ত দেশ মিয়ানমার। খনিজ আর বনজ সম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশটি। গত পাঁচ দশক ধরে সামরিক শাসনের জাঁতাকলে পিষ্ট দেশটির জনগণ। দেশটি যে ক্রিকেট খেলে, সেটা ভাবতে চোখ কপালে উঠার মতো! অথচ সত্যি। এই মিয়ানমার ঢাকায় ক্রিকেট খেলেছে এবং জিতেছে। তবে এই ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা, বলা ভার। কিন্তু সত্যি। সেই সত্যিটাই বললেন দেশের সবচেয়ে বর্ষীয়ান ক্রীড়া সাংবাদিক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। শুধু মিয়ানমারের ক্রিকেট খেলতে আসার গল্পই বলেননি, বলেছেন বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্টের তৃতীয় দিন চলাকালীন ঢাকার মাঠ মাতিয়ে যাওয়া তারকা ক্রিকেটারদের নানা গল্পগাথা। বলেছেন বিস্মৃত হয়ে যাওয়া ব্রিটিশ ভারতের সেরা ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ নাসিরের কথা। কলিন কাউড্রে, ওয়েসলি হলের কথা।
চাপের মুখে কাল অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন সাকিব। খেলেন ৮৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। সাকিবের দৃঢ়তায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ২০৩ রানে। ফলোঅন করানোর সুযোগ থাকার পরও ব্যাটিং করে পাকিস্তান। কেন পাকিস্তান ব্যাটিং করল, এ নিয়ে যখন রাজ্যের কাটাছেঁড়া হচ্ছে, তখন ৪৯ বছর ধরে ক্রীড়া সাংবাদিকতা করা কামরুজ্জামান তার অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে নানা ইতিহাস শোনাতে থাকেন উপস্থিত ক্রীড়া সাংবাদিকদের। বলেন, ম্যাচের যে পরিস্থিতি, মীরাক্কেল কিছু না হলে শতভাগ হারের সম্ভাবনা বাংলাদেশের। এসব বলতে বলতে সবাইকে বিস্মিত করে জানান ঢাকায় বার্মার ক্রিকেট খেলে যাওয়ার কথা। বার্মার বর্তমান নাম মিয়ানমার, দেশটি হঠাৎ করে আলোচনায় আসার কারণ, সাকিব। সাকিবকে ক্রিকেটে আনার গুরু আশফাকুল ইসলাম বাপ্পি এখন মিয়ানমার ক্রিকেট দলের কোচ। এসব আলোচনা করতে করতেই কামরুজ্জামান মিয়ানমার ক্রিকেট দলের ঢাকায় খেলে যাওয়ার কথা বলেন।
মিয়ানমার ক্রিকেট দল দুটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে ঢাকায় এসেছিল ১৯৫১ সালে। একটি ঢাকায় এবং অপরটি চট্টগ্রামে হওয়ার কথা ছিল। ঢাকায় হলেও চট্টগ্রামে হয়নি। ঢাকার ম্যাচটি জিতেছিল মিয়ানমার। ওই ম্যাচে মিয়ানমার দলে তিনজন বার্মিজ খেলেছিলেন। বাকিদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ কাউন্টি ক্রিকেটার এবং বাকিদের সবাই পাকিস্তানি ব্যবসায়ী। তিন দিনের ম্যাচটিতে ইস্ট পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনকে (ইপিএসএফ) হারিয়েছিল মিয়ানমার দলটি। ওই ম্যাচের পোশাক সাদা থাকলেও ব্রিটিশ কাউন্টি ক্রিকেটার খেলেছিলেন ছাই রঙের শার্ট, হলুদ প্যান্ট ও হ্যাট পরে। তার কৌতূক ঢাকার ক্রিকেটারদের বেশ আনন্দ দিয়েছিল। খেলা হয়েছিল বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। অবশ্য তখন স্টেডিয়াম ছিল না। ছিল উন্মুক্ত একটি মাঠ। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে, সামরিক শাসিত দেশটির ক্রিকেট ইতিহাস রয়েছে। ক্রিকেট খেলত এবং বেশ ভালো ক্রিকেট খেলত দেশটি। ব্রিটিশ আমলে রেঙ্গুনে দুটি ম্যাচ খেলেছিল এমসিসি। এখনো ক্রিকেট খেলে। আইসিসির সদস্য হলেও সেটা না খেলারই মতো!