সত্তর দশকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের আক্রমণ শানাতেন মদন লাল, আবিদ আলিদের মতো মিডিয়াম পেসাররা। তাদের বলের গতি ছিল বড় জোর ১১০-১১৫ কিলোমিটার! গতির বোলার থাকত না বলেই বাধ্য হয়ে ভারত খেলত তিন-চার স্পিনার নিয়ে। উইকেট বানাত স্পিনসহায়ক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অবস্থা কি এখন সত্তর দশকের সেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের মতো? বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মাশরাফি-রুবেল-তাসকিনদের নিয়ে যেখানে মাতামাতি, সেই বাংলাদেশ ফতুল্লায় টেস্ট খেলতে নামল আনকোড়া মোহাম্মদ শহীদকে নিয়ে। একাদশ যখন এমন, তখন প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন উঠতেই পারে, বাংলাদেশের পেস বোলিংয়ে কি এতই দৈন্য যে, কোনো পেসার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না খেলাতে। কিংবা পাইপ লাইন এতটাই শক্তিশালী যে, তারকা পেসারদের বিশ্রাম দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে খেলাচ্ছে আনকোড়া এক পেসারকে।
ফতুল্লায় ভারতের বিপক্ষে এক পেসার দিয়ে একাদশ সাজানোয় সমালোচনার তলোয়াড়ে এফোর-ওফোর হয়েছেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। এক পেসার খেলানোয় যে রকম সমালোচিত হয়েছেন হাতুরাসিংহে, টাইগারদের দায়িত্ব নেওয়ার পর এতটা তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়নি কোচের। প্রথমদিন পোস্ট ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়ার মুখোমুখিতে এক পেসার এবং রুবেলকে বসানোর ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাতুরাসিংহে। কিন্তু মনোপুঃত হয়নি কারও। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতীয় মিডিয়াও সমালোচনার তির্যকবাণে ছিন্নভিন্ন করেছে কোচকে।
টেস্ট শুরুর আগের দিন উইকেট দেখে বলেছিলেন, এমন উইকেট কোনোদিন দেখেননি। অবশ্য এটাও জানিয়েছিলেন, এমন উইকেটে পেসারদের সাফল্য পাওয়া বড়ই কষ্টকর হবে। উইকেটের এমন চরিত্র পড়েই তিনি দুই টেস্ট খেলার অভিজ্ঞ শহীদকে খেলিয়েছেন। বসিয়ে রাখেন ২৩ টেস্ট খেলা রুবেলকে। অথচ ভারতীয় দলে খেলছেন তিন পেসার। রুবেলকে বসিয়ে রাখার ব্যাখ্যায় কোচ বলেন, 'রুবেল এখনো শতভাগ ফিট নন। এই উইকেটে সাফল্য পেতে যে কষ্ট করতে হবে, সেটা করা সম্ভব নয় রুবেলের। কারণ সে ইনজুরি কাটিয়ে মাত্র ফিরেছেন।' তবে আড়ালের কথা ভিন্ন। রুবেলকে খেলানো হয়নি ওয়ানডে সিরিজের জন্য। কোচের কাছে টেস্ট ক্রিকেটের চেয়ে ওয়ানডের গুরুত্ব অনেক বেশি। রুবেলকে না খেলিয়ে যেমন সমালোচিত হয়েছেন কোচ। তেমনি তাসকিন আহমেদের মতো গতিশীল বোলার থাকার পরও তাকে কেন টেস্ট স্কোয়াডে রাখা হয়নি, এর কোনো উত্তর নেই। নির্বাচকদের ব্যাখ্যা, তাসকিন এখনো টেস্ট খেলার মতো পুরো ফিট নন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আগের সাইড স্ট্রেইনে ভুগেছেন তাসকিন।
কোচ মুখে না বলেও একটি চিত্র স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফাস্ট বোলিং পাইপ লাইনটি বড্ড নড়বড়ে। মাশরাফির উত্তরসূরি খুঁজে পাচ্ছে না ক্রিকেট বোর্ড। পাচ্ছে না বলেই, অফ ফর্মের শাহাদাত হোসেন রাজিব, শফিউল ইসলাম সুহাশ, আবুল হাসান রাজু, রবিউল ইসলাম শিবলুদের খেলানো হচ্ছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যে উইকেট থাকা দরকার, সেটা নেই। তবে আশার কথা শুনিয়েছেন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ, 'আগামী মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটগুলো নতুন করে বানানো হবে। সেখানে পেসাররা সুুবিধা পাবেন। সেদিকে নজর রাখা হবে। অবশ্য ব্যাটসম্যানরাও সুবিধা পাবেন।' এখন দেখা যাক বাংলাদেশের ক্রিকেটের পেস বোলিং পাইপ লাইনটা কতটা শক্তিশালী হয় ভবিষ্যতে। না, ভবিষ্যতেও খেলতে হবে এক পেসার নিয়েই!