শুরুতে নাম বলেননি। শুধু জানিয়েছেন, সাফল্য পাওয়ার কারণ অ্যাকশন পাল্টানো এবং অ্যাকশন পাল্টিয়েছেন কোচের পরামর্শে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাফল্যের গূঢ় রহস্য যখন প্রকাশ করেন, তখন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবার চোখেই ভেসে ওঠে বোলিং কোচ রুয়ান কালপাগের নাম। কিন্তু সাকিব তার নাম বলেননি, বলেছেন ক্রিকেট বোর্ডের গেমস ডেভেলপমেন্টের ন্যাশনাল ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিমের নাম। ফাহিমের টিপসেই বোলিং অ্যাকশন পাল্টে ম্যাচে সাফল্য পেয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার সাকিব এবং একপেশে ম্যাচে ফিরিয়েছেন বাংলাদেশকে। প্রথম দিন উইকেটশূন্য সাকিব কাল নিয়েছেন ৪ উইকেট। অ্যাকশন পাল্টে সাফল্য বলতেই হবে!
অ্যাকশন পাল্টানোর দিনে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ঘরের মাটিতে শততম উইকেট নেওয়ার বিরল রেকর্ডও গড়েন। ফতুল্লায় খেলছেন ক্যারিয়ারের ৪০ নম্বর টেস্ট। উইকেট ১৪৬টি। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট। দিনের প্রথম সেশনে ড্যাসিং ওপেনার শেখর ধাওয়ানের ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ঘরের মাঠে শততম উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান। ঘরের মাঠে তার উইকেট এখন ১০৩! আজ ভারত ইনিংস ঘোষণা না করলে তা বাড়তেও পারে। ক্যারিয়ারের ২৮টিই খেলেছেন দেশে। আরেক বাঁ হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের উইকেট দেশে ১৫ টেস্টে ৩৪টি। রফিকের ১০০ উইকেটের ৬৬টিই দেশের বাইরে। ঘরের মাঠে উইকেটে শিকারের সেঞ্চুরির কথা জানতেন না সাকিব। তবে দিনশেষে তা ভালোই লাগছে বলেন, 'আমি জানতাম না রেকর্ডের কথা। অবশ্য ঘরের মাঠে ১০০ উইকেট নিতে পেরে ভালো লাগছে।'
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন টেস্ট সিরিজের প্রথম দুটিতে নিয়েছিলেন ১৭ উইকেট। খুলনায় আবার ১০ উইকেট ও সেঞ্চুরি করে নাম লিখেছিলেন দুই ক্রিকেট লিজেন্ড ইয়ান বোথাম ও ইমরান খানের নামের পাশে। এর পরই হারিয়ে ফেলেন ছন্দ। গত তিন টেস্টে তার উইকেট মাত্র ৩টি। ভাবা যায়! কিন্তু সত্যি। ফতুল্লায় প্রথম দিন ৯ ওভার বোলিং করে ছিলেন উইকেটশূন্য। স্বাভাবিকভাবেই তখন মনে হয়েছিল, উইকেট খরা হয়তো চলবেই। সাকিব বিষয়টি উপলব্ধি করেই কথা বলেন প্রিয় কোচ ফাহিমের সঙ্গে। অল্প কিছু সময় কথা বলেই বদলে যান। ব্যর্থতার চোরাবালি থেকে ওঠে আসেন সাফল্যের রাস্তায়। উইকেট শূন্য প্রথম দিনের পর কাল বৃষ্টিস্নাত তৃতীয় দিনে নেন ৪ উইকেট। এই সাফল্যের গূঢ় রহস্য উন্মোচন করে বলেন, 'উইকেট পেলেও এখনো পুরোপুরি আত্দবিশ্বাসী নই। তবে ছন্দে ফিরতে চেষ্টা করছি। আজ শুরুতে ভালো বোলিং করেছি। পরে ছন্দ হারিয়ে ফেলি। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে কাজ করতে হবে নিয়মিত। গত কয়েকটি টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে ভালো করতে পারছিলাম না। গত (পরশু) রাতে আমি ফাহিম স্যারের সঙ্গে কথা বলি। তিনি কিছু টিপস দিয়েছেন। সেটা নিয়ে কাজ করছি। পুরোপুরি অ্যাপ্লাই করতে সময় লাগবে। আমার মনে হয় একটু সময় দিলে ভালো করতে পারব।' অ্যাকশনের কোন দিকটা পাল্টেছেন কোচ? 'আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না। ফিজিক্যালি দেখাতে হবে।' তবে শোনা যায়, সাকিবের পায়ের ল্যান্ডিং ঠিক করে দিয়েছেন ফাহিম। আগে যে অ্যাকশনে বোলিং করতেন, তাতে পায়ের ল্যান্ডিংটা আড়াআড়ি পড়ত। এখন বেসিক অনুযায়ী পড়ছে। তাই বোলিং লেন্থ ভালো হচ্ছে এবং বেড়েছে অ্যাকুরেসিও।
টেস্টের তিন দিন শেষ। অথচ এখনো শেষ হয়নি এক দলের প্রথম ইনিংস। তাই অনেকে ভাবছেন, টেস্টের ভবিষ্যৎ ড্র। সবার সুরে তাল মিলিয়ে ড্রয়ের কথাই বললেন সাকিব, 'আমারও মনে হয় ড্র হতে পারে টেস্ট।' ড্রয়ের আশঙ্কা করলেও এখন পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে নামেনি বাংলাদেশ। তার ওপর উইকেটে যেভাবে বল ঘুরছে, তাতে হারভজন সিং ও রবিচন্দন অশ্বিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন। সেটা মাথায় রেখেই সাকিব জানান দল প্রস্তুত ব্যাটিং করতে, 'স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান থাকলে আমি বলতাম ভারত ইনিংস ঘোষণা করবে। প্রায় ৫০০ (৪৬২/৬) রান করেছে, তাই কাল (আজ) ইনিংস ঘোষণা করতেই পারে। আমরা ভেবেছিলাম, চা বিরতির পর তারা ইনিংস ঘোষণা করবে। কিন্তু করেনি। কাল (আজ) করলেও আমরা ব্যাটিং করার জন্য প্রস্তুত। সবাই জানি আমাদের কাজ কী। হরভজন ও অশ্বিনকে খেলার মতো ভালো ব্যাটসম্যান রয়েছে আমাদের।'
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস : ১০৩.৩ ওভারে ৪৬২/৬ (বিজয় ১৫০, ধাওয়ান ১৭৩, রাহানে ৯৮, কোহলি ১৪, সাকিব ৪/১০৫, জুবায়ের ২/১১৩)।