বলটি পিচ করল অফ স্ট্যাম্পের সামান্য বাইরে। বিরাট কোহলি দ্বিধা না করে সামনের পায়ে কাভারে খেললেন। চোধ ধাঁধানো কাভার ড্রাইভে হাঁকানো বাউন্ডারিটি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন ইমরুল কায়েশ। নড়ার সুযোগটুকুও পাননি। তারপরও মিড অফে দাঁড়ানো অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম হাততালি দিয়ে উৎসাহ দেন জুবায়ের হোসেনকে। দূর থেকে বোঝা যাচ্ছিল 'কিছু হয়নি! কিছু হয়নি! পরের বলে হবে!' বলে সাহস দিচ্ছেন দলের তরুণতম সদস্যকে। অধিনায়কের এমন উৎসাহেই হয়তো আত্মবিশ্বাস ফিরে পান জুবায়ের। পরের বলে পেয়ে যান পরম আরাধ্য উইকেট। বোধহয় ভাবেননি এমনটি হবে। উইকেটে পাওয়ার পর তার বিস্ময় মাখানো চোখ-মুখ বলছিল, কতটা চমকে গেছেন। আগের বলটি ছিল লেগ স্পিন। প্রলুব্ধ করতে পরের বলটিতে লুপ দিয়ে পিচ করলেন অফ স্ট্যাম্পের বাইরে এবং একটু টেনে। এবারও সামনে পা বাড়িয়ে কাভারে খেলতে গেলেন ভারতীয় অধিনায়ক। কিন্তু বোকা হয়ে দেখেন বল ভিতরে ঢুকছে। যখন বুঝলেন, তখন সব শেষ। কিছু করার ছিল না কোহলির। শুধু দেখলেন গুগলিতে তার অফ স্ট্যাম্পের বেলস উড়ে যাচ্ছে। গুগলিতে শুধু কোহলিকে নন, বোকা বানান ঋদ্ধিমান সাহাকে। দুই দুটি উইকেট শিকারই স্পষ্ট করে দিয়েছে, কোচ কেন তাকে নিয়ে এত লড়াই করেন নির্বাচক প্যানেলের সঙ্গে। কেন তার ওপর এত আস্থা। নিজে ছিলেন কালকের টাইগারদের সেরা পারফরমার। ৪ উইকেট নেওয়া সাকিব আল হাসান জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করে কাল বলেন, এ মুহূর্তে জুবায়ের বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা বোলার এবং ভবিষ্যৎ। একমাত্র তারই সামর্থ্য রয়েছে ৩০০-৪০০ উইকেট নেওয়ার।
গেল অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক। তার দলভুক্তি তখন বিস্মিত করেছিল অনেককে। কিন্তু টার্ন, ফ্লাইট, লুপ, গুগলিতে একের পর এক জিম্বাবুয়ান বোলারদের যখন নাভিশ্বাস তুলছিলেন, তখন তার অন্তর্ভুক্তি অনেকেই মেনে নিয়েছিলেন। বলেছেনও, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পতাকা বইবে জুবায়ের। কিন্তু কোচের সঙ্গে নির্বাচক প্যানেলের মনোমালিন্যে খেলা হয়নি বিশ্বকাপ। খেলা হয়নি ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজও। শুধু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেন, ঘরোয়া ক্রিকেটেও নামা হয়নি তার মাঠে। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি খেলেছেন আবাহনী ক্লাব এবং বিসিএলে পূর্বাঞ্চলে। দুই দলের কোচ ছিলেন একজনই। তার বিরাগভাজনে তার নামা হয়নি মাঠে। অনিয়মিত খেলতে খেলতে আত্মবিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলতে বসেছিলেন জুবায়ের। কাল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব অকপটে স্বীকার করে বললেন, 'জুবায়েরকে ভালো করতে দিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিসিএল, ঘরোয়া ক্রিকেটে যদি নিয়মিত খেলতে না পারেন, তাহলে কোথা থেকে আত্মবিশ্বাস পাবেন, কোথা থেকে ভালো বোলিং করার রসদ পাবেন?'
ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার সুযোগ করে দিলেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পতাকা বহন করবেন এই তরুণ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন-চারশ উইকেট নিতে পারেন জুবায়ের; বলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, 'আমার মতে এ মুহূর্তে বাংলাদেশে তার চেয়ে ভালো কোনো স্পিনার নেই। সে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। তাকে নিয়মিত খেলানো হলে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ৩০০-৪০০ উইকেট নিতে পারেন।'
অবাক হলেও সত্যি, কাল দেশের মাটিতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম উইকেট নেওয়া সাকিব এমনই বললেন। যা শুনে চমকে যেতেই হয়েছে। বোল্ড হয়ে যেমন চমকে গিয়েছিলেন বিরাট কোহলি।