টেস্টের ফল কি হবে, চতুর্থদিন শেষে এখন বলাই যায়! বড় কোনো অঘটন না ঘটলে বাংলাদেশ-ভারত টেস্টটির পাশে নিশ্চিত লেখা থাকবে ড্র। এই ড্র টেস্টের নায়ক বৃষ্টি। যদিও পরিসংখ্যানে সেটার উল্লেখ থাকবে না। তাতে ব্যক্তিগত অর্জনকে কিন্তু বেঁধে রাখতে পারেনি। বৃষ্টি বাঁধাকে টপকে সেঞ্চুরি করেছেন শিখর ধাওয়ান, মুরলি বিজয়। তবে সবাইকে ছাড়িয়ে তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে আগ্রাসী ওপেনার এখন শুধু ওয়ানডে নয়, টেস্ট ক্রিকেটেও সবার উপরে। সবাইকে ছাড়িয়ে বাঁ হাতি ওপেনার টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। কাল ব্যক্তিগত ১৯ রানে সাজঘরে ফেরার পথে পেছনে ফেলেন সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে। ৪০ টেস্টে তামিমের রান ৩০৩৯ এবং ৫০ টেস্টে হাবিবুলের ৩০২৬। রেকর্ড হাতছাড়ায় মনোকষ্টে না ভুগে সাবেক অধিনায়ক বরং আশাবাদী প্রথম টাইগার ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রান করবেন তামিম! বাশারের মতো স্বপ্নচারী বাঁ হাতি ওপেনারও।
২০০৭ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম যখন ডাক পান তামিম, তখন বিস্ময়ে চোখ ললাটে উঠেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। ১৮ বছরের এক তরুণের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়া কতটা সম্ভব? জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডেতে প্রমাণ করতে পারেননি অন্তর্ভুক্তির যৌক্তিকতা। ৫ রানে ফিরেছিলেন সাজঘরে। তারপরও তার উপর আস্থা রেখেছিলেন নির্বাচক প্যানেল। তাই পরের বছর নিউজিল্যান্ড সফরে টেস্ট অভিষেক হয় এবং হ্যামিল্টনে অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসের স্কোর ছিল ৫৩ ও ৮৪ রানের। এরপর আর বন্ধ হয়নি পথ চলা। এখন তামিম বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম বিজ্ঞাপন। আট বছর আগের সেই তরুণ এখন অনেক পরিণত। যে কোনো পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হয়ে ম্যাচের চিত্র পাল্টে দিতে পারেন। ২৬ বছরের যুবক তামিম সাত বছর আগে শুরু করে ফতুল্লায় খেললেন ৪০ নম্বর টেস্ট। টেস্টের ফল যাই লেখা থাকুক, ব্যক্তিগত একটি মাইলফলক গড়েছেন তিনি। কাল চতুর্থদিন ঈশান্থ শর্মাকে ফ্লিকে ২ রান নিয়েই টপকে যান বাশারকে। বাশারকে টপকে নতুন রেকর্ড গড়ে উচ্ছ্বসিত তামিমের চোখ এখন দিগন্ত ছাড়িয়ে, 'বাশার ভাইকে টপকে বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে ভালোই লাগছে। একটি বড় ইনিংস খেলে সেটা করতে পারলে আরও ভালো লাগত।' তামিম যখন রেকর্ডটি গড়েন, তখন মাঠে উপস্থিত গুটিকয়েক দর্শক বুঝতে পারেননি। কিংবা ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ডও জানায়নি রেকর্ডের কথা। কিন্তু বাশার ঠিকই সাজঘরে গিয়ে অভিনন্দন জানান, উৎসাহ দেন এবং বলেন তুমিই পারবে টেস্টে ১০ হাজার রান তুলতে। স্বপ্ন দেখেন তামিমও। কিন্তু বছরে ৪-৫ টেস্ট খেলে সেটা সম্ভব নয়, '৭-৮ বছরে ৪০ টেস্ট খেলে ৩ হাজার রান করেছি। পরের ৪০ টেস্টে ৫০ গড় থাকলেও ১০ হাজার রান সম্ভব নয়। এজন্য বছরে ৭-৮টি করে টেস্ট খেলতে হবে।'
বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করতে চেয়েছিলেন বিশ্বকাপে। কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিলেনও। নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৯৫ রানের ইনিংস। বিশ্বকাপে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করতে না পারার আক্ষেপ ঘুঁচান পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে টানা দুই সেঞ্চুরি করে। ওয়ানডের ফর্ম ধরে রেখে টানা তিন সেঞ্চুরি করেন টেস্টে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনা ও চট্টগ্রামে খেলেন যথাক্রমে ১০৯ ও ১০৯ রানের ইনিংস। এরপর খুলনায় খেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৬ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এখন বাংলাদেশের টেস্ট বা ওয়ানডে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড তামিমের নামের পাশে। এসব রেকর্ড বাড়তি চাপে ফেলবে কি না উত্তরে বলেন, 'রেকর্ডগুলো করে ভালোই লাগছে। তবে আমি মনে করি আমার রেকর্ড যে কেউ ভেঙে দিতে পারেন।' ২০০০ সাল থেকে ভারতের বিপক্ষে নিয়মিত টেস্ট খেলছে বাংলাদেশ। ৮ টেস্টের সবগুলোই দেশের মাটিতে। অথচ ভারতের মাটিতে খেলার জন্য মুখিয়ে আছে টাইগাররা। অন্যদের মতো ভারতের মাটিতে খেলার স্বপ্ন দেখেন তামিমও, 'শুধু আমি নই, সব ক্রিকেটারই চায় ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে। এটা অবশ্য আমাদের হাতে নেই। বিষয়টি বিসিসিআই ও আইসিসির হাতে। তারা চাইলেই হবে।'
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস : ১০৩.৩ ওভারে ৪৬২/৬ ডিক্লে. (বিজয় ১৫০, ধাওয়ান ১৭৩, রাহানে ৯৮, সাকিব ৪/১০৫, জুবায়ের ২/১১৩)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩০.১ ওভারে ১১১/৩ (ইমরুল ৫৯*, মুমিনুল ৩০, তামিম ১৯, অশ্বিন ২/৩০)।