বেঁচেই গেল বাংলাদেশ! আরও একটি ইনিংস হারের লজ্জা থেকে বেঁচে গেলেন মুশফিকুর রহিমরা। অথচ এমন আশঙ্কার জন্ম হওয়ার কোনো কারণই ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী টেস্টের ১৫ সেশনে খেলা হয় ৪৫০ ওভার। নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে পাঁচ দিন খেলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাঠে বল গড়িয়েছে মাত্র ১৮৪.২ ওভার! তাতেই ম্যাচ হারের বৃত্তে প্রায় বাঁধা পড়েছিল বাংলাদেশ। কেন? সহজ-সরল উত্তর, তথাকথিত তারকা ব্যাটসমানরাই এই আশঙ্কার লাইনে টেনে তুলেছিলেন দলকে। ভারতের ৪৬২ রানের বিপরীতে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েশ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক সৌরভরা যে কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিং করেছেন, গতকাল শেষ দিনে ১৭ উইকেট হারালেও অবাক হওয়ার কিছুই ছিল না। তবে তেমন কিছু হয়নি। হারেনি বাংলাদেশ। বৃষ্টির কল্যাণে কোনোরকমে মান বাঁচিয়ে ড্র করেছে। অবশ্য এতে বাংলাদেশের রেকর্ডস বুক সমৃদ্ধ হলো একটু। ৯১ টেস্টে ১৩ নম্বর ড্রটি লিখে নিল নামের পাশে, যা ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয়। ড্র ম্যাচে তামিম ইকবালের সুখকর মাইলফলক থাকলেও ক্রিকেটারদের ভাবলেশহীন ব্যাটিং, টেম্পারমেন্ট ও কমিটমেন্ট নিয়ে জন্ম নিয়েছে প্রশ্নের।
প্রথম দিন থেকেই ফতুল্লায় পিছু নেয় বৃষ্টি। ফতুল্লা টেস্টের প্রকৃত নায়ক বৃষ্টি। বৃষ্টিবাধায় প্রথম তিন দিনে যেখানে শেষ হয় ভারতের ব্যাটিং, সেখানে ৮০.৫ ওভারে দুইবার ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬৫.৫ ওভারে ২৫৬। ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষ হতে যখন তিন দিন লেগেছে, তখন ম্যাচের ফল নিয়ে আগাম ভবিষ্যৎ করাই যায়! করেছেনও অনেকে। তারপরও দিনের শেষ সেশনের ১৬ ওভার আগে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি প্রস্তাব দিলে ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ে মুশফিকরা। তখন ফলোঅনে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর ১৫ ওভারে বিনা উইকেটে ২৩। এ নিয়ে কোহলির ওপর ক্ষুব্ধ হতেই পারে সতীর্থরা। কেননা ১৬ ওভার খেলা হলে বাংলাদেশ বিপর্যয়ও পড়তে পারতো। তামিম অপরাজিত ১৬ ও ইমরুল ৭ রানে অপরাজিত থাকে। অথচ প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং স্বর্গ উইকেটে যা ব্যাটিং করেছেন মুশফিকরা তাতে লজ্জা পাওয়াই উচিত। তারপরও ভদ্রতার খোলশ পরে কোহলি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের প্রতিভাবান বললে, অনেকটাই বেঁচে যান মুশফিকরা!
তিন দিন ব্যাটিং করার পর ভারতীয় ইনিংসে বাকি ছিল আরও ৪ উইকেট। কিন্তু ভারত চতুর্থ দিনে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশকে। দলীয় ২৭ রানে অযথাই রবীচন্দন অশ্বিনকে স্টেপ আউট করে খেলতে যেয়ে আউট হন তামিম। সাজঘরে ফেরার আগে অবশ্য হাবিবুল বাশারকে টপকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন তামিম। এটাই টেস্টে বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি। তামিমের বিদায়ের পর মুমিনুলকে নিয়ে জুটি বাধেন ইমরুল। দুজনে যোগও করেন ৮১ রান। প্রতিপক্ষের বোলারদের সাবলীল খেলতে থাকা মুমিনুলের সামনে তখন এবি ডি ভিলিয়ার্সের পাশে নাম লেখানোর হাতছানি। টানা ১২ টেস্টে হাফ সেঞ্চুরির বিরল রেকর্ড গড়ে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস, বীরেন্দার শেবাগ ও গৌতম গম্ভীরকে টপকে যাওয়া সময়ের ব্যাপার, তখনই ব্যক্তিগত ৩০ রানে হঠাৎ উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে শটস খেলেন হরভজনকে। কিন্তু সীমানার ওপারে আছড়ে পড়ার আগেই যাদবের তালুবন্দি হন। তাতে থেমে যায় রেকর্ড বুকে নাম লেখানো। মুমিনুলের বিদায়ের পর ফরোয়ার্ড শট লেগে আউট হন অধিনায়ক মুশফিক। ৩ উইকেটে ১১১ রান নিয়ে চতুর্থ দিন পার করে বাংলাদেশ। সকাল থেকেই বৃষ্টি। তাই নির্ধারিত সময়ের প্রায় সোয়া তিন ঘণ্টা পর মাঠে গড়ায় খেলা। তারপরও স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা পুরো দিন খেলতে পারেননি। আগের দিনের সঙ্গে মাত্র ৩৫.৪ ওভার যোগ করে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়েন মুশফিকরা। ফলোঅনে পড়ে ব্যাটসম্যানদের খামখেয়ালিপনার জন্য। এর শুরু সাকিব দিয়ে। আগের বলে পরাস্ত, পরের বলে অশ্বিনকে কাট খেলতে যেয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি। দলীয় স্কোর তখন ১২১। সাকিবের বিদায়ের পর ইমরুল জুটি বাধেন সৌম্যকে নিয়ে। দুজনে যোগ করেন ৫১ রান। আগের দিনে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকা ইমরুল বেশ ভালো খেলছিলেন। ধীরে ধীরে যখন সেঞ্চুরির পথে এগোচ্ছিলেন ইমরুল, তখন হঠাৎই হরভজনের ওপর চড়াও হয়ে স্ট্যাম্পিং। তার স্কোর ৭২। ইমরুল সাজঘরে ফেরার ৪ রান পরে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলকে অযথা খেলতে গিয়ে প্লেড অন হন সৌম্য। স্কোর ৩৭। অভিষেকের পর থেকে ৩০-৪০ রানের মধ্যে ঘোরাফেরা করছেন সৌম্য। তবে দ্যুতি ছড়িয়েছেন অভিষিক্ত লিটন দাস। দুর্দান্ত কিছু চোখ ধাঁধানো শটসে ৪৫ বলে ৪৪ রান করে অশ্বিনের লাফিয়ে ওঠা বল খেলতে ব্যর্থ হয়ে ক্যাচ দেন ব্যাকওয়ার্ড স্লিপে দাঁড়ানো রোহিত শর্মাকে। একই জায়গায় ক্যাচ দেন শুভাগত হোমও। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এমন ব্যাটিং দেখে পুনরায় সন্দেহ জেগে উঠেছে, তাদের টেস্ট খেলার টেম্পারমেন্ট ও টেকনিক নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত প্রথম ইনিংস : ১০৩.৩ ওভারে ৪৬২/৬ ডিক্লে. (বিজয় ১৫০, ধাওয়ান ১৭৩, রাহানে ৯৮, সাকিব ৪/১০৫, জুবায়ের ২/১১৩)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৬৫.৫ ওভারে ২৫৬/১০ (ইমরুল ৭২, লিটন ৪৪, সৌম্য ৩৭, মুমিনুল ৩০, তামিম ১৯, অশ্বিন ৫/৮৭, হরভজন ৩/৬৪)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ১৫ ওভারে ২৩/০ (তামিম ১৬*, ইমরুল ৭*)।
ফলাফল : ড্র।
ম্যাচ সেরা : ধাওয়ান (ভারত)।