এক ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ড্র হয়েছে। এতে যতটা না মুশফিকদের কৃতিত্ব, তার চেয়ে বেশি অবদান বৃষ্টির। পাঁচ দিনের ম্যাচে তিন দিনই তো বৃষ্টি ছিল। তবে বাকি দুই দিনেই টাইগারদের ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশার চিত্র ফুটে উঠেছিল। ফলোঅনে পড়তে হয়েছিল বাংলাদেশকে। তাই টেস্টে ড্র হলেও শঙ্কা জেগেছে ভক্তদের মনে, বাংলাদেশ ওয়ানডেতে পারবে তো?
বাংলাদেশের টেস্ট দল ও ওয়ানডে দলের মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল! ওয়ানডেতে টাইগাররা এখন যে কোনো দলের জন্য আতঙ্ক। তা বিশ্বকাপ থেকেই মাশরাফিরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন! আগের সিরিজেই তো পাকিস্তানকে তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। তখনো তো টেস্ট সিরিজে হেরেছিল বাংলাদেশ।
তাই ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচের ব্যাটিং দেখে ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী চলে না! শুধু খেলার ধরনে নয়, দুই ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলও এখন সম্পূর্ণ আলাদা। বিশেষ করে বোলিং আক্রমণে। পেস আক্রমণে অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে রয়েছেন রুবেল হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। এই বোলারের একজনও টেস্টে ছিলেন না। সেই সঙ্গে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একমাত্র টি-২০ ম্যাচে অভিষেকেই চমক দেখানোর কারণেই নির্বাচকরা তাকে এবার ওয়ানডে দলে রেখেছেন।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আত্মবিশ্বাসের জায়গা হচ্ছে অধিনায়ক মাশরাফি। কীভাবে পুরো দলকে উজ্জীবিত করে রাখা যায় তা ম্যাশের চেয়ে আর কে ভালো জানে? তাই বলে মুশফিকের নেতৃত্বে টেস্ট দল নিয়েও হতাশার কিছু নেই। এই দলটাই কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে খুলনায় লড়াই করেছিল সমান তালে। তাছাড়া টেস্ট খেলা অনেকটা অভ্যাসের ব্যাপারও। বাংলাদেশ বছরে কয়টা টেস্টই বা খেলে! সে কারণেই যে ব্যাটসম্যানরা ওয়ানডেতে খুবই ধারাবাহিক, তারা টেস্টে গিয়ে মাঝেমধ্যেই খেই হারিয়ে ফেলছেন। টেস্টের ম্যাজাজের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেননি।
টেস্টের বাজে ব্যাটিংয়ের প্রভাবটা ওয়ানডে পড়ার কথা নয়। কেননা টেস্টের পারফরম্যান্স যেমনই হোক না কেন ওয়ানডেতে টাইগাররা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। তবে প্রতিপক্ষ ভারত বলেই কিছুটা দুশ্চিন্তা থেকে যাচ্ছে। কেননা প্রতিবেশি দেশ হওয়ায় কন্ডিশন থেকে সুবিধা আদায় করে নেওয়া কঠিন। তবে টাইগারদের উজ্জীবিত হওয়ার বড় জায়গা হচ্ছে বিশ্বকাপ। মাশরাফিরা প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল। সেটাও কিনা অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে। তাই খেলা কোথায় হচ্ছে তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে! ভেন্যুর চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে এখানে পারফরম্যান্স। এখন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে গভীরতা অনেক বেশি। দলে মোট আটজন ব্যাটসম্যান। ফিল্ডিংও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভালো। বোলিং তো বিশ্বমানের।
এখন টাইগাররা আর শুধুমাত্র স্পিনের ওপর নির্ভরশীল নয়। তিন তিনজন বিশ্বমানের পেসার দলে রয়েছেন। মাশরাফি সঠিক লাইন লেন্থের সঙ্গে রুবেল ও তাসকিনের গতি (৪০ কিমির ওপরে)। আর স্পিনে পরীক্ষিত আরাফাত সানির সঙ্গে সাকিব আল হাসান। তাছাড়া বাংলাদেশ দলে এখন পার্টটাইম বোলারও রয়েছে অনেক। দলের প্রয়োজনে মিডিয়াম পেস করে থাকে সৌম্য সরকার। সেই সঙ্গে নাসির হোসেনের কার্যকরী স্পিন। তবে এই সিরিজে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে মিস করবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের টানা দুই সেঞ্চুরি করা রিয়াদ ইনজুরির জন্য ভারতের বিরুদ্ধে খেলতে পারছেন না। কিন্তু সুখের খবর হচ্ছে, রিয়াদের অভাবটা পূরণ করে দিতে পারেন তরুণ তারকা লিটন কুমার দাস। প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন।
ভারতের বিরুদ্ধে বৃষ্টিবিঘ্নিত টেস্টে সুযোগ পেয়ে প্রতিভার ঝলকও দেখিয়েছেন। সাত নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমেও খেলেছেন দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। ৪৫ বলে খেলা তার ৪৪ রানের ইনিংসটি ছিল স্ট্রোক ঝলমলে। আট বাউন্ডারির সঙ্গে একটি বিশাল ছক্কা। বাংলাদেশের ইনিংসে একমাত্র ছক্কাটি এসেছিল তার ব্যাট থেকেই। লিটন যে কেমন স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান এক ঘণ্টার ব্যাটিংয়েই তিনি তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন ওয়ানডেতে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান। অবশ্য শুধু লিটন নয়, গোটা দলই ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ানডে খেলার জন্য মুখিয়ে আছে। অপেক্ষার প্রহর গুণছেন দর্শকরাও। বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে বাজে আম্পায়ারিংয়ের কারণে হেরে যাওয়ার কষ্টটা যে এখনো কাঁটা হয়ে বিঁধছে! তাই ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট নিয়ে দর্শকের উত্তেজনা না থাকলেও ওয়ানডে সিরিজকে 'পাখির চোখ' করে রেখেছেন ক্রিকেটামোদীরা। বিশ্বকাপে বিতর্কিত সেই পরাজয়ের জবাবটা এবার ঘরের মাঠেই দিক টাইগাররা -এমন প্রত্যাশা নিয়ে প্রতীক্ষায় দেশবাসী।