আর মাত্র কয়েক মিনিট। এরপরই গত কয়েক মাসের ব্যর্থতা ভুলে উৎসবে মেতে উঠার উপলক্ষ পাবে বাংলাদেশের ফুটবলভক্তরা। প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে ডি ক্রুইফের। আর বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নিজেদের লক্ষ্য পূরণে আরও একটা ধাপ এগিয়ে যাবে। কিন্তু একি! নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ঠিক দুই মিনিট আগে তাজিক ফুটবলার ফাতহুলভের ফ্রি কিক যে জালে জড়িয়ে গেল! মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেল স্বপ্ন। ভেঙে গেল ডি ক্রুইফের প্রতিশ্রুতিও। থেমে গেল ভক্তদের উৎসব। ম্যাচের ৫০ মিনিটে মামুনুলের ফ্রি কিক থেকে পায়ের আলতো ছোঁয়ায় গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দিয়েছিলেন জাহিদ হাসান এমিলি। এরপর ম্যাচের ৬৭ মিনিটে যখন তাজিকরা ১০ জনের দলে পরিণত হলো ভক্তরা নিশ্চিত জয় নিয়েই বাড়ি ফেরার স্বপ্নে বিভোর ছিল। সে স্বপ্নের গুঁড়ে বালি ঢেলে তাজিকরা শেষ মুহূর্তের গোলে ১-১ ব্যবধানের ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়ল।
ডি ক্রুইফ বলেছিলেন, আমাদের কেবল লক্ষ্য রাখতে হবে ফ্রি কিক থেকে যেন গোল না হয়। নিজের ডিফেন্স লাইনের উপর পরম আস্থা ছিল বলেই এমন কথা বলেছিলেন তিনি। রায়হানরা ঠিকই কোচের বক্তব্য সঠিক প্রমাণ করেছেন। বাংলাদেশের ডিফেন্স লাইন তাজিকদের অসংখ্য আক্রমণ ফিরিয়ে দিয়েছে। দারুণ সব 'সেভ' করেছেন গোলরক্ষক রাসেল। কিন্তু ফ্রি কিক! কাল হলো ওই ফ্রি কিকই। গত চারটা ম্যাচে বাংলাদেশ যে ফ্রি কিকের শিকার। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, আফগানিস্তান আর কিরগিজস্তান। চারটা দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশের সর্বনাশ করেছে ফ্রি কিক। কিন্তু গতকাল তাজিকদের বেশ কয়েকটা ফ্রি কিক ছিল লোকদেখানো। বাংলাদেশ হয়তো বেঁচেই যেত। অধিনায়ক মামুনুলের ভুলেই তো ৮৮ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ান রেফারি দ্বিতীয়বার একই জায়গায় ফ্রি কিকের নির্দেশ দেন। হলুদ কার্ড দেখতে হলো মামুনুলকে। ফাতহুলভের প্রথম ফ্রি কিক শটের সময় বেরিকেড লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন মামুনুল। এর ফল ভুগতে হলো তাকে। তারচেয়েও বড় কথা নিশ্চিত একটা জয় 'হাতে ফস্কে' বেরিয়ে গেল বাংলাদেশের।
তাজিকিস্তানের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র। স্কোর লাইন হিসেবে মোটেও এটাকে খারাপ বলা যাবে না। র্যাঙ্কিংয়ের ১৩৯ নম্বর দলের বিপক্ষে ১৬৬ নম্বর (বাংলাদেশ) দলের খেলা। মামুনুলদের জন্য ড্রই হয়তো দারুণ এক ফলাফল হিসেবে আখ্যা দেওয়া যেত। কিন্তু ওরকম একটা ম্যাচের পর! যে ম্যাচে বাংলাদেশের পায়েই ছিল বেশিরভাগ সময় বল। জুয়েল রানা, হেমন্ত বিশ্বাস, এমিলি আর মামুনুলদের দারুণসব আক্রমণে ভক্তরা পুরো ম্যাচেই উৎসবে মেতেছিল। এমিলির দারুণ হেডগুলো গোলেও তো পরিণত হতে পারত। হেমন্ত আর জুয়েলের ড্রিবলিং ছিল চোখ ধাঁধানো। দীর্ঘদিন পর একটা অসাধারণ ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। দর্শকদের নিনাদভাঙা চিৎকার বাইরের দর্শকদেরও চুম্বকের মতো টেনে এনেছে গ্যালারিতে। যে মাঠে শূন্য পড়ে থাকে গ্যালারি সেখানেই গতকাল ছিল হাজার দশেক দর্শক। যারা বাংলাদেশের ফুটবল দেখে মুগ্ধ হয়েছে। এমন একটা ম্যাচে ১-১ গোলের ড্র মেনে নেওয়া যে সত্যিই কঠিন। এ কারণেই তাজিকদের সঙ্গে ফলাফলে র্যাঙ্কিংয়ে কয়েক ধাপ এগুনোর রসদ পেলেও ভক্তদের সন্তুষ্টি পায়নি বাংলাদেশের ফুটবলাররা।
বাংলাদেশ দলও কি আর সন্তুষ্ট! হাত ফস্কে পড়ে যাওয়া জয়টাই তো কাম্য ছিল মামুনুলদের। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে দলের সহকারী কোচ সাইফুল বারী টিটোর কণ্ঠেও হাহাকারের সুর। 'আমরা তো শতভাগ উজাড় করেই খেলেছি। ছেলেরা মাঠে প্রতিটা পরিকল্পনাই কাজে লাগানোর জন্য ছিল সচেষ্ট। সবাই নিজেদের পরিপূর্ণ মেলে ধরেছে ম্যাচে। তারপরও জয় হাতছাড়া হলো। আমরা সম্ভবত শতভাগের পর 'পারফ্যাক্ট' হওয়ার জন্য যেটুকু দেওয়া প্রয়োজন সেটুকুই দিতে পারিনি।' সাইফুল বারী টিটোর কণ্ঠের এ হাহাকার পুরো বাংলাদেশেরই।
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অনেকটা পিছনে পড়ে গেল বাংলাদেশ। কিজগিজস্তানের কাছে ৩-১ ব্যবধানের পরাজয় আর তাজিকিস্তানের সঙ্গে ড্রয়ের পর জর্ডান আর অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হলে ব্যাকফুটেই থাকবে বাংলাদেশ। হোম গ্রাউন্ডের সুবিধা নিয়েও কোনো ইতিবাচক ফলাফল করতে ব্যর্থ হলেন মামুনুলরা। এই দলটাই ৩ সেপ্টেম্বর পার্থে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে। ৮ সেপ্টেম্বর খেলবে জর্ডানের সঙ্গে।