রোজার মধ্যেই মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজ। তারপরও টিকিটের জন্য হাহাকার চারিদিকে। কালোবাজারিরা টিকিটের দাম হাঁকাচ্ছেন কয়েকগুণ। টিকিটের চাহিদা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সিরিজটি নিয়ে কত উত্তেজনা! কতটা অধীর অপেক্ষা ক্রিকেটপ্রেমীদের। বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সিরিজটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেও আলাদা করে ভাবতে চাচ্ছেন না। অন্য দশটি সিরিজের মতোই ভাবছেন। টাইগার অধিনায়ক না ভাবলেও সিরিজটি নিয়ে টানটান উত্তেজনা গোটা দেশে। কারণ, বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেই কোয়ার্টার ফাইনাল!
মাশরাফিরা দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছেন বিশ্বকাপে। খেলেছেন কোয়ার্টার ফাইনাল। কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ১০৯ রানে হেরেছিল ওই ম্যাচে। কিন্তু ১৬ কোটি বাঙালি মনে করেন, ওই ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল দুই আম্পায়ার। তাই সিরিজটি নিয়ে এত উত্তেজনা! এই সিরিজ জিতলে অবশ্য বাংলাদেশের বেশ কিছু লাভ হবে। প্রথমত ভারতের বিপক্ষে প্রথম জিতবে সিরিজ। র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হবে এবং নিশ্চিত হবে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। এত সব সমীকরণের সিরিজকে তাই আলাদা চোখে দেখাই স্বাভাবিক। কিন্তু টাইগার অধিনায়ক সে রকম ভাবছেন না। শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও ভারতকে নিয়ে বাড়তি কোনো চাপ নেই টাইগার অধিনায়কের। অন্য দশটি সিরিজের মতোই ভাবছেন মাশরাফি, 'ভারতের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। যদিও এই ভালো খেলার চ্যালেঞ্জ সব দলের বিপক্ষেই। তাই আমি সিরিজটিকে অন্য সিরিজের মতোই গুরুত্ব দিচ্ছি। আলাদা করে ভাবছি না। তবে ভারতের বিপক্ষে সবারই নজর থাকে একটু অন্যরকম। সবাই ভালো খেলতে চান।' বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছিল আকাশসম চাপ নিয়ে। অনেকেই ভেবেছিলেন, দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। কিন্তু সবার চাওয়া-পাওয়াকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর ঘরের মাটিতে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতে হোয়াইটওয়াশ করে। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে আজ নামছে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে। পরিসংখ্যানে পেছনে। ২৯ মাচের ২৫টিতে হার। তারপরও ঘরের মাঠে খেলা। তাই সবার স্বপ্ন এখন দিগন্ত ছাড়িয়ে। কিন্তু টাইগার অধিনায়ক তেমনটি না ভেবে ভারতকে ফেবারিটের আসনে বসিয়ে দেন, 'গত এক বছর ধরেই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। তারপরও ভারতই সিরিজে ফেবারিট। সঙ্গে এটাও সত্যি, আমরা মাঠে নামার পর ভাবি না কে ফেবারিট। সত্যি বলতে কী, ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের পর থেকেই আমরা ভাবতে শুরু করেছি, বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য রাখি। বড় দলগুলো হয়তো ফেবারিট। কিন্তু এটাও ঠিক, এখন আমরা ভাবি না কাউকে হারাতে পারব না।' অস্ট্রেলিয়া বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। তারপরও ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্য মুখিয়ে থাকে দলগুলো। কেন? সত্তর-আশির দশকে এমনটা দেখা যেত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তখন ভিভ রিচার্ডস, মাইকেল হোল্ডিং, ক্লাইভ লয়েডদের বিপক্ষে খেলার জন্য অপেক্ষায় থাকতেন ক্রিকেটাররা। এখন সেটা ভারতের বিপক্ষে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও মুখিয়ে থাকেন ভারতের বিপক্ষে খেলতে। কেন? এর ব্যাখ্যায় টাইগার অধিনায়ক বলেন, 'সময়টা আসলে এখন এমনই। বিশ্বের সবাই ভারতের ম্যাচ দেখে। তাই ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ে আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয়, বড় দলগুলোর বিপক্ষে পারফর্ম করা একটু কঠিনই। ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া আসবে। এ দলগুলোর বিপক্ষে ভালো খেললে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে বহুগুণ।'
বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশের পেসারত্রয়। তবে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে পেসারের ঘাটতি চোখে পড়লেও তাদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী টাইগার অধিনায়ক, 'বিশ্বকাপে আমাদের পেসাররা দারুণ বল করেছেন। রুবেল, তাসকিন খুব ভালো করেছেন। তরুণ মুস্তাফিজও দারুণ। আমি মনে করি আমাদের পেস অ্যাটাক যে কোনো দলকে ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।' পেসারদের উপর আত্মবিশ্বাস রাখলেও দলের মূল শক্তি ব্যাটিং বললেন টাইগার অধিনায়ক, ' আমাদের মূল শক্তি ব্যাটিং। বোলিংটা খারাপ নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা ভালো করেছেন।'
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হাতছানি দেওয়ার সিরিজ খেলতে নামলেও টাইগার অধিনায়ক চাচ্ছেন চাপমুক্ত ক্রিকেট খেলতে। হয়তো এতেই সাফল্য আসবে।