ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে এর চেয়ে বড় দুঃখের কথা, কষ্টের কথা লেখা নেই! ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে যা লেখা হয়েছে। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ, তার ওপর নেইমারের নেতৃত্বে দুর্দান্ত এক দল, স্বপ্ন দেখতেই পারেন ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা। স্বপ্ন ঠিকঠাক মতোই এগিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত। কলম্বিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা নিলে স্বপ্নটা আরও প্রসারিত হয়। কিন্তু সেমিতে জার্মানির কাছে এতটাই নাকানি-চুবানি খায় এবং বিধ্বস্ত হয় যে, বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাসে এমন দুঃস্বপ্নের সেমিফাইনাল কখনো দেখা যায়নি। অথচ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের পাড়া-মহল্লার দল বানিয়ে দুঃস্বপ্নের রেজাল্ট লিখল জার্মানি। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের কাছে আবারও পর্যুদস্ত। দুই ম্যাচে ১০ গোলের ধাক্কায় দর্পচূর্ণ ব্রাজিলের। বিশ্বকাপের সেই কালো অধ্যায় ভুলে ব্রাজিল আবার চাইছে লাইমলাইটে আসতে। ভুলে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় ব্রাজিল আজ বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো আসর কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে প্যারাগুয়ের। সেমিতে ওঠার লড়াইয়ে সেলেকাওরা নামছে দল সেরা ফুটবলার নেইমারকে ছাড়াই। নেইমার খেলছেন না লালকার্ড দেখে বহিষ্কার হয়ে।
বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে কোমরে আঘাত পেয়েছিলেন নেইমার। নেইমারকে হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়েছিল গোটা ব্রাজিল। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল ব্রাজিলিয়ানরা। নেইমারকে ছাড়া সেমিফাইনাল খেলেছিল ব্রাজিল। ম্যাচের ফল সবার জানা। আজ নেইমারকে ছাড়া ফের মাঠে নামছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কলম্বিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লালকার্ড দেখেন নেইমার। ফলে কোপা আমেরিকায় নিষিদ্ধ হয়ে যান বার্সেলোনার এই স্ট্রাইকার। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে হয়তো নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফের আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরবেন নেইমার।
বিশ্বকাপের ওই লজ্জাজনক পারফরম্যান্সের পর কোচ বদল হয়ে যায় ব্রাজিল দলের। ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জেতানো কোচ লুই ফিলিপ স্কলারিকে সরিয়ে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় কার্লোস দুঙ্গাকে। ১৯৯৪ সালের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক দুঙ্গা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঘুরে দাঁড়াতে লড়ছে নান্দনিক ফুটবলের দেশটি। বিশ্বকাপের পর নানা আসরে গত ১৩ ম্যাচের ১২টিতেই জিতেছে ব্রাজিল। কোপা আমেরিকা খেলতে নামে টানা ১০ জয় নিয়ে। কিন্তু টানা জয়ের সেই আত্মবিশ্বাসটা ঠিক দেখা যায়নি আসরে। কলম্বিয়ার কাছে হেরে যায় এবং পেরু ও ভেনেজুয়েলাকে হারিয়ে জায়গা নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে। সেরা আটে জায়গা নিলেও সেই আত্মবিশ্বাসটা ঠিক দেখা যায়নি দুঙ্গার শিষ্যদের।
তারপরও অতীত ইতিহাস ও পরিসংখ্যানে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আজ পরিষ্কার ফেবারিট। দুই দলের ৭৩ বার মুখোমুখিতে ৪৭ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই আজ নামছে ব্রাজিল। বিপরীতে প্যারাগুয়ের জয় ১২। সর্বশেষ মুখোমুখিতে জয় অবশ্য প্যারাগুয়ের। ২০১১ সালের কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটি নির্ধারিত সময় গোলশূন্য ছিল এবং শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে জিতেছিল প্যারাগুয়ে। ওই ম্যাচের ফল আজ আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে দলটিকে। দলটি কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা নেয় আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের সঙ্গে ড্র এবং জ্যামাইকাকে হারিয়ে।
সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা না, কলম্বিয়া- সেটা জেনেই ময়দানি লড়াইয়ে নামবে ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে। এই লেখা যখন পাঠকের কাছে পৌঁছাবে, তখন সবাই জেনে যাবেন তৃতীয় দল হিসেবে সেমিতে খেলবে কোন দল। অবশ্য ব্রাজিলের তরুণ উইলিয়াম চাইছেন, আর্জেন্টিনাকে সেমিফাইনালে। শুধু উইলিয়ামই নন, ফুটবলপ্রেমীরাও চাইছেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সেমিফাইনাল।