১৬ অক্টোবর, ২০২১ ০০:৫৬

মরুর বুকে এক টুকরো সবুজ

মেজবাহ্ উল হক, মাস্কাট থেকে

মরুর বুকে এক টুকরো সবুজ

আল আমিরাত স্টেডিয়াম।

তাপমাত্রা চল্লিশের ওপরে! রোদে যেন গা ঝলসে যাচ্ছিল। পাশের মরুভূমি থেকে আসছিল অগ্নিতাপ। কিন্তু ওমানের আল আমিরাত স্টেডিয়ামের গেটে দাঁড়ালে শরীরের সব যন্ত্রণা মুহূর্তেই ভুলে যেতে বাধ্য। চোখের সামনে সাজানো-গোছানো ছবির মতো নয়নাভিরাম এক স্টেডিয়াম। এক পাশে আল আমিরাত পাহাড়। আরেক পাশে ওয়াদি হাতাত। দুই রকি পাহাড় যেন বৃত্তের মতো আবিষ্ট করে আছে বিশ্বকাপে অভিষেক হতে যাওয়া এ স্টেডিয়ামকে।

ওমানের পাহাড়গুলো বাংলাদেশের পাহাড়ের মতো সবুজে আচ্ছাদিত নয়। পাথুরে পর্বতে গাছ তো দূরের কথা আগাছাও চোখে পড়ে না। কখনো কখনো মনে হয় পাহাড় তো নয়, যেন কংক্রিটের স্তূপ। মরুভূমি থেকে তাপ শুষে নিয়ে কেবল তা বিকিরণ করছে! আর তপ্ত মরুর বুকে ‘আল আমিরাত স্টেডিয়াম’ যেন এক টুকরো সবুজ।

নয়নাভিরাম এ স্টেডিয়াম থেকেই আগামীকাল বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে অভিষেক হচ্ছে আল আমিরাত স্টেডিয়ামেরও। আয়োজক হিসেবে অভিষেক ওমানেরও। এর আগে ক্রিকেট বিশ্বকাপের মতো এত বড় আয়োজন কখনো করেনি প্রাচীন এ আবর দেশটি। ওমানের ক্রিকেট ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। এখানকার সাধারণ মানুষ ক্রিকেট খুব বোঝে বলেও মনে হয় না! এখানকার ক্রিকেট বলতে এই আল আমিরাত স্টেডিয়াম। এখানেই ওমান ক্রিকেট বোর্ডের কার্যালয়। ২০০৮ সালে তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ দেশটির সুলতানের মাথায় যেন ক্রিকেটের বিষয়টি পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নেয়। তারপর একটি স্টেডিয়াম বানানোর চিন্তা থেকেই ২০১২ সালে নির্মিত হয় ‘আল আমিরাত’! এখানে প্রথম টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯  সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। যে ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মুখোমুখি হয়েছিল কুয়েত। এবার সেই স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে। আগামীকাল এক দিনে দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ওমান মুখোমুখি হবে পাপুয়া নিউগিনির। এরপরই টাইগাররা খেলবেন স্কটিশদের বিরুদ্ধে। প্রথম রাউন্ডের গন্ডি পার হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের মতো দলের জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়। কেন না, টানা তিন টি-২০ সিরিজ জিতে ওমানে পা রেখেছেন টাইগাররা। সেই তিন প্রতিপক্ষের মধ্যে আছে শিরোপাপ্রত্যাশী দুই দল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। তবে দুটি সিরিজই মাহমুদুল্লাহ বাহিনী খেলেছে ঘরের মাঠে চেনা পরিবেশে। তাই মরুর বুকে কতটা ভালো করবে তা নিয়ে দুঃচিন্তা থাকছেই। টাইগারদের টেনশন বাড়িয়ে দিয়েছে দুই প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে হার। যদিও ওয়ার্মআপ ম্যাচের ফল কোনো ম্যাটার করে না। তবে টাইগাররা আত্মবিশ্বাসে যে বড় রকমের চোট পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য দুটি ম্যাচই হেরেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ওমানে বরং একটা সুখস্মৃতি আছে। এখানে এসেই ওমান একাদশের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় পেয়েছিলেন টাইগাররা। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা দুই শতাধিক রান করেছিলেন প্রথম ইনিংসে। সেই স্মৃতি এখন টাইগারদের ভরসা। মাসকাটের আল আমিরাতে প্রথম রাউন্ডের তিন ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড ছাড়াও পাপুয়া নিউগিনি ও স্বাগতিক ওমান। এ চার দলের মধ্যে দুই দল যাবে সুপার চুয়েলভে। ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে লাল-সুবজের বাদ পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই বাড়তি চাপ না নিয়ে টাইগাররা সুপার টুয়েলভের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রথম রাউন্ডকে বেছে নিতে পারে। অবশ্য এটা টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনার বিষয়! সে যাই হোক, এখানকার প্রবাসী বাঙালিরা কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে রোমাঞ্চিত। যদিও স্থানীয় ওমানিদের মধ্যে ততটা উচ্ছ্বাস চোখে পড়েনি। দিন কয়েক আগেই ঘূর্ণিঝড় শাহিনের তান্ডবের কারণে হয়তো বিশ্বকাপ নিয়ে আরব দেশটির বাড়াবাড়ি রকমের কোনো আয়োজনও নেই। তবে বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ভীষণ। কীভাবে জাঁকজমকপূর্ণ সেলিব্রেশন করা যায় তা নিয়ে ব্যস্ত প্রবাসীরা। তাদের একটাই চাওয়া, মাসকাটের তিন ম্যাচেই দাপটের সঙ্গেই জিতুক প্রিয় বাংলাদেশ। মরুর বুকে পত পত করে উড়ুক লাল-সবুজের নিশান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর