রঙিন টেলিভিশন আসার পর থেকেই বাচ্চাদের বিভিন্ন কার্টুন সিরিজ দেখার প্রবণতা বেড়েছে। খুব ছোট থেকেই অভিভাবকরা নিতান্ত খেলার ছলেই এই অভ্যাস বাচ্চাদের মনে গেঁথে দেন, হয়ত কোন কারণ ছাড়াই কিংবা বাচ্চার দুরান্তপনা একটু কমানোর জন্য। কিন্তু কিছু সময়ের দুরন্তপনা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সোনাটিকে ঘরকুনো এবং কুঁড়ে করে দিচ্ছেন আপনি নিজেই।
অ্যাডিকটিভ
ছোটবেলায় রংচঙে কার্টুন দেখতে বেশ ভালোই লাগে। ধীরে ধীরে সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়। এমন একটা সময় আসে যখন এই অভ্যাস নেশার আকার নেয়। পোকেমন গো, এর আদর্শ উদাহরণ যার উত্পত্তি কিন্তু সেই পোকেমন কার্টুন সিরিজ থেকেই। ছোটবেলা থেকেই অ্যাশ কিংবা মিষ্টি হওয়ার স্বপ্নই এখনকার টিনএজদের পর্যন্ত প্রভাবিত করছে।
হিংসাত্মক
টম-জেরিকে ধাওয়া করে আসছে এবং হঠাৎ জেরি টমকে লোহার ইস্ত্রি ছুঁড়ে মারল এবং টমের মুখটা ইস্ত্রির আকার নিল। এরকম বহু এপিসোড আপনিও আপনার বাচ্চার সঙ্গে বসে দেখেছেন এমনকি উপভোগও করেছেন ব্যাপারটা। আপাত দৃষ্টিতে হাসির হলেও ব্যাপারটা কিন্তু ভায়োলেন্স। কখনও ভেবে দেখেছেন কি যদি ঐ শিশুটি হঠাৎ ইস্ত্রি ছুঁড়ে মারে? ছোটবেলায় কোনটা রিয়েল তা আলাদা করার ক্ষমতা থাকে না, ফলে পালং শাক খেয়ে 'পপাই' হয়ে ওঠার চেষ্টা করে বহু বাচ্চা। আপনি ভেবে দেখুন পপাই সিরিজে ভায়োলেন্সই কিন্ত্ত সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। নিজের অজান্তেই ভুল শিক্ষা দিয়ে ফেলছেন না কি?
অসুখ-বিসুখ
নিয়মিত কার্টুন দেখার ফলে দৈহিক এবং মানসিক প্রচুর সমস্যা দেখা দেয়। যেমন সারাদিন টেলিভিশনের সামনে বসে থাকার ফলে প্রথম সমস্যা হয় ওবেসিটির। যা বর্তমানে ক্রমবর্ধমান রোগ। এর ফলে ডায়াবেটিস থেকে ডিপ্রেশন পর্যন্ত বহু সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে সারাদিন টিভি দেখলে কারডিও ভাস্কুলার ডিজিজ হতে পারে, যার ফলে আয়ু কমে যায়। এক জায়গায় বসে থেকে কুঁড়ে হয়ে যায় বাচ্চারা ফলে বাইরে গিয়ে খেলার মানসিকতাও আর থাকেনা।
পড়াশোনা
সারাদিন কার্টুন দেখার নেশায় অথবা নোবিতাকে নকল করতে গিয়ে হয়ত আপনার বাচ্চাটা হোমওয়ার্ক করতেই ভুলে গেল। সারাদিন টেলিভিশনের সামনে থাকার ফলে পড়াশোনার ক্ষেত্রেও কুপ্রভাব পড়ে।
রোল মডেল
ক্রিশ, ওগিদের কখন আপনার বাচ্চাটা রোল মডেল বানিয়ে ফেলেছে সেটা হয়ত আপনি জানতেও পারেননি। বড় হয়ে পোকেমন ট্রেনার হব এরকম ভাবনা অনেকের মনেই জাগে। যার সঙ্গে বাস্তবের কোন মিলই নেই। এই ব্যাপারটা বাচ্চাটার মনে একটা প্রভাব ফেলে।
তাহলে কি কার্টুন একদম বন্ধ?
মোটেই না। তবে সব কিছুই ব্যালেন্স করে করতে হয়। কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। প্রথমেই আপনার সন্তানের কার্টুন দেখাটা পরিমিত করুন। যেমন ধরুন দিনে এক ঘণ্টা দেখতে দিলেন। তারপর তাকে বোঝান যে কোনটা রিল এবং কোনটা রিয়েল। বাস্তবে ইস্ত্রি ছুঁড়ে মারলে কি হবে সেটার বোধ দিলেই দেখবেন সমস্যা অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে।
সূত্র: এই সময়
বিডি প্রতিদিন/১৩ আগস্ট ২০১৬/হিমেল-০৬