মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে নিজেই একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করছেন। তার লক্ষ্য—এমন এক ‘সুপার ইনটেলিজেন্স’ তৈরি করা, যা মানুষের মেধাকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাকারবার্গ মেটার চলমান এআই প্রকল্প নিয়ে সন্তুষ্ট নন। বিশেষ করে মেটার ‘ল্যামা ৪’ নামের সর্বশেষ ভাষাভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলের অগ্রগতি নিয়ে হতাশ। তাই তিনি নিজ উদ্যোগে ক্যালিফোর্নিয়ার লেক তাহো ও পালো অল্টোর নিজ বাসভবনে এআই বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন।
৫০ জন নিয়ে শক্তিশালী দল গঠন
জাকারবার্গ নতুন এই এআই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০ জন দক্ষ গবেষক ও প্রকৌশলী নিয়োগ দিতে চান। ইতোমধ্যে মেটার মেনলো পার্ক সদর দপ্তরের গঠন কাঠামো বদলে নতুন এই এআই টিমকে তার অফিসের কাছেই বসানোর ব্যবস্থা করছেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমস নিশ্চিত করেছে, এই প্রকল্পে জড়িয়ে আছেন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান স্কেল এআই-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ২৮ বছর বয়সী আলেকজান্ডার ওয়াং। মেটা ওয়াংয়ের প্রতিষ্ঠানে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের কথাও ভাবছে।
লড়াইয়ে মেটার প্রতিদ্বন্দ্বীরা
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে চলছে চরম প্রতিযোগিতা। ওপেনএআই (চ্যাটজিপিটি’র নির্মাতা), গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান আলফাবেট, ইলন মাস্কের এক্সএআই ও অ্যানথ্রপিকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লড়াইয়ে রয়েছে মেটা। অ্যাপলও কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও এ সপ্তাহেই তাদের নিজস্ব এআই প্রযুক্তি ঘোষণা করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন শুধু প্রযুক্তি নয়—প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্বের লড়াইও। গুগল আশঙ্কা করছে, মানুষ যদি শুধু এআই-এর কাছে প্রশ্ন করে উত্তর পায়, তবে আর সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করবে না। অন্যদিকে, অ্যাপল বুঝছে, এআই যদি মোবাইল অ্যাপের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়, তবে তাদের স্মার্টফোন ব্যবসায় বড় প্রভাব পড়বে।
উন্মুক্ত এআই প্ল্যাটফর্ম গড়তে চায় মেটা
মেটার নিজস্ব ল্যামা এআই মডেলকে উন্মুক্ত (ওপেন সোর্স) করে তারা অন্যদের চেয়ে আলাদা পরিচয় গড়তে চায়। ঠিক যেভাবে অ্যান্ড্রয়েড হয়ে উঠেছে বিশ্বজুড়ে মোবাইল প্ল্যাটফর্মের ভিত্তি। মেটাও চায় তাদের এআই মডেল হোক বিশ্বের বড় অংশের প্রযুক্তির ভিত্তি।
তবে এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, ‘সুপার ইনটেলিজেন্স’ বা মানব-মস্তিষ্কের চেয়েও উন্নত বুদ্ধিমত্তার আগে প্রথমেই এআই-কে এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে, যেখানে এটি যেকোনো মানবীয় কাজ নির্ভুলভাবে করতে পারবে। একে বলা হয় ‘আটিফিশিয়াল জেনারেল ইনটেলিজেন্স’ ( এজিআই)। বিজ্ঞানীদের মতে, আমরা এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি। কেউ বলেন কয়েক বছর দূরে, কেউ বলেন পথটাই অনিশ্চিত।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল