মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ইউলুপের সুফল শেষ বাড্ডা-রামপুরায়

রোড ডিভাইডার তুলে ফেলায় বেড়েছে যানজট

মানিক মুনতাসির

ইউলুপের সুফল শেষ বাড্ডা-রামপুরায়

ইউটার্ন ও ডিভাইডার খুলে দেওয়ায় বাড্ডা-রামপুরা সড়কের দুই ইউলুপের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বেড়ে গেছে যানজট। ছবি : জয়ীতা রায়

মালিবাগ থেকে কুড়িল বিশ্বরোডের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। কোনো সিগন্যাল কিংবা যানজট না থাকলে এ দূরত্ব পেরোতে ২০ মিনিট লাগার কথা। তবে সেটা এখন আর সম্ভব নয়। বাড্ডা ও রামপুরা এলাকায় দুটি ইউলুপ নির্মাণের পর ১১ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়া যেত আধা কিংবা পৌনে এক ঘণ্টায়। এখন সেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় পর্যন্ত ব্যয় হয়। এর কারণ ১১ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পথজুড়ে তুলে দেওয়া হয়েছে রোড ডিভাইডার। একই সঙ্গে খুলে দেওয়া হয়েছে অপ্রয়োজনীয় ইউটার্ন। এতে যত্রতত্র পথচারী পারাপার হচ্ছেন এবং বাস-ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়িসহ প্রায় সব গাড়িই যত্রতত্র ইউটার্ন নিচ্ছে। এতে একদিকে ইউলুপ দুটি তার কার্যকারিতা হারাতে বসেছে, অন্যদিকে বেড়ে গেছে যানজট। এই সড়কে ইউলুপ দুটি চালু হওয়ার পর এসব ইউটার্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তখন যানজটও কম ছিল। কিন্তু ছয় মাস যেতে না যেতেই আবারও ইউটার্নগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাস্তার মধ্যে স্থাপিত রোড ডিভাইডার তুলে দিয়েছে পুলিশ। যার ফলে বেড়ে গেছে যানজট।

শুধু তাই নয়, মধ্যবাড্ডা ও মেরুল বাড্ডা মধ্যবর্তী স্থানের ইউলুপের নিচেই দুটি ইউটার্ন খুলে দেওয়া হয়েছে। মধ্যবাড্ডা ইউলুপের নিচে রোড ডিভাইডার তুলে দিয়ে কে বা কারা একটি অবৈধ ইউটার্ন চালু করেছে। তার মাত্র কয়েক গজের ব্যবধানে মধ্যবাড্ডা লিংক রোডেও একটি ইউটার্ন খুলে দিয়েছে পুলিশ। অথচ এই মোড়ের যানজট কমাতেই নির্মাণ করা হয়েছিল বিটিভির কাছের ইউলুপটি। যা দিয়ে ঘুরে এসে বাসসহ সব গাড়ি গুলশান রোডে ঢোকার কথা। প্রথমদিকে তেমনটি বাস্তবায়নও করা হয়েছিল। কিন্তু বাস মালিক, শ্রমিক, রিকশা মালিক, শ্রমিকদের চাপে পুলিশ আবারও এ দুটি ডিভাইডার খুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে ইউলুপ দুটি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলছে। এতে এই সড়কে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই যানজট লেগে থাকছে।

একইভাবে এ রাস্তার দুই ধারে ফুটপাথে কিছুদিন আগে দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছিল, কিন্তু সেসব দোকান আবারও বসেছে। যার ফলে ফুটপাথে হেঁটে চলাও দুষ্কর। অন্যদিকে কোথাও কোথাও রাস্তার ওপরও বসানো হয়েছে ভ্রাম্যমাণ দোকান। যা যানজট সৃষ্টিতে সহায়ক হয়েছে। অন্যদিকে যান চলাচল ও পথচারী চলাচলে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করছে।

একইভাবে নতুনবাজার এলাকায়ও তুলে দেওয়া হয়েছে। চালু রয়েছে একটি ইউটার্ন। আধা কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে কোকাকোলা এলাকায়ও ডিভাইডার উন্মুক্ত, একই সঙ্গে একটি ইউটার্ন। আবার উত্তর বাড্ডায় রয়েছে আরেকটি ইউটার্ন। রামপুরা বাজার ও ওয়াপদা রোড এলাকায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে আরও দুটি স্থানে ডিভাইডার এবং তার আধা কিলোমিটার দূরত্বে আবুল হোটেলের কাছে আরও একটি ক্রসিং। এসবই মূলত এই ১১ কিলোমিটার সড়ককের স্বাচ্ছন্দ্যকে  অবরুদ্ধ করে রাখে। ফলে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুই ইউলুপের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

উত্তরা থেকে মতিঝিল নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যাংকার রফিকুল ইসলাম বলেন, রামপুরা ও বাড্ডার দুই ইউলুপ চালুর পর আধা ঘণ্টায় কাকরাইল-পল্টন যাওয়া যেত। এখন সেই পথ দেড় ঘণ্টায়ও যেতে পারি না। রাস্তার বিভিন্ন অংশে ডিভাইডার কেটে গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এজন্য আবারও যানজট বেড়ে গেছে।

এ ছাড়া এই রুটে চলাচল করে পাবলিক বাস হিসেবে আকাশ পরিবহন, যা আগে সুপ্রভাত হিসেবে পরিচিত ছিল। গত বছর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবরারকে চাপা দিয়ে হত্যার পর সুপ্রভাতের রুট পারমিট বাতিল করা হয়। এরপর রাতারাতি সুপ্রভাত থেকে আকাশ পরিবহনে রূপ নেয় এসব বাস। এ বাসগুলো অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে চলাচল করে। একে অপরের সঙ্গে পাল্লা দিতে প্রায়ই  ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটায়। এ ছাড়া অনাবিল, ছালছাবিল পরিবহনের বাসগুলোও খুবই উল্টাপাল্টা চলাচল করে। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ রামপুরা জোনের এসি মো. মফিজুর রহমানের সঙ্গে তিন দিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টার পর গত শনিবার তিনি বলেন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কিংবা ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়ে আপনি যেটা জানতে চাচ্ছেন সেটার জন্য আপনাকে যেতে হবে সিটি করপোরেশনের ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। ডিভাইডার তারাই বন্ধ করেন। তারাই খোলেন। তাহলে ট্রাফিক বিভাগ কীভাবে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করে, তাদের কাজ কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা শুধু মোটর যান আইন বাস্তবায়ন করি। ডিভাইডার খোলা কিংবা বন্ধ করা আমাদের কাজ নয়। তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। 

এ বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক পূর্বের ডিসি মো. সাহেদ আল মাসুদ বলেন, রামপুরা ব্রিজ থেকে ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের আওতাধীন অঞ্চল। আর মধ্যবাড্ডা-মেরুল, উত্তর বাড্ডা হচ্ছে ট্রাফিক পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন। তবে ডিভাইডারগুলো কেন খোলা হয়েছে সে বিষয়ে আমি উত্তর বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছি। কেননা এটার ফলে ইউলুপগুলো তাদের কার্যকারিতা হারাতে বসেছে।

সর্বশেষ খবর