মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজধানীতে সারা দিনের স্কুল

জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীতে সারা দিনের স্কুল

রাজধানীর বনশ্রীতে গড়ে উঠেছে সারা দিনের মজার স্কুল। সকাল ৮টায় স্কুল শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ৮টায়। বাড়িতে পড়ার কোনো ঝামেলা নেই। শিশুরা বাসায় যায় শুধু রাতে ঘুমানোর জন্য

সকাল থেকে দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যই রয়েছে নিজস্ব লকার। সেখানে সংরক্ষিত থাকে তার সারা দিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ বিকালের ইউনিফর্ম। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা পোশাক পাল্টে পরিচ্ছন্ন হয়ে হলরুমে দুপুরে একসঙ্গে খেতে বসে। সবাই খাবার বাসা থেকে নিয়ে আসে

ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা বেজে ২০ মিনিট। সমস্বরে শিশুরা বলছে, ‘উই ক্যান, উই উইল’ অর্থাৎ ‘আমরা পারি, আমরা করব।’ এগিয়ে গিয়ে দেখা মেলে পাঁচ বছর বয়সের একদল শিশুর। শৈশব থেকেই শিখছে মনোবল, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বাড়ানোর অনুশীলন। সকালের সমাবেশ শেষে কোনোরকম ধাক্কাধাক্কি না করে লাইন ধরে নিজ নিজ শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে তারা।

পাসের কক্ষে কাগজ কেটে মানচিত্র বানিয়ে দেশকে চিনছে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। সকাল ৮টায় স্কুল শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ৮টায়। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা শেখে ইয়োগা, গিটার, তবলা, চিত্রাঙ্কন, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, গান, নাচসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম। অংশগ্রহণ করে স্পোকেন ইংলিশ ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, শুদ্ধাচারচর্চা ক্লাবসহ নানা সৃজনশীল কর্মকান্ডে। এ যেন সারা দিনের মজার এক স্কুল।

গৎবাঁধা ক্লাস-কোচিংয়ের গন্ডি ভেঙে শিশুদের পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে চলছে কসমো স্কুল। খুব অল্প খরচে এক ছাতার নিচে এ যেন বিশ্বমানের মানুষ গড়ার কারখানা। রাজধানীর বনশ্রীর বি-ব্লকে ৬ নম্বর সড়কে গড়ে তোলা হয়েছে সারাদিন চলমান এই স্কুল। এই স্কুলের পাঠদান থেকে শুরু করে শেখানোর ধরন সবকিছুতেই রয়েছে সুস্থ মানসিকতার পরিশীলিত শুদ্ধাচারী মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা।

শিশুদের দৈনন্দিন কর্মতালিকা সম্পর্কে কসমো স্কুলের ভাইস-প্রিন্সিপাল মো শরিফুল আলম বলেন, ‘সকাল ৮টায় শিশুদের ক্লাস শুরু হয়। প্রাক-প্রাথমিক ১, ২ এবং প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটি হয় বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্লাস সকাল ৮টায় শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ৮টায়। আমরা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড নির্ধারিত কারিকুলামে ইংরেজি ভার্সন অনুসরণ করি। এর পাশাপাশি বাংলা-ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য এবং বিজ্ঞানভিত্তিক পড়াশোনায় গুরুত্ব দেওয়া হয়।’

সকাল থেকে দেড়টা পর্যন্ত ক্লাস চলে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্যই রয়েছে নিজস্ব লকার। সেখানে সংরক্ষিত থাকে তার সারা দিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ বিকালের ইউনিফর্ম। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা পোশাক পাল্টে পরিচ্ছন্ন হয়ে হলরুমে দুপুরে একসঙ্গে খেতে বসে। সবাই খাবার বাসা থেকে নিয়ে আসে। খাবার সরবরাহেরও ব্যবস্থা আছে। বাড়ন্ত শিশুদের পুষ্টির বিষয়টি খেয়াল রেখে প্রতিদিনের খাবারের তালিকা করে দেওয়া আছে। বাড়ি থেকে সে অনুযায়ী খাবার আনতে হয়। সারা দিন নিয়মিত বিরতিতে শিশুদের পর্যাপ্ত পানি পানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়। শিশুদের ভিটামিন ‘ডি’-এর ঘাটতি যেন না হয় সে লক্ষ্যে সপ্তাহে রুটিন অনুযায়ী কিছুটা সময় ছাদে রৌদ্রস্নানের ব্যবস্থাও করা হয়। এরপর জামাতে নামাজ আদায় করে মুসলিম শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ধর্মানুসারে প্রার্থনায় একাগ্র হয়। এরপর বেলা ২টা থেকে ধ্যান ও বিশ্রাম শেষে ৩টা ১৫ মিনিট থেকে শুরু হয় সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং পড়াশোনা। সপ্তাহে দুইদিন ইয়োগা শেখানো হয়। শেখানো হয় জীবনযাপনের বিজ্ঞান।

মো. শরিফুল আলম আরও বলেন, ‘চিত্রাঙ্কন থেকে শুরু করে গান, নাচ, গিটার, তবলা শেখার ব্যবস্থা আছে। শিশু সহশিক্ষা কার্যক্রম কি শিখবে সেটা নির্ধারণ করতে শিশুদের সঙ্গে অভিভাবক এবং শিক্ষক বসে পারস্পরিক সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করি শিশুদের মোবাইল, ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি থেকে দূরে রাখতে। শৈশব থেকেই শিশুদের জাঙ্কফুড, কোমলপানীয় কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে বিরত থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা হয়।’

সারা দিন স্কুলে থাকতে কেমন লাগে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী অর্না রহমান বলেন, সারা দিন কীভাবে কেটে যায় মনেই থাকে না। ক্লাস, হাসি, আড্ডা, নাচ শিখতেই সময় পার হয়ে যায়। স্কুল বন্ধ থাকলেই বরং বাসায় মন খারাপ লাগে।

২০১৩ সালে স্কুলটি গড়ে তোলা হয়। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ছেলে এবং মেয়েদের আলাদাভাবে ক্লাস হয়। এই স্কুলে বর্তমানে মোট শিক্ষার্থী প্রায় ২০০ জন। শিক্ষক রয়েছেন ৪২ জন। মিরপুর-১২ নম্বর ‘বি’ ব্লকের ১ নম্বর সড়কে স্কুলটির মূল ক্যাম্পাস।

সর্বশেষ খবর