মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ঊর্ধ্বমুখী বাড়ছে কুমিল্লা শহর

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

ঊর্ধ্বমুখী বাড়ছে কুমিল্লা শহর

এক সময় সাজানো-গোছানো ছিল কুমিল্লা শহর। সেই আবাসিক শহর কুমিল্লা এখন বিল্ডিংয়ের বস্তিতে রূপ নিয়েছে। যানজটের কারণে রাস্তায় নামা দায়। বর্ষায় জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে নগরীর অধিকাংশ অঞ্চল। প্রতিযোগিতা দিয়ে বাড়ছে আকাশচুম্বী ভবন। নেই কোনো পরিকল্পনা। অনেক এলাকায় নেই ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশেরও রাস্তা।

কুমিল্লার প্রবীণ শিক্ষাবিদ শান্তিরঞ্জন ভৌমিক তার ‘আমার শহর কুমিল্লা’ বইয়ে ’৬০-এর দশকের সাজানো শহরের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, শাসনগাছায় পৌঁছার পর রিকশায় সুপারিবাগান। ভাড়া চার আনা। শাসনগাছায় তখন অদুদ মিঞা সাহেবের পেট্রোল পাম্প ও দালান, ডাকবাংলো, ২/৪টি দোকান। যতক্ষণ না পুলিশলাইন পার হয়েছি, উত্তর দিকে জেলখানা রোড নয়, কান্দিরপাড়ে প্রবেশ করেছি, ততক্ষণ পর্যন্ত শহরের বাতাস গায়ে লাগত না। রাস্তার দুপাশে অস্থায়ী দোকানপাট, বাদশা মিঞা বাজারের কথা শুনেছি, তখন চোখে দেখিনি। রাস্তার পাশে ভগা মিঞা মোটর গ্যারেজ, পুকুর ইত্যাদি সব। কান্দিরপাড় হলো কুমিল্লা শহরের রাজধানী। অন্যরকম পরিবেশ। উত্তরে বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন, ক্লাব বলতে টিনের ঘর, টেনিস কোর্ট, কয়েকটি চা-স্টল, মধু ডাক্তারের হোমিওপ্যাথি ডিসপেনসারি, লিবার্টি সিনেমা হল, উত্তর পাশে সাধনা ঔষধালয়, তারপর রাস্তার দক্ষিণ পাশে বণিক ব্রাদার্স, জাফর খান-এর মনিহারি দোকান, একটু অগ্রসর হলে নূরমিঞা বেকারি, নতুনঘর, করুণাভান্ডার কাগজের দোকান, ভৈষজ্য ভবন, টং-এর মনিহারি দোকান, দক্ষিণপাশে অধ্যাপক মণীন্দ্রমোহন দেবদের বাড়ি, হাতেখড়ি কাগজের দোকান, লাভলি স্টোর, মায়াভান্ডার, কালীবাড়ি, দক্ষিণ পাশে তিনটি মিষ্টি দোকান (ভগবতী পেড়া ভান্ডার, মাতৃভান্ডার, শীতলভান্ডার) এভাবেই শহরের প্রধান পথ ধরে রাজগঞ্জ পেরিয়ে ছাতিপট্টি-সুপারিবাগান।

তার বইয়ে আরও উল্লেখ করেন, শহর ছিল গোছানো। পূর্বে ব্যবসায়িক কেন্দ্র। এলাকাগুলোর নাম দেশওয়ালীপট্টি, পানপট্টি, ছাতিপট্টি, সোনারু পট্টি, কাপড়িয়াপট্টি, কামারপট্টি, চকবাজার ইত্যাদি। রাজগঞ্জের পশ্চিমে শিক্ষা ও আবাসিক কেন্দ্র। কুমিল্লা জিলা স্কুল, ভিক্টোরিয়া কলেজ, ফয়জুন্নেছা স্কুল। আবাসনের জন্য ঝাউতলা, বাদুড়তলা, বকুলতলা, অশোকতলা, ঠাকুরপাড়া, বাগিচাগাঁও, কান্দিরপাড় সংলগ্ন এলাকা, নতুন ও পুরাতন চৌধুরীপাড়া, মনোহরপুর ইত্যাদি।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, আয়তন কম থাকায় নগরীতে এখন ঘিঞ্জি পরিবেশ বিরাজ করছে। সহসা কুমিল্লা বিভাগ হচ্ছে। বিভাগের কাজের সুবিধার্থে নগরীর আয়তন আরও বাড়ানো প্রয়োজন। 

কুমিল্লা সিটি করপোরেশেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. সফিকুল ইসলাম বলেন, আয়তন আরও ৫০ বর্গকিলোমিটার বাড়ানোর বিষয়ে কাগজপত্র তৈরি আছে। নতুন পরিষদের অনুমোদন নিয়ে আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সিটিতে পশ্চিমে আলেখারচর, দক্ষিণে সুয়াগাজী, পূর্বে স্থলবন্দর অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সিটির আঞ্চলিক অফিস, সদর উপজেলার অফিস গোমতীর পাড়ে ও বিভাগীয় কার্যালয় শহরের দক্ষিণে চলে যেতে পারে। এতে শহরের ওপর চাপ কমবে।

সর্বশেষ খবর