মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

যেভাবে বদলে যাচ্ছে রাজশাহী

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

যেভাবে বদলে যাচ্ছে রাজশাহী

শহরের পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়ন তো এক দিনে হয় না। এগুলো করতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। মানুষ বলছেন, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বসবাসযোগ্য নগরী রাজশাহী। এটা শুনলে আমার খুব ভালো লাগে। এই স্বীকৃতি অন্যরাও অনুসরণ করতে পারেন   - এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সিটি মেয়র

সবুজ, সুন্দর ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী রাজশাহী। দৃষ্টিনন্দন এই শহরটির রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে লাগানো বিভিন্ন ধরনের লাইট। রাতে এই লাইটিংয়ের আলোর ঝলকে বিমোহিত হবেন যে কেউ। উত্তরের প্রাচীন বিভাগীয় শহর পদ্মাপাড়ের রাজশাহী। সময়ের ব্যবধানে উন্নয়নযজ্ঞে পাল্টে গেছে পুরো রাজশাহী। দেশের সবচেয়ে বসবাস উপযোগী পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। নির্মল বায়ুর শহর হিসেবেও স্বীকৃত এ শহর।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রসার ঘটেছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। পর্যটন ক্ষেত্রেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। রাজশাহীতে বর্তমানে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। বিশাল কর্মযজ্ঞে মাথাচাড়া দিয়েছে পদ্মাপাড়ের বিশাল বিশাল অবকাঠামো। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির আদলে নির্মাণ করা হয়েছে হাই-টেক পার্ক। এর পাশাপাশি রাজশাহীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানায় নির্মিত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের অগ্রগতি এখন প্রায় ৮০ ভাগের বেশি। সড়ক অবকাঠামো সম্প্রসারিত হচ্ছে এই নগরীতে। প্রতিটি প্রধান সড়ক উন্নীত হয়েছে চার লেনে। এর পরও যানজট নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে মূল নগরীতে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, রাজশাহীকে উন্নত, আধুনিক ও বসবাস উপযোগী নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। ২০২১ সালে নগরীর উন্নয়নে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। নগরীকে পাল্টিয়ে দিতে এ প্রকল্পকে মাইলফলক হিসেবে দেখছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। বৃহৎ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। যার অনেকগুলোর কাজ চলছে। কয়েকটি শেষের দিকে। রাজশাহী নগরীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে আরও পাঁচটি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো উন্নয়ন।

শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। বিসিক শিল্পনগরী-২ ও চামড়াশিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ২২টি পুকুর অধিগ্রহণ করে পার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে। যদিও সরকার এসব পুকুর অধিগ্রহণ করতে অর্থ ছাড় করেনি। নগরীর পদ্মা নদী-তীরবর্তী এলাকা সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মাপাড় রাজশাহী নগরীর অন্যতম উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র। পদ্মাপাড়-সংলগ্ন দরগাপাড়ায় অবস্থিত হজরত শাহ মখদুম (রহ.)-এর মাজার শরিফ। পদ্মাপাড়ে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে লালন শাহ পার্ক। শাহ মখদুম (রহ.) মাজার ও পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসেন দেশ-বিদেশের অসংখ্য দর্শনার্থী। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য নগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্রকে আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করতে উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশন।

রাসিক সূত্র জানায়, ২৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মহানগরীর বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত বাইসাইকেল লেনসহ সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ হয়েছে। ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর উপশহর মোড় থেকে সোনাদীঘি মোড় ও মালোপাড়া মোড় থেকে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে। রাজশাহী-নওগাঁ সড়ক থেকে রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ, রাজশাহীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নর্দমা নির্মাণ প্রকল্প (তৃতীয় পর্যায়), কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প এবং রাজশাহীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী সোনাদীঘি নতুন রূপ পাচ্ছে। সোনাদীঘির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ১৬ তলাবিশিষ্ট ‘সিটি সেন্টার’ নির্মাণ ও সোনাদীঘিকে সাজানোর চুক্তি করে সিটি করপোরেশন।

প্রতিদিনই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাসাবাড়িতে গিয়ে বাঁশিতে ফুঁক দেন। বাঁশির শব্দে গৃহস্থালি বর্জ্য নিয়ে বাইরে আসেন লোকজন। এরপর এসব বর্জ্য নগরীর সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে (এসটিএস) রাখেন তারা। সেখান থেকে আরেক দল কর্মী তা ময়লা ফেলার স্থানে নিয়ে যান। যেসব এলাকায় এখনো এসটিএস নির্মাণ হয়নি, সেগুলোতে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বর্জ্য রাখা হয়। সেখান থেকে ভাগাড়ে নেওয়া হয়। নগরীর বর্জ্য অপসারণে আছেন ১ হাজার ৪০০ জন কর্মী। শহরে বর্তমানে ১২টি এসটিএস আছে। সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘এখন ওয়ার্ড কার্যালয়েও বর্জ্য পরিবহনের ভ্যান আছে। এ জন্য বাসাবাড়ি থেকে টাকা নেওয়া হয় না। সিটি করপোরেশন থেকে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়।’

সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এই শহরকে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রক্রিয়া আমাদেরকে ধরে রাখতে হয়েছে। শহরের পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়ন তো এক দিনে হয় না। এগুলো করতে আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। মানুষজন বলছেন, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বসবাসযোগ্য নগরী রাজশাহী। এটা শুনলে আমার খুব ভালো লাগে। এই স্বীকৃতি অন্যরা অনুসরণ করতে পারেন।

সর্বশেষ খবর