বুধবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
মূল রচনা

শুভ্রতার শরৎ

শুভ্রতার শরৎ

♦ মডেল : কণ্ঠশিল্পী তাসমি ♦ ছবি : নূর

বৃষ্টিভেজা সবুজ মাড়িয়ে প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরানী শরৎ। সঙ্গে এনেছে কাশবন, মাতাল হাওয়া, নীল আকাশে সাদা মেঘ আর থইথই করা জলে শাপলা-কমলের জলকেলি। এ যেন দারুণ এক উৎসব। প্রকৃতির এমন মনোলোভা চিত্রের প্রভাব পড়ে ফ্যাশনপ্রিয় মানুষের পোশাকেও।  তবে সবকিছু হওয়া চাই শান্ত এবং সাবলীল।

 

রোদের মাঝে বৃষ্টি, এ যেন শরতেরই প্রতিরূপ। আকাশগগনে ভাসে সাদা মেঘের ভেলা। কখনো কখনো আকাশ সাজছে রংধনুর সাতটি রঙে। ক্ষণে ক্ষণে ঋতুরানী শরতের দুরন্তপনা হার মানায় উচ্ছল কিশোরীকেও। প্রকৃতির এই বিচিত্র রঙের খেলায় মত্ত হতে চায় সবাই। তাই তো প্রকৃতির রূপ বদলের সঙ্গে বদলে যায় ফ্যাশনসচেতন নারী-পুরুষের সাজ পোশাক।

 

কবি-সাহিত্যিকরা নানা গল্প, কবিতা, উপন্যাসে শরতের যে সৌন্দর্য তুলে ধরেছেন, সেই শরতের প্রকৃতিকে অনুভবের সুযোগ এই শহরে ছিল না। বেশ নিভৃতেই শরৎ আসত শহরে। তবে খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, এই বছর সাত কি আট। মানুষের মধ্যে বেড়ে যায় ভ্রমণের শখ। দল বেঁধে সবাই ঘুরে বেড়ায় শহরের আশপাশে থাকা কাশবনে, এই শরৎকালে। কাশবনে ঘুরে বেড়ানোর পোশাকে যদি থাকে শরতের আবহ, তাহলে কেমন হয়- এই ভাবনাকেই কাজে লাগালেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। স্বল্প পরিসরে শারদীয় পোশাকের কাজ শুরু হয়, ক্রেতারা তা গ্রহণ করলেন সাদরে। সেই থেকে শরৎ হয়ে উঠল শহুরে জীবনের প্রাণোচ্ছল উৎসব।

বছরের এ সময়টাতে ফ্যাশন হাউসগুলো বর্ষার কথা মাথায় রেখে পোশাক তৈরি করে। তবে সেক্ষেত্রে মানা হয়, শরৎ আবহাওয়ার আবহ। কেননা, শরতের আছে নিজস্ব বর্ণ আর গন্ধ। বর্ষাকালে লাগাতার বৃষ্টি প্রকৃতিকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে দেয়। এরপর আসে ঋতুরানী শরৎ, তাই শরৎকে একটু বেশি শুভ্র মনে হয়। ফ্যাশন হাউসগুলো নীল-সাদার সমন্বয়ে নিয়ে আসে রকমফের পোশাক। শুধু শাড়ি বা কামিজে নয়, শরতের অন্যান্য পোশাকেও প্রাধান্য পায় শুভ্র সাদা আর আকাশের নীলাভ রং। বেশির ভাগ পোশাকের নকশায় ঠাঁই পায় ফুলেল ও জ্যামিতিক মোটিভ। ব্লক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হালকা অ্যামব্রয়ডারি থাকতে পারে পোশাকগুলোয়।

 

শরতের হাওয়ায় প্রকৃতি যেন শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা জীবন্ত এক ক্যানভাস। প্রকৃতির এই ক্যানভাসের অংশ হতে পোশাকের রংটি হওয়া চাই মানানসই। কারণ, শরৎকালে সবকিছুতেই একটা হালকা মিষ্টি ব্যাপার থাকে। সাদা কাশফুলে থাকে হালকা বাদামির ছোঁয়া, তাও তাঁর কাছে শরতের রং বলেই মনে হয়। সকালের মিঠে সোনালি রোদজুড়ে থাকে শরতের আমেজ, আবার শিউলিবোঁটার যে কমলা রং, তা তো শরতেরই। তাই এভাবেই নতুন নতুন শরতের রং খুঁজে বেড়াচ্ছেন ডিজাইনাররা। তাই তো গাঢ় নীল, হালকা নীল, আসমানি নীল, ময়ূরকণ্ঠি নীল, রয়েল ব্লু, নেভি ব্লু আরও কত শত রং ফুটে উঠেছে পোশাকের জমিনে। সঙ্গে সাদা কিংবা অফ হোয়াইটের মিশেল এবং নকশার বৈচিত্র্য; এ নিয়ে অনেক ফ্যাশন হাউস সাজিয়েছে শরৎ সংগ্রহ। এর বাইরেও পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফিরোজা, ছাই, সোনালি, খয়েরি, সবুজ, হলুদ, গোলাপি রঙের নান্দনিক ডিজাইন। সুতি ছাড়াও সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্কসহ নানা ফেব্রিকে নীল-সাদা ধরা দিয়েছে নানাভাবে।

শরতে সিল্ক কিংবা জর্জেট পরার উপযুক্ত সময়। আরামদায়ক হবে লিনেন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, তাঁতের কাপড়ও। জর্জেট, জয়সিল্ক, সিল্ক কাপড়ের লং কামিজ, গাউন ধাঁচের পোশাক এখনকার উৎসবের জন্য ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক। থ্রিপিস, কামিজ, কুর্তি, স্কার্ট টপস, ফ্রক ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবে। আর শাড়ি পরতে চাইলে এখন অনায়াসে পরতে পারেন তসর, অ্যান্ডি, তাঁত কিংবা কটন শাড়ি। রাতের দাওয়াতে সিল্ক, কৃত্রিম মসলিন বা কাতান শাড়ি এ আবহাওয়ায় দারুণ লাগবে।

 

সময়টা যেহেতু বৃষ্টির তাই জর্জেট বা সিল্কের কাপড়কে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে যারা খুবই ব্যস্ত, তাদের জন্য এই আবহাওয়ায় সিল্ক, হাফসিল্ক, জর্জেট, মিক্সড কাপড়ের পোশাক পরা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এই ধরনের পোশাক ভিজলে দ্রুত শুকিয়ে যায়। দাগ লাগলেও তা উঠানো সহজ। বর্ষায় জর্জেট শাড়ির সঙ্গে সুতি প্রিন্টের ব্লাউজ পরা যায়। হাফ হাতা কিংবা হাতা কাটা ব্লাউজের নকশাটি ফুলেল মোটিফের হলে চলতি ঋতুর সঙ্গে ভালো মানাবে। এখন চলছে গোল কিংবা বোট গলার ব্লাউজ। একরঙা ব্লাউজও পরা যেতে পারে শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে। বর্ষার জর্জেট শাড়ির নকশায় এখন জনপ্রিয় ফুলেল ছাপা। বাদলা দিনে উজ্জ্বল রঙের শাড়িই বেশি মানাবে। জর্জেট শাড়ির আলাদা বিশেষ করে যত্ন ও নিতে হয় না। সুতি কাপড়ে ঘটে উল্টোটা। তাই কোনো রকম ঝামেলা পোহাতে না চাইলে যে কোনো অনুষ্ঠানে পরে যেতে পারেন অ্যান্ডি সিল্কের পোশাক। অনুষ্ঠানে যেতে চাইলে অন্যান্য উজ্জ্বল রঙের পোশাক নির্বাচন করতে পারেন। কারণ মেঘলা দিনে আবহাওয়া অনেকটা অন্ধকার থাকে। তবে রং যেন দৃষ্টিকটু না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

তবে শরৎ মানেই যে, মেঘ-বায়ুর মেজাজ খোশ থাকবে এমনটাও নয়, মাঝে মাঝে মেঘের তর্জন-গর্জন আর প্রখর রোদের দাপটও থাকবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বাবস্থার সাজ-পোশাকে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। আর সাজের উপকরণটি হতে হবে অবশ্যই নিরোধক। ত্বকের ধরন বুঝে নিতে হবে প্রসাধন।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর