বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
মূল রচনা

ফ্যাশনে হেমন্তের ছোঁয়া

ফ্যাশনে হেমন্তের ছোঁয়া

► মডেল : ফারিয়া শাহরীন ► ছবি : আর্কাইভ

গরম কমে এসেছে, আবহাওয়া জানান দিচ্ছে শীত আসছে। প্রকৃতির এমন বদলের পাশাপাশি বদল আনতে হয় জীবনযাত্রায়। বদল আসে পোশাকেও।  আর ফ্যাশনটা আপনি যেভাবেই করুন, শুধু সময়োপযোগী আর একটুখানি ফ্যাশনসচেতন হলেই চলবে...

 

প্রকৃতিতে কমে আসছে গরমের প্রভাব। অপরদিকে হেমন্ত দিনের আবহাওয়া জানান দিচ্ছে, শীত আসছে। কবি-সাহিত্যিকদের ভাষায়, হেমন্ত আসে ধীর পায়ে, শীতের পরশ আলতো করে গায়ে মেখে। হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে প্রকৃতি। শিশিরভেজা ঘাসের ডগায় যেন মুক্তোর মেলা বসে। শিশিরস্নাত হেমন্তের প্রভাব পড়েছে আমাদের যাপিত জীবনে।

 

পোশাক-আশাক

গরম কমে আসছে। কয়েক দিন আগেও যেখানে দিব্যি স্লিভলেস কিংবা শর্টস্লিভে চলে যেত, এখন সেখানে ফুলস্লিভে মিলছে আরাম। হেমন্ত দিনের এমন সময় সকাল ও সন্ধ্যায় হালকা ঠান্ডা গায়ে লাগতে শুরু করেছে। এ সময়টাতে দৈনন্দিন কাজে বাইরে যেতে এমন পোশাক নির্বাচন করুন যা গরমও লাগবে না আবার ঠান্ডা বাতাসেও আরাম দেবে। তাই তো ফ্যাশন হাউসগুলোও আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে নিয়ে এসেছে টি-শার্ট, ফুলস্লিভ টি-শার্ট, লং কুর্তা, টপস, ট্রাউজার, ব্যাগি জিন্স। পোশাকগুলোর কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে খাদি, কটন, সিনথেটিক, জয়সিল্ক, অ্যান্ডি কটন।

তবে এমন দিনে সিল্ক কিংবা জর্জেট কাপড় পরার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। পরতে পারেন লিলেন, ধুপিয়ান, ভয়েল, মসলিন, চিকেন ও তাঁতের কাপড়ও। উৎসবে পরতে পারেন কৃত্রিম মসলিন বা কাতান। এ সময় স্লিভলেস কিংবা হাফস্লিভের চেয়ে ফুলস্লিভ পোশাকই এখন বেশি আরামদায়ক। দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্র কিংবা বাইরে যাওয়ার জন্য জর্জেট, সিল্ক, তসরসহ বিভিন্ন ধরনের সিনথেটিক কাপড়ের পোশাক এখন আরামদায়ক এবং মানানসই। বিশেষ করে জর্জেটের ওয়েস্টার্ন ধাঁচের দেশীয় কুর্তি, টপস বা টিউনিক রেগুলার আউটফিট হিসেবে এখনকার আবহাওয়া উপযোগী এবং স্টাইলিশ লুক আনবে। নেট কাপড়ের লং কামিজ, টপস-স্কার্টের সঙ্গে জর্জেট কিংবা নেটের জ্যাকেট, টপস-টিউনিকের সঙ্গে স্কার্ফ, ফুলস্লিভ শ্রাগ দিয়েও পরতে পারেন। হাফস্লিভ কিংবা স্লিভলেসের বদলে আঁকাবাঁকা বড় কুঁচির বা ডাবল পার্টের কুঁচির ডিভাইডার হাতা, বেলবটম, টিউলিপ, ফ্রিল দেওয়া হাতাসহ বিভিন্ন শেপের ফুলস্লিভ এবং থ্রি-কোয়ার্টার হাতা আরামদায়ক হবে। আর পছন্দের শাড়ি পরলে সঙ্গে বেছে নিন ফুলহাতা বা কোয়ার্টার হাতা ব্লাউজ বা ফ্যাশনেবল কোটি বা টপস বেছে নিতে পারেন শাড়ির সঙ্গে। লেয়ারিং ড্রেস পরার এটাই সময়। কামিজের সঙ্গে লং কোটি বা কয়েক লেয়ার দিয়ে তৈরি পোশাকগুলো রাখুন এ সময়ের ফ্যাশনে। সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে নিতে পারেন মোটা কাপড়ের ওড়না অথবা পাতলা শাল।

তবে রঙের ক্ষেত্রে হেমন্তের তালিকায় রাখতে পারেন লেমন, হালকা হলুদ, বাদামি, পিচ, সবুজ, লাল, গোলাপি, বেগুনি, ব্লসহ বিভিন্ন রং। যাই পরুন না কেন, উজ্জ্বল এবং গাঢ় রং পরার এখনই সময়। চাইলে আপনি নিজেই হতে পারেন আপনার পোশাকের ডিজাইনার। বাজারে এরই মধ্যে এসে গেছে শীতের উপযোগী রং ও ডিজাইনের থান কাপড়। সেখান থেকেও পছন্দের কাপড়টি কিনে ইচ্ছামতো ডিজাইন করে টেইলার থেকে বানিয়ে নিতে পারেন। ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনার জন্য লাগিয়ে নিতে পারেন লেজ কিংবা পাইপিন, বর্ডার। এতে আপনি শুধু স্বস্তিদায়ক পোশাক যে পাবেন তাই-ই নয়, নিজের পোশাক নিজে ডিজাইন করায় এক ধরনের তৃপ্তিও পাবেন।

 

সাজকাহন

গরমে ঘাম হয় বলে তৈলাক্ত কোনো কিছুই সে সময় ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু এ সময়ে ত্বক একটু টানে, তাই এখন তৈলাক্ত এবং শিমারি বেজ মেকআপ করা যেতে পারে। ডিউই মেকআপও বলা হয় একে। এখন ত্বকের স্বাভাবিক রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ক্রিম বেজড শিমার ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্ব¡কে যদি কোনো দাগ ছোপ না থাকে, তাহলে শুধু ক্রিমের মতো করে হালকা শিমার মুখে বুলিয়ে নিলেও চলে। জমকালো দাওয়াতে ফাউন্ডেশন, প্যানকেক ইত্যাদি ব্যবহার করে ভারি বেজ করা যেতে পারে। হালকা গোলাপি, পিচ, বাদামি, সোনালি, সাদা রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করলে ভালো দেখাবে। আইলাইনারের ক্ষেত্রে হেমন্ত ও শীতের সময়টা ডল আই বা বারবি আই ঢঙে এঁকে নিতে পারেন। কাজল দিয়ে বেশি দূর পর্যন্ত টানার চল এখন একটু কমে এসেছে। পাপড়ি ভারি দেখানোর চল এসেছে। নুড আই মেকআপের সঙ্গে চোখের ওপরের ও নিচের পাপড়িতে ঘন করে মাসকারা লাগালে ভালো দেখাবে।

ভ্রু মোটা ও কালো রাখলে সুন্দর দেখাবে। এতেই চোখজোড়া জমকালো দেখাবে। চোখের নিচে সাদা কাজল এ সময়ের জন্য মানানসই। এ ছাড়া ধূসর, সাদা বা রুপালি রঙের আইলাইনার হালকা মিশিয়ে চোখের নিচে লাগাতে পারেন। চোখের মেকআপ যেহেতু হালকা হবে, তাই ঠোঁট সাজাতে হবে ‘শকিং’ বা গাঢ় কোনো রঙে।  লাল, কমলা, হট পিংক, ম্যাজেন্টা, মেরুন রঙের লিপস্টিকে হেমন্ত ও শীতের সাজ পূর্ণতা পাবে। গরমে লিপগ্লস ব্যবহারে অস্বস্তি হয় কিন্তু শীতে এ ঝামেলা নেই, বরং এ সময় ঠোঁটফাটা এবং শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয় বলে ম্যাট লিপস্টিকের চেয়ে গ্লসি লিপস্টিকই ভালো।

 

লেখা : ফেরদৌস আরা

সর্বশেষ খবর