বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

রূপবোধনে ফুল

ফুলের নয়নাভিরাম রূপ আর মিষ্টি গন্ধে মন ভোলে না- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আবার ত্বক ও চুলের যত্নে অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় ফুল।

রূপবোধনে ফুল

* মডেল : নওমী খান * ছবি : ওয়ালিদ হোসাইন

প্রাকৃতিক উপদান সৌন্দর্য সমস্যার সেরা সমাধান- এ ধারণা বেঁচে আছে যুগে যুগে। ল্যাবে তৈরি প্রসাধনীর চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদানের ওপর ভরসা করেন এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি পাওয়া যাবে। আর প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে অন্যতম ফুল। সেটা হতে পারে মৌসুমি কিংবা ১২ মাসের। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফুলে থাকা নিউট্রিয়েন্ট চামড়ার বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। কমায় বলিরেখার মতো সমস্যা। তবে ফুলে যাদের অ্যালার্জি, তারা নিচের এই পন্থাগুলো এড়িয়ে চলুন।

 

গাঁদা : গাঁদা ফুল ত্বকের বন্ধু। এর অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যে কোনো কাটা-পোড়া দাগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ঝুলে যাওয়া ত্বক ঠিক করে। মরা কোষ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে। গাঁদা ফুলকে স্ক্র্যাব, ফেসওয়াশ কিংবা ফেসপ্যাক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কয়েকটি গাঁদা ফুলের পাপড়ির সঙ্গে গুঁড়াদুধ, টক দই, মধু ও গাজরকুচি একসঙ্গে পেস্ট করুন। এবার অল্প দুধের সরের সঙ্গে ছোট টেবিল-চামচ চন্দনবাটা, চার ফোঁটা গোলাপ জল, দুই ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে ভালো করে মুখ ম্যাসেজ করুন। উষ্ণ গরম পানি দিয়ে এই প্রলেপ মুছে আবার একই মিশ্রণ দিয়ে ম্যাসেজ করুন।

গোলাপ ফুল : গোলাপের নারিশিং ও ময়েশ্চারাইজিং উপাদান চুলের জন্য স্বাস্থ্যকর। চুল হয় ঘন ও ঝলমলে। গোলাপজল খুশকি দূর করতে কার্যকর। পাশাপাশি মাথার ত্বকে যে কোনো রকম ফাঙ্গাল ইনফেকশনের চিকিৎসায় গোলাপজল ব্যবহার হয়। চুলে গোলাপজল ব্যবহারের পদ্ধতিও খুব সহজ। এক কাপ কুসুম গরম পানিতে একটি তাজা গোলাপের পাপড়ি ভিজিয়ে রাখুন। এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ বাদাম তেল মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। মাথার তালুতে ঘষে লাগান। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন।

পদ্ম : পদ্ম ফুলের পাপড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স, আরও বেশ কিছু অত্যাবশ্যকীয় খনিজ পদার্থ। এটি তৈলাক্ত ত্বকের লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ব্রণের সমস্যায় কার্যকর। পদ্ম ফুলের পাপড়ি পেস্ট করে অ্যালোভেরা জেল, একটি ডিম ও দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন। পদ্ম থেকে তৈরি তেল চুলপড়া কমায়, অকালে চুল পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে। পদ্ম তেল তৈরির জন্য একমুঠো পদ্ম পাপড়ি ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। হাঁড়িতে দিন এক কাপ নারিকেল তেল, এক কাপ অলিভ অয়েল, দুই টেবিল চামচ আমলা।

জুঁই : একমুঠো জুঁই ফুল পানিতে ফুটিয়ে নিন। পানি ছেঁকে পাত্রে রাখুন। জুঁই ফুলগুলো আলাদা বেটে টক দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। পরে জুঁই ফুল ফোটানো পানি আরও ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। সংবেদনশীল ত্বকের জন্য প্যাকটি খুবই ভালো।

ডালিয়া : মুখে ব্রণের সমস্যায় ডালিয়ার অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ছত্রাক উপাদান তা সারিয়ে তোলে। কয়েকটি ফুলের পাপড়ির সঙ্গে গুঁড়া দুধ, টক দই, মধু ও গাজরকুচি একসঙ্গে পেস্ট করে ত্বকে লাগাতে পারেন। এ প্যাক ত্বকের মলিন ভাব দূর করে। যাদের ব্রণের সমস্যা আছে, তারা সপ্তাহে দুই দিন এ প্যাক ব্যবহার করুন।

শাপলা : শাপলা ফুল, নিমের তেল ও তিল বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ব্রণ কমে যাবে।

বেলি ফুল : শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা এই প্যাক মুখে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। দেখবেন শুষ্কভাব অনেকটাই কেটে গেছে। ফুলের বোঁটা থেকে পাপড়িগুলো আলাদা করুন। তারপর ফুটন্ত পানিতে ছেড়ে তিন থেকে পাঁচ মিনিট রাখুন। পানি ছেঁকে দুধের মালাইয়ের সঙ্গে পেস্ট করে নিন। মসৃণ ত্বক পাওয়ার জন্য প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। যাদের সেনসিটিভ বা সংবদেনশীল ত্বক তারা টক দইয়ের সঙ্গে ব্লেন্ড করে মুখে লাগান। সপ্তাহে একবারই যথেষ্ট।

নয়নতারা : এ ফুলের বিভিন্ন খনিজ রং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। ফুলের পাপড়িগুলো খুব ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর পানিতে চার মিনিট সেদ্ধ করে পেস্ট করুন। সঙ্গে দিতে পারেন টক দই আর মধু। চাইলে নয়নতারার পাপড়ি পানিতে ফুটিয়ে যে কোনো ত্বকের প্যাকের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। তবে এটা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য উপযুক্ত নয়।

 

সতর্কতা

* প্যাক তৈরির আগে ফুল ভালো করে ধুয়ে নিন।

* ফুল কখনই সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। অবশ্যই অন্য কোনো ত্বকবান্ধব উপাদানের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

* ফুলের তৈরি প্যাক টাটকা অবস্থায় ব্যবহার করুন। বেশি সময় রেখে দিলে ছত্রাক জন্ম নিতে পারে, যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।

* ফুলের তৈরি ফেসপ্যাক মুখে লাগানোর আগে সামান্য একটু নিয়ে কনুই কিংবা কানের লতির পেছনে ব্যবহার করে দেখুন। কোনো রকম অ্যালার্জি দেখা না দিলে তবেই সেই ফেসপ্যাক ব্যবহার করা ভালো।

লেখা : লাইফস্টাইল ডেস্ক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর