বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বয়ঃসন্ধিকালে ত্বক

বয়ঃসন্ধিকালে ত্বক

মডেল : সামিরা, ছবি : মনজু আলম

বয়ঃসন্ধিকাল একটি মেয়ের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেটা শারীরিক এবং মানসিক দুভাবেই সেই বদল পরিলক্ষিত হয়। নিত্যদিনের ব্যস্ততা অর্থাৎ পড়াশোনার পাশাপাশি থাকে উঠতি বয়সের চাপ। বয়স কম থাকে বলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও তেমন মনোযোগ দেওয়া হয় না অনেকের। অনেকে মনে করেন, এত কম বয়সে আবার রূপচর্চা! সেটা একটু বেশিই বিলাসিতা।

বয়ঃসন্ধিতে হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে শারীরিক অনেক পরিবর্তন আসে। সাধারণত ১৩-১৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের মুখে ব্রণ ওঠা খুব পরিচিত একটি সমস্যা। ত্বকের যত্নের সঠিক নিয়ম না জানলে, অথবা এই সময়ে বড়দের নিয়ম অনুসরণ করতে গেলেই বাধতে পারে বিপত্তি। মিউনিস ব্রাইডালের স্বত্বাধিকারী তানজিমা শারমিন বলেন, এই বয়সী ছেলে-মেয়েদের সুন্দর ও সুস্থ থাকার জন্য খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই। ভালো থাকার জন্য খুব সাধারণ ও প্রচলিত কিছু নিয়ম অনুসরণ করলেই এ সময় ওরা ত্বক ও চুলের সুস্থতা ধরে রাখতে পারবে। এই বয়সটাতে পড়াশোনার বাড়তি একটা চাপ থাকে, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আর শীতকালে পানিও বেশি খেতে চায় না। ত্বক এভাবে পানিশূন্য ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। কিশোর-কিশোরীদের ত্বক ও চুলে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, রইল সেগুলো কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ...

আসলে কিশোরীদের ত্বকও অনেক সেনসিটিভ হয়। কারণ তারা একটা নির্দিষ্ট সময় পার করে ঘরের বাইরে। সারাদিন তাদের থাকতে হয় স্কুল, টিউশন কিংবা খেলার মাঠে। এতে তাদের ত্বক হয়ে উঠে রুক্ষ। এই রুক্ষ ত্বকের জন্য তাদের চাই বিশেষ যত্ন।  এর মানে হলো- অনেক বেশি সময় ত্বকের যত্নে ব্যয় করতে হবে এমনটা না। তবে টুকটাক কিছু কাজের মাধ্যমেও ত্বকের যত্ন নেওয়া যেতে পারে। আর কিশোরীদের পারিবারিক সাপোর্ট অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ কিশোরী বয়সে সন্তানদের নানা চড়াই-উতরাই পার করতে হয়। এ ছাড়া কিশোরী বয়সে ত্বকের যত্ন নেওয়ার উত্তম সময়। কারণ ত্বকের ধরনটা এ সময়েই বেশি ভালো বুঝে ওঠা যায়। টুকটাক ত্বকের যত্ন নেওয়া এবং কোন ত্বকের জন্য কোন জিনিসটা ব্যবহার করতে হবে তা বুঝে ওঠার সময়ই হলো এই বয়স। তাই এই সময় ত্বকের যত্ন নিলে তা সামনের দিনে কাজে আসবে।

এই বয়সী মেয়েরা দিনের অনেকটা সময় স্কুল কিংবা কলেজে থাকে। স্কুল-কলেজে যাওয়ার সময় পথের ধুলাবালি উড়ে এসে ত্বকে পড়ে। রোদে ঘেমে যায়। ঘাম শুকিয়ে ত্বকের ওপর চিটচিটে প্রলেপ পড়ে। লোপকূপ বন্ধ হয়ে যায়। এটা থেকেই ত্বকের সমস্যা শুরু হয়। এ জন্য স্কুল-কলেজেও দিনের মধ্যে কয়েকবার চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিতে হবে। বাসায় ফিরে ভালো কোনো ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। মুখ পরিষ্কার করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রচুর ফেনা তৈরি হয়। একই সঙ্গে হাত-পা ভালো করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে। ত্বক যদি ভালো মতো পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে নানা রকম চর্মরোগ হতে পারে।

যাদের ত্বক তৈলাক্ত, তাদের ভারী কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যাবে না। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য হালকা ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে। দিনের বেলা তো বটেই, রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালো করে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এ সময় ত্বকের পুরুত্ব কম থাকে। এ জন্য হালকা রোদই কিশোরীদের ত্বকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্কুল-কলেজ কিংবা বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়াও মেনে চলতে হবে বেশ কিছু নিয়ম।

♦ সব সময় ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে এসেই কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো করে মুখ, হাত, পা ধুয়ে ফেলতে হবে।

♦ এই বয়সী ছেলেদের ত্বক বড়দের মতো পরিপক্ব নয়। তাই কিশোরদের বড় ছেলেদের বা মেনজ ফেসওয়াশ ব্যবহার না করে মাইল্ড ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বক শুষ্ক করে দেয় এমন সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করা যাবে না।

♦ ত্বক পরিষ্কার করার জন্য আঙুরের রস, শসার রস ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে।

♦ মুখ ধোয়ার পর ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ত্বকে যদি ব্রণের সমস্যা খুব বেশি থাকে, তাহলে ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

♦ এই বয়সে হোয়াইট হেডস, ব্ল্যাক হেডসের সমস্যাও অনেকের বেড়ে যায়। বাজারের স্ক্রাবের চেয়ে ঘরোয়া স্ক্রাব ব্যবহার করলেই ভালো।

♦ চালের গুঁড়া, দুধ বা টক দই, পেস্তা বাদাম, মসুর ডাল অল্প পরিমাণে নিয়ে তার সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবু মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে ব্ল্যাক হেডস ও ত্বকের মৃত কোষ দূর হবে।

♦ নিমপাতা, তুলসীপাতা এবং অ্যালোভেরা সমপরিমাণে মিশিয়ে মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখলে ব্রণের সমস্যা দূর হবে, ত্বক হবে মসৃণ।

♦ খুশকির সমস্যায় মেথি, মেহেদিপাতা, টকদই ও লেবুর রস ভালো মতো মিশিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। দুই-তিনবার ব্যবহারেই খুশকি কমে আসবে।

♦ হাত-পায়ে লোশন ব্যবহার করতে হবে, আর ত্বক বেশি শুষ্ক হলে এই ঋতুতে লোশনে কাজ না-ও দিতে পারে। তখন জলপাই তেল ত্বক কোমল করবে।

লেখা : ফেরদৌস আরা

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর