শীত আসতে ঢের দেরি। এরই মধ্যে স্যালন, পার্লারগুলোয় বাড়ছে হেয়ার স্ট্রেইট করার ধুম। আসলে শীতকালে হেয়ার স্টাইলে নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করে থাকেন ফ্যাশন সচেতন তরুণীরা। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, হেয়ার স্ট্রেইট থেকে সাবধান। নারীদের জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে হেয়ার স্ট্রেইটে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক। বিষয়টা এমন নয় যে, আজ ‘স্ট্রেইট’ করালেন আর কালই ক্যান্সার হয়ে গেল।
সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল বলছে, হেয়ার স্ট্রেইট করাতে সাধারণত যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তা থেকে বৃদ্ধ বয়সে জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সায়েন্স (এনআইইএইচএস)’ পরিচালিত এই পর্যবেক্ষণ মূলক গবেষণায় বলা হয়, যারা বছরে চারবার চুল সোজা করতে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের সংস্পর্শে আসেন তাদের জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এনআইইএইচএস পরিচালিত আগের গবেষণা এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১১ বছর ধরে ৩৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী, ৩৩ হাজার ৪৯৭ জন নারীর ওপর পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। এর মধ্যে ৩৭৮টি ঘটনায় জরায়ুতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। গবেষকরা আরও জানায়, এই ক্যান্সারের সঙ্গে চুলে ব্যবহৃত অন্যান্য রাসায়নিক যেমন- হাইলাইট, ব্লিচ বা হেয়ার ডাইয়ের কোনো সম্পৃক্ততা মেলেনি।‘এনআইইএইচএস এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্যান্সার এপিডেমিওলজি গ্রুপ’ ও এই গবেষণার প্রধান ড. অ্যালেক্সান্ড্রা হোয়াইট বলেন, হিসাব করে দেখা গেছে, কখনো ‘স্ট্রেইটনার’ ব্যবহার করেননি এমন ১.৬৪ শতাংশ নারীর ৭০ বছর বয়সে জরায়ুর ক্যান্সার হতে পারে। আর যারা ঘন ঘন ‘স্ট্রেইট’ করছেন তাদের ক্ষেত্রে এই ক্যান্সার হওয়ার মাত্রা আরও ৪.০৫ শতাংশ বাড়তে পারে। এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে সায়েন্স ডেইলিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ নারী। যদিও বর্ণ, স্ট্রেইটনার ব্যবহার ও জরায়ুর ক্যান্সারের মধ্যে কোনো সম্পর্ক এখানে গণনা করা হয়নি। গবেষকদের একজন ড. চি-ইউং চ্যান বলেন, অন্যান্য শ্রেণি ও বর্ণের চাইতে অল্প বয়সেই কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে হেয়ার স্ট্রেইট পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা বেশি। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
যেসব উপাদান দোষী : গবেষকদের মতে, স্টেইটনারের মধ্যে থাকা ‘ফর্মালডিহাইড’, ‘মেটাল্স’, ‘প্যারাবেন্স’ এবং ‘বিসফোনেল এ’ উপাদানগুলো হতে পারে ক্ষতিকর। আর চুল সোজা করার সময় ‘স্ট্রেইটনার’ পণ্য অনেকক্ষণ ধরে মাথার সংস্পর্শে থাকে। যে কারণে এই ধরনের রাসায়নিক থেকে ঝুঁকির পরিমাণও বেশি। পাশাপাশি চুল ও মাথার ত্বক পুড়িয়েও ফেলতে পারে। ড. হোয়াইট বলেন, ‘আমাদের জানা মতে এ ধরনের গবেষণা এবারই প্রথম করা হলো। বিষয়টা নিয়ে আরও পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জনসংখ্যার ওপরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।’ এ গবেষণার আগে তারা উদ্ঘাটন করেছিলেন যে, ‘স্ট্রেইটনার ট্রিটমেন্ট’ ও স্থায়ী ‘হেয়ার ডাই’ ব্যবহার থেকে ডিম্বাশয় ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
তথ্যসূত্র : বি বিউটিফুল