একটা সময় একা ঘোরা ছিল সামাজিক সাহসের বিষয়, আজ তা আত্ম-আবিষ্কারের প্রতীক। আধুনিক নারীরা এখন ব্যস্ত জীবনের চাপ ছেড়ে একা ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করছেন- নিজের মতো করে, নিজের নিয়মে। তবে একাকী ভ্রমণ মানেই শুধু স্বাধীনতা নয়, দায়িত্বও বটে। নিরাপত্তা, প্রস্তুতি আর সচেতনতা- এই তিনটি বিষয় মাথায় রাখলে একা ঘোরাও হতে পারে অসাধারণ।
ভ্রমণের প্রস্তুতি : পরিকল্পনা ও সুরক্ষা
একাকী ভ্রমণের প্রথম ধাপ- সুচিন্তিত পরিকল্পনা। প্রথমবারের মতো একা বেড়াতে গেলে এমন জায়গা বেছে নেওয়া ভালো, যা পর্যটক-বান্ধব এবং নিরাপদ। এমন জায়গায় প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা সহজে মেলে এবং স্থানীয়রাও পর্যটকদের দেখতে অভ্যস্ত থাকেন। কারণ, একজন মহিলা একা ভ্রমণ করছেন- এই ধারণা এখনো অনেক জায়গার মানুষের কাছে নতুন। নির্জন ও জনাকীর্ণ এলাকার ভারসাম্য বোঝা জরুরি। যদিও নিরিবিলি জায়গায় বেশ আকর্ষণ থাকে, কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় পরিষেবা বা আপৎকালীন সাহায্য নাও পেতে পারেন। কোন স্থান ‘অসুবিধাজনক’ বা ‘বিপজ্জনক’, তা জানতে গবেষণা করা ভালো।
ভ্রমণ করছেন এমন অভিজ্ঞদের পরামর্শ :
নতুন মানুষের সঙ্গে আলাপে বুঝে কথা বলুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুরক্ষা। সব টাকা একসঙ্গে রাখবেন না; দৈবাৎ চুরি-ছিনতাই হলে যাতে পুরো টাকা না হারায়, সে জন্য কিছু টাকা আলাদা জায়গায় সরিয়ে রাখুন। সঙ্গে একটি ক্যারিব্যাগ রাখুন যেখানে টাকা, পাসপোর্ট এবং দরকারি বৈদেশিক মুদ্রা থাকবে। প্যাকিংয়ের সময়ও নিরাপত্তা মাথায় রাখা জরুরি। দেশের বাইরে গেলে প্রতিটি ডকুমেন্টের একাধিক কপি তৈরি করুন। একটি কপি হ্যান্ডব্যাগে (কেবিন লাগেজে) এবং অন্যটি ট্রলিতে রাখুন। এ ছাড়াও নথিপত্রের সফট কপি ইমেল আইডি বা গুগল ড্রাইভে রাখুন। টিকিট, টাকা এবং বাড়ির চাবি- সর্বদা হাতের কাছে রাখুন।
থাকার জায়গা ও যাতায়াত :
থাকার জায়গা বাছার সময় নির্ভরযোগ্যতা মূল বিষয়। হোমস্টে বা এয়ারবিএনবি বুক করার ক্ষেত্রে এমন সাইট ব্যবহার করুন যার রিভিউ ভালো এবং হোস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আছে। সস্তা হবে ভেবে ‘শেডি’ বা সন্দেহজনক জায়গায় থাকবেন না। হোটেলের ক্ষেত্রে পরিচিত বড় হোটেল বেছে নেওয়া নিরাপদ। থাকার জায়গাটি কেমন এলাকায় অবস্থিত, তা গুগল ম্যাপে আলাদা করে রিসার্চ করে নিন। হোস্টেলের ব্যবস্থা থাকলে নিতে পারেন, কারণ হোস্টেলের ‘কমিউনিটি এক্সপিরিয়েন্স’ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, আকর্ষণীয় এবং খরচও কম। যানবাহনের ক্ষেত্রে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখার কৌশল
একা ভ্রমণের সময় নিজেকে আত্মবিশ্বাসী দেখানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আত্মবিশ্বাসী থাকলে কেউ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আপনার দিকে এগোবে না। সঙ্গে রাখুন ফার্স্ট-এইড কিট, ওষুধ, ব্যান্ড-এইড এবং ব্যথার স্প্রে।
♦ হোটেলের নম্বর এবং ড্রাইভারের নম্বর বিশ্বস্ত কাউকে জানিয়ে রাখুন।
♦ দামি জিনিস সঙ্গে না রাখার চেষ্টা করুন এবং রাখলে লোক-দেখানো ভুল করবেন না।
♦ টোট ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাকের বদলে ফ্যানি প্যাক বা ক্রস-বডি ব্যাগ নিয়ে ঘুরুন। বিদেশ ভ্রমণে ক্রস-বডি ব্যাগ সামনে রাখা ভালো।
♦ লোকাল সিম কার্ড ব্যবহার করুন, যাতে নেটওয়ার্ক সমস্যা না হয়।
♦ অচেনা কারও দেওয়া অতিরিক্ত খাবার বা পানীয় বারবার করে খেতে বললেও গ্রহণ করবেন না। এমনকি অতিরিক্ত খেয়ে অসুস্থ হবেন না।
♦ নির্জন জায়গায় গেলে পরিবারের কাউকে ট্র্যাক করতে বলুন ও ট্র্যাকিং ডিভাইস ব্যবহার করুন।
লেখা : সাদিয়া সারা