সোমবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকার সাফল্য করোনা বিশ্বে

জামশেদ আলম রনি

টিকার সাফল্য করোনা বিশ্বে

পৃথিবীর সব দেশের মানুষকে কভিড-১৯ টিকার আওতায় আনার ওপরই নির্ভর করছে আমাদের বাঁচা-মরা। যদিও টিকা পৌঁছে দেওয়া একটা জটিল প্রক্রিয়া। তবু বিশ্বব্যাপী ৮৭ কোটিরও বেশি কভিড-১৯ টিকার ডোজ সরবরাহ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, শতকরা ১১ জন কভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করেছেন। তাতে দেশে দেশে দেখা গেছে টিকার সাফল্য।  করোনা বিশ্বের যেসব দেশে টিকার সাফল্য দেখা গেছে, সেসব দেশ নিয়ে এই আয়োজন...

 

সবার চেয়ে এগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

প্রায় ২১ কোটি ডোজ

যুক্তরাষ্ট্রে রবিবার পর্যন্ত ২০ কোটি ৬০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে গত সপ্তাহে গড়ে ৩০ লাখ ২০ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য মে মাসের শেষ নাগাদ যথেষ্ট পরিমাণ করোনা ভ্যাকসিন হাতে থাকবে। ইতিমধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার সঙ্গে চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তি অনুযায়ী ৩০ কোটি ডোজ করোনা টিকা হাতে পাবে তারা। আগামী জুলাই মাসের শেষ নাগাদ সব প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিনিকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে এই পরিমাণ টিকা যথেষ্ট। করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। তবে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরুর পর থেকে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।

এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপও সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসার আরেকটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে রবিবার পর্যন্ত ৩ কোটি ১৬ লাখেরও বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০-এর বেশি মানুষ। করোনার কার্যকর ও নিরাপদ টিকা উদ্ভাবনে কাজ করছে শতাধিক দেশ ও প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা তুলনামূলক বেশি কার্যকর ও নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে প্রাথমিকভাবে সবাই কভিড-১৯ টিকা গ্রহণের পর আগামী নয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে পরবর্তী ধাপের বুস্টার শটের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেজন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ কথা জানান।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কভিড-১৯ রেসপন্স টাস্কফোর্সের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডেভিড কেসলার কংগ্রেস কমিটির এক বৈঠকে বলেন, টিকা গ্রহণের পর ভাইরাস প্রতিরোধের সময়সীমা সম্পর্কে জানার পর এটাই মনে হচ্ছে, সামনে বুস্টার ভ্যাকসিনের প্রয়োজন পড়বে।

তিনি আরও বলেন, ‘যাদের শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ তারাই আগে এ ভ্যাকসিন গ্রহণের সুযোগ পাবে। আপাতত এটুকুই আমাদের ভাবনা’।

 

টিকা গ্রহণের ফলে ব্রিটেনে করোনা নিয়ন্ত্রণে

প্রায় কোটি ডোজ

করোনা প্রতিরোধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি দুটি টিকা অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। সত্তরোর্ধ্ব ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিরা টিকা গ্রহণে গুরুত্ব পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে করোনার টিকা দেওয়ার কাজ শেষ হলো। ৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৯৩ হাজার ৫২৭ জনকে একবার করে টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৯৪ লাখ ১৬ হাজার ৯৬৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেকটা এগিয়ে যুক্তরাজ্য। দেশটি বর্তমানে অনেকটা স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, এটা বিশাল জাতীয় কৃতিত্ব। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস কাজের ফলে এটা সম্ভব হলো। এদিকে জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব প্রাপ্তবয়স্ককে এক ডোজ করে টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করতে চায় ব্রিটেন। ইউরোপের মধ্যে করোনায় সবচেয়ে বেশি মানুষ দেশটিতে মারা গেছেন। যুক্তরাজ্যে খুবই ছোঁয়াচে ও মারাত্মক করোনাভাইরাসের স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। ফলে সেখানে করোনা দ্রুত ছড়িয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকারের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৪ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এ ভাইরাসে। ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে যুক্তরাজ্য। দেশটির সরকার জানিয়েছে, মধ্য এপ্রিল নাগাদ এই বয়সসীমার সবাইকে টিকা গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আর ৯৫ শতাংশ অন্তত এক ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। ১৩ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ধাপের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে যুক্তরাজ্য।

এই ধাপে ৪৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের টিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। করোনা মহামারীতে ইউরোপে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ যুক্তরাজ্য। দেশটিতে ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি মানুষের করোনায় মৃত্যু হয়েছে। তবে দ্রুত টিকাদান এবং দেশজুড়ে লকডাউন আরোপ করে দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়েছে দেশটি। বর্তমানে লকডাউনের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। দোকান, সেলুন, ব্যায়ামাগার এবং রেস্টুরেন্ট ১২ এপ্রিল থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের এনএইচএস-এর বিভাগীয় প্রধান ইমাম ইউনুস দুধওয়ালা বলেন, বেশিরভাগ মুসলিম আলেমরা বলছেন, রোজা রেখে ভ্যাকসিন নেওয়া সম্ভব।

অর্থাৎ ভ্যাকসিন নিলে রোজা ভাঙবে না। বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনই এখন পর্যন্ত নিজের ও প্রিয়জনের জীবনরক্ষার কার্যকর প্রায়োগিক মাধ্যম। ব্রিটেনের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ন্যাশনাল ডিরেক্টর ডা. নিকি কানানি বলেন, ব্রিটেনের সব ধর্ম বিশ্বাসের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত টিকা নিতে।

 

স্বল্প জনসংখ্যার দেশগুলোর সাফল্য

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে কিছু দেশ যা আশা করেছিল, তার থেকে অনেক ভালো করছে। তাদের মধ্যে আছে স্বল্প জনসংখ্যার দেশগুলোও। তেমনি এক দেশ পশ্চিম আফ্রিকার সেশেলস। ১ লাখের বেশি জনসংখ্যার প্রায় ৪৭ শতাংশই কভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করেছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দ্রুত তারা তাদের সব জনসাধারণকে কভিড-১৯ টিকার আওতায় নিয়ে আসবে। আশা করা যাচ্ছে, এ জাতীয় সুরক্ষায় পৃথিবীর প্রথম দেশ হবে সেশেলস। ভূমধ্যসাগরের তীরে স্পেন উপকূলে ব্রিটিশ শাসিত দেশ জিব্রাল্টায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ৩৩ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে প্রাপ্তবয়স্ক ২৫ হাজারের বেশি মানুষ করোনার দুই ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। প্রশাসন কারফিউ উঠিয়ে নিয়েছে, সংক্রমণের হারও শুন্যে নেমে এসেছে দেশটির। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী ইউরোপের মোনাকোর ৬০ শতাংশ মানুষ কভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির কোথাও নতুন করে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। ইউরোপের আরেকটি ছোট্ট দেশ সান মারিনো, যেখানে ১২ এপ্রিল থেকে কারফিউ উঠিয়ে নিয়েছে দেশটির প্রশাসন। ৩৩ হাজারের বেশি জনসংখ্যার দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক সবাই করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেছেন। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশটি। ব্রিটেনের অধীনস্থ দেশ আইল অব ম্যান, ছোট্ট দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক সবাই কভিড-১৯ এর প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মে মাসের টিকার ডোজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টিকা কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ৮৪ হাজারের বেশি জনসংখ্যার দেশটি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের দেশ বারমুডায় করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। দেশটির প্রায় ৫৮ শতাংশ মানুষ কভিড-১৯ টিকার আওতাভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছে। ৩ হাজার জনসংখ্যার দেশটির প্রাপ্তবয়স্ক সবাই টিকা গ্রহণ করায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।  আটলান্টিক মহাসাগরের সেন্ট হেলেনার করোনা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ৪ হাজার জনসংখ্যার দেশটির প্রাপ্তবয়স্কদের সবাই কভিড-১৯ টিকা গ্রহণ করেছেন।

 

উৎপত্তিস্থল চীন এখন স্বাভাবিক

প্রায় ১৬ কোটি ডোজ

চীন ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ১৬ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দিয়েছে। এই হার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ হলেও চীনের লক্ষ্যের তুলনায় এটি এখনো বেশ কম। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, জুনের মধ্যে ৫৬ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে, যা দেশটির মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ। চীনের বিরুদ্ধে টিকার তথ্য গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। উহানে গত কয়েক সপ্তাহে মানুষ লাইন ধরে টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে স্বেচ্ছায় টিকা নিয়েছেন। দেশটির রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের পরিচালক গাও ফু বলেছেন, করোনা প্রতিরোধে টিকার কার্যকারিতার হার বৃদ্ধির জন্য তারা কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে বিভিন্ন টিকার মধ্যে মিশ্রণ ঘটানো। এদিকে টিকা কার্যক্রমের গতি বাড়াতে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সক্ষমতা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া। গাও ফুর বক্তব্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ দেশটি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওতা বৃদ্ধি নয় বরং টিকার কার্যকারিতা কতটা তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিসি, আউটকামস অ্যান্ড প্রিভেনশনের পরিচালক জ্যাসন ওয়াং মনে করেন এ ক্ষেত্রে একবার সীমান্ত উন্মুক্ত হলে বাইরে থেকে আসা মানুষের মাধ্যমে আবারও নাগরিকরা সংক্রমিত হতে পারেন, যা পরবর্তীতে পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

 

সাফল্য দেখাল ইসরায়েল

৫০ লাখ ডোজ

নাগরিকদের দ্রুত টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসরায়েল দারুণ সফলতা দেখিয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ অর্থাৎ ৫৭.৪ শতাংশ প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন এবং ৫৩.৪ শতাংশ মানুষ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। দেশটিতে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর মৃত্যু প্রতিরোধে ৯৮.৯ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। দ্রুত বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে সেখানে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাও প্রমাণিত হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের কাছাকাছি অবস্থানে কেউ নেই।  ইসরায়েলের দ্রুত টিকাদান কর্মসূচির নেপথ্যে রয়েছে দেশটির কার্যকর জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এতে প্রায় ৯০ লাখ নাগরিকের পরিচয়পত্রের পাশাপাশি তাদের ইলেকট্রনিক মেডিকেল ফাইলগুলোও যুক্ত করা হয়েছে। যে কাজটি অন্য দেশগুলো করতে পারেনি। তা থেকে এখন অন্যরাও অনেক কিছু শিখতে পারে। ইসরায়েলের বিপুলসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়ার ফলে বিশেষজ্ঞদের জন্য বাস্তব অভিজ্ঞতা পর্যালোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বলা যায়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে। এমনকি যুক্তরাজ্য থেকে উ™ূ¢ত নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনার বিরুদ্ধেও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ইসরায়েলে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এর দুই সপ্তাহ পর কঠোর লকডাউন জারি করে কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিকে টিকা নিয়ে কিছু সংশয় থাকলেও এখন দ্রুত টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুফল পাচ্ছে দেশটি।

 

তুরস্কে করোনা নিয়ন্ত্রণে

প্রায় কোটি ডোজ

তুরস্কে ১৪ জানুয়ারি থেকে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। এরই মধ্যে দুই ডোজ টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন প্রায় সাড়ে ৮ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী। ৯০ বছরের বেশি বয়স্কদের করোনার টিকা দিয়েছে দেশটি। এদের মধ্যে অনেকেই বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা। চীনের তৈরি সিনোভ্যাক বায়োটেকের টিকার প্রথম ডোজ নেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তুরস্ক শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মী ও সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে করোনার টিকা দেয়। এদিকে ৪০ বছর বয়স্ক নাগরিকদের মে মাসের শেষ নাগাদ অথবা জুনের শুরুতে টিকাদান সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তুরস্ক। এ ছাড়া ২০ বছর বয়সীদের জুলাইয়ের মধ্যে টিকাদানের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেত্তিন কোচা। তিনি দেশটিতে সিনোভ্যাকের টিকা অনুমোদন পাওয়ার পর প্রথম টিকা নেন। জনগণকে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে কোচা বলেন, ‘এ টিকাদান কার্যক্রমটি আমাদের সাধারণ, পুরনো জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন।’ দেশটিতে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৮ লাখ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। ৭৭ লাখ মানুষ গ্রহণ করেছেন দ্বিতীয় ডোজ টিকা। দেশটিতে ৪২ লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ৬০০ জনের বেশি মারা গেছেন। ইতিমধ্যে আরোগ্য লাভ করেছেন ৩৬ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ।

 

আরব আমিরাতে কমল করোনা

প্রায় ৮০ লাখ ডোজ

সংযুক্ত আরব আমিরাত চারটি করোনা টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিনোফার্ম, ফাইজার-বায়োএনটেক, স্পুটনিক ফাইভ এবং অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা।

দেশে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে টিকার উপযোগী সবাইকে টিকা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে সবাই যেন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং সহকর্মীদের টিকা নিতে উৎসাহী করেন সেই আহ্বানও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবদুল রহমান আল ওয়াইস বলেন, ‘বয়স্ক ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা ব্যক্তিদের মধ্যে ৭২ দশমিক ৮৯ শতাংশকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা দেশে করোনা টিকার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের ৫৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ।’

উপযোগী সব বাসিন্দার জন্য ২১ মার্চ থেকে করোনা টিকা গ্রহণ ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দিয়েছে দেশটি। এ অবস্থায় টিকা নিতে নিবন্ধনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আমিরাতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিকসহ বসবাসকারী ১৬ বছর ও তার অধিক বয়সী ব্যক্তিরা দেশটিতে এ পর্যন্ত ৮০ লাখ ৩৯ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া নিয়েছেন।

 

রাশিয়ায় স্পুটনিক- সাফল্য

১৫ কোটি ডোজ

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বে নজির স্থাপন করল রাশিয়া। গত আগস্টে স্পুটনিক-৫ নামে প্রথম করোনা টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দেয় দেশটি। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে মস্কোয় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের মধ্যে এই টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে রাশিয়া। অনুমোদনের পর থেকে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক দেখা দেয়। দ্রুতগতিতে এ টিকা অনুমোদন দেওয়া নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এর কার্যকারিতা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। এরই মধ্যে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা তাদের করোনাভাইরাসের টিকাটি নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, টিকার প্রাথমিক পরীক্ষায় এটি প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ দেখাতে

পেরেছে। এ টিকার বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। বর্তমানে রাশিয়ায় করোনা সংক্রমণ ক্রমাগত কমছে। দেশটির মানুষকে এ পর্যন্ত ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৬১৭ ডোজ করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। যা মোট জনসংখ্যার ৫.৪ শতাংশ। দেশটিতে প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬৬ ডোজ টিকা দেওয়া হয়। 

 

টিকার সুফল পেল সুইজারল্যান্ড

১৯ লাখ ডোজ

সুইজারল্যান্ডে গত ১৯ ডিসেম্বর দেশটির কেন্দ্রীয় ঔষধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সুইসমেডিক আনুষ্ঠানিকভাবে ফাইজার ও বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনা টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে প্রথম ধাপে টিকা দেওয়া কার্যক্রম শুরু হয়। দেশটিতে মানুষকে এখন পর্যন্ত ১৯ লাখ ৬৬ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকার সম্পূর্ণ ডোজ দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৩২ হাজার মানুষকে। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার সাড়ে ৮ শতাংশ। সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিভিশন সিএনএ-এর অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংস্থাটি টিকার অনুমোদন দেওয়ার পর দাবি করেছে, তারাই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে যথাযথ নিয়ম মেনে করোনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে। আবেদন পাওয়ার দুই মাস পর যথাযথভাবে পরীক্ষার পরই টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয় সুইজারল্যান্ড। ফাইজার টিকার অনুমোদন দিতে এত সময় নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্য। নিজেদের ওয়েবসাইটে সুইসমেডিক লিখেছে, ‘হাতে আসা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে এই টিকা কার্যকর। এ ছাড়া সুরক্ষা-সংক্রান্ত পরীক্ষাতেও উতরে গেছে এই টিকা।’

সুইসমেডিকের পরিচালক রাইমুদ ব্রুহিন বলেন, ‘অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্তগুলোর অন্যতম ছিল রোগীর সুরক্ষার বিষয়টি। বিশেষ করে সেসব ক্ষেত্রে, যেখানে টিকার অনুমোদন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর