২৯ মার্চ, ২০২১ ১৪:৪১

বর্জ্য থেকে মিলিয়ন ডলার

রি-সাইক্লিং শিল্পে নজর পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বর্জ্য থেকে মিলিয়ন ডলার

দেশে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের উদ্যোক্তা সংগঠন বিজিএমইএ সরকারকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বলেছেন, দেশে বস্ত্রশিল্পে প্রতি বছর যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়, সেটি ফেলে না দিয়ে পুনর্ব্যবহার করতে চান তারা। সেখান থেকে শিল্পের কাঁচামাল তৈরি করতে চান। পরে বর্জ্য থেকে পাওয়া কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্য রপ্তানি করে আয় করতে চান মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। এ জন্য তারা সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, যাতে বাজেটে বর্জ্য ব্যবহার করে নতুন পণ্য উৎপাদনে সহায়তা থাকে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা মূলত বর্জ্য ব্যবহারের এই পদ্ধতিটিকে রি-সাইক্লিং শিল্প বলে অবহিত করেছেন। তারা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী যে সার্কুলার ইকোনমির বিকাশ ঘটছে, বর্জ্যরে ব্যবহার তারই অংশ। মূলত একটি পণ্য ভোগের পর তা বর্জ্য হিসেবে ফেলে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তোলা কিংবা তা থেকে শিল্পের কাঁচামাল তৈরি করে পণ্য উৎপাদন হচ্ছে সার্কুলার ইকোনমির মডেল।

সংশ্লিষ্টরা উদাহরণ দিয়ে বলছেন, বাংলাদেশে জাহাজভাঙা শিল্প একটি সার্কুলার ইকোনমি বা রি-সাইক্লিং শিল্পের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বিশ্বের বড় বড় জাহাজগুলো ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণার পর বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেগুলো কিনে নিয়ে আসেন চট্টগ্রামে। তারপর সেটি ভেঙে পাওয়া যায় লৌহ ও ইস্পাত শিল্পের মতো ভারী শিল্পের কাঁচামাল। তৈরি করা হয় নতুন পণ্য। একইভাবে বস্ত্র খাতে প্রতি বছর যে লাখ লাখ টন বর্জ্য তৈরি হয়, এখন সেটিই ব্যবহারের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।

বর্জ্য থেকে রি-সাইক্লিং শিল্পের ভবিষ্যৎ : বর্জ্য ব্যবহার করে রি-সাইক্লিং শিল্পে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের ৬টি দেশ মূলত রি-সাইক্লিং শিল্পে এগিয়ে গেছে। জার্মানিতে দৈনন্দিন ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া আবর্জনা অর্থাৎ কাগজ  থেকে প্লাস্টিক বা জৈব-অজৈব বর্জ্য ইত্যাদি সংগ্রহ করে তার ৪৫ শতাংশ পুনর্ব্যবহারের কাজে লাগানো হয়। ইউরোপের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট-এর তথ্য অনুযায়ী ছয়টি দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রায় ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। উপরন্তু এ থেকে যে আয় হয়েছে তার পরিমাণও বিশাল, ২০০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী সেটির পরিমাণ ছিল ১৪৫ বিলিয়ন ইউরো, আর মার্কিন ডলারের হিসাবে ১৯০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রি-সাইক্লিং শিল্পে অর্থের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

বাংলাদেশে পোশাক বর্জ্যরে সম্ভাবনা : বিজিএমইএর প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর পোশাক খাত থেকে প্রায় ৪ লাখ টন টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে কেবল ৫ শতাংশ রি-সাইক্লিং অর্থাৎ পুনর্ব্যবহার হয়। বাকি ৬০ শতাংশ রপ্তানি করা হয় এবং বাকি ৩০ শতাংশ বর্জ্য হিসেবে প্রকৃতিতে ফেলে দেওয়া হয়। বিজিএমইএ বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের টেক্সটাইল বর্জ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মূলত আমদানিকারক দেশগুলো রি-সাইক্লিং করে শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে। দেশে বস্ত্র খাতে পরিকল্পিত রি-সাইক্লিং শিল্প গড়ে তুলতে পারলে এসব বর্জ্য মূলবান সম্পদে পরিণত হবে।

রি-সাইক্লিং শিল্পের জন্য বাজেট সহায়তা : বর্জ্য থেকে পণ্য তৈরি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ বছরের জন্য ১০ শতাংশ প্রণোদনা চেয়েছে গার্মেন্ট শিল্প।  বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রস্তাবে বলেছেন, তারা রি-সাইক্লিং শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশ ক্রয় ও আমদানিতে ১০ শতাংশ ভর্তুকির পাশাপাশি শুল্ক মওকুফ সুবিধা চান। উপরন্তু এ ধরনের শিল্প স্থাপনে সহায়তার জন্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যাংক ঋণের সুব্যবস্থা এবং গ্রাহক পর্যায়ে সুদের হার ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত রাখার সুপারিশও করা হয়েছে প্রস্তাবে। বিজিএমইএর এই প্রস্তাবের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ ঝুটবর্জ্য রপ্তানি হয়ে যায় দেশের বাইরে। দেশের গার্মেন্ট শিল্পগুলো যদি এসব অভ্যন্তরীণ বর্জ্য রপ্তানি না করে রি-সাইক্লিং করে নতুন পণ্য হিসেবে রপ্তানি করে তবে এটি দেশের জন্য সম্ভাবনাময় শিল্প হয়ে উঠতে পারে। ড. মোয়াজ্জেম বলেন, টেকনোলজি আপগ্রেডেশনের জন্য সরকারের একটি তহবিল রয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার। রি-সাইক্লিং শিল্প গড়ে তুলতে  পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা ওই তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারেন। ওই তহবিল থেকে ঋণ নিয়ে মেশিনারিজ আমদানিতে সরকার কিছুটা রাজস্ব সুবিধাও দিতে পারে।

 


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর