শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ : সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি

যতীন সরকার

ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ : সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শুধু ফ্যাসিবাদেরই পরাজয় ঘটেনি, গড়ে ওঠে শক্তিশালী বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক শিবিরও। সাম্রাজ্যবাদীরা, স্বভাবতই সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অভ্যুদয়কে মেনে নিতে পারেনি, সমাজতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য তারা নানা ফন্দি আঁটতে থাকে। তারাই ঠাণ্ডাযুদ্ধ বা স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করে। সেই যুদ্ধাবস্থার ধারায় বিশ শতকের শেষ দশকে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের বিপর্যয় ঘটে, সৃষ্টি হয় তথাকথিত বিশ্বায়নের নামে এককেন্দ্রিক বিশ্বের। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদই নতুন বিশ্বের বিশ্বেশ্বর হওয়ার খায়েশে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।

তবে কোন প্রক্রিয়ায় এটি ঘটতে পারল সে বিষয়টির অনুধাবনের দিকেই আগে নজর দেওয়া দরকার। মনে রাখা দরকার :  সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেওয়াকে লক্ষ্যবিন্দুতে রেখেই বিশ শতকের শেষ পর্বে সাম্রাজ্যবাদ সারা পৃথিবীতে ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের উত্থানে সহযোগিতা করতে থাকে। সে সহযোগিতা শুধু বিশেষ কোনো ধর্মতন্ত্রী সম্প্রদায়ের জন্য নয়। ইহুদি, খ্রিস্টান, হিন্দু, মুসলিম— এ রকম সব পরস্পরবিরোধী মৌলবাদই সাম্রাজ্যবাদের মদদে পুষ্ট হয়ে ওঠে। এক সময়ে সবচেয়ে বেশি মদদ পায় মুসলিম মৌলবাদ। মুসলিম মৌলবাদেরও আছে ও ছিল পরস্পরবিরোধী ধারা। পৃথিবীর মুসলিমদের পুণ্যভূমি যে সৌদি আরব, সেখানকার মৌলবাদও গড়ে উঠেছে এ রকম বিভক্তি নিয়েই। যেমন— সৌদি রাজতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতাধন্য মৌলবাদ ও সৌদি রাজতন্ত্রবিরোধী মৌলবাদ। সাম্রাজ্যবাদ এই উভয় ধারার মুসলিম মৌলবাদেরই পুষ্টি বিধানে সক্রিয় সহযোগিতা করেছে। যে সাম্রাজ্যবাদ সৌদি রাজতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং পুষ্ট হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে, সেই সাম্রাজ্যবাদই সৌদি রাজতন্ত্রবিরোধী ওসামা বিন লাদেন ও তার গোষ্ঠীকেও প্রভূত সহায়তা দিয়েছে। আফগানিস্তানের সোভিয়েত সমর্থিত সমাজতন্ত্রী সরকারকে হঠানোর ব্যাপারেও সাম্রাজ্যবাদ ওসামা বিন লাদেনকেই কাজে লাগায়। লাদেন নিজেই এ কথা স্বীকার করেছেন। ১৯৯৮ সালের ২৭ আগস্ট এএফপির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে লাদেন বলেন, ‘পাকিস্তানি এবং আমেরিকান অফিসারদের দ্বারা প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে আমি পাকিস্তানে আমার প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করি যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র সরঞ্জাম এবং সৌদি আরবের অর্থ নিয়ে...।’

আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সমর্থিত সরকারের হঠানোর কাজ সম্পন্ন হওয়া এবং খোদ সোভিয়েত ইউনিয়নেরই বিলুপ্তি ঘটে যাওয়ার পর সাম্রাজ্যবাদের কাছে মুসলিম মৌলবাদ আর আগের মতো গুরুত্ববহ হয়ে থাকে না। তবে তা না থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মুসলিম মৌলবাদের নববলে বলীয়ান হয়ে ওঠাকে (বিশেষ করে আইএসএর অভ্যুদয় ঘটাকে) অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করা যে কোনোমতেই সম্ভব নয়, তাও একান্ত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এ কারণেই এই মুসলিম মৌলবাদকে মোকাবিলা করার জন্যই একালের সাম্রাজ্যবাদ ইহুদি মৌলবাদকে আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তপোক্ত করে তোলার দিকে নজর দিচ্ছে। যে ইহুদিবিদ্বেষ হিটলারীয় নািসবাদ তথা তখনকার ফ্যাসিবাদের মর্মমূলে ক্রিয়াশীল ছিল, হিটলারের পতনের পর ইঙ্গ-মার্কিন পরাশক্তি সেই ইহুদিদের প্রতি প্রেম বিলিয়েই নয়া ফ্যাসিবাদের পুষ্টি ঘটাচ্ছে। এদের এই ইহুদি প্রেম যে মোটেই কামগন্ধহীন নয়, কিংবা নয় ইহুদি জনগণের প্রকৃত কল্যাণ সাধন—সে কথা বুঝে নিতে খুব বেশি বুদ্ধি খাটানোর প্রয়োজন পড়ে না। তাই আপাতত ইহুদি প্রসঙ্গ স্থগিত রেখে মুসলিম মৌলবাদের দিকেই দৃষ্টি ফেরানো যাক।

লক্ষ্যে অভিন্ন হলেও মুসলিম মৌলবাদের বিভিন্ন ঘরানায় দৃষ্টিভঙ্গিগত ও পদ্ধতিগত কিছু কিছু ভিন্নতা অবশ্যই আছে। সেসব ভিন্নতর কোনো কোনোটি একান্ত স্থূল, আবার কোনো কোনোটি খুবই সূক্ষ্ম। সাম্রাজ্যবাদীরা সেই স্থূল-সূক্ষ্ম ভিন্নতাগুলোকে আপন স্বার্থসিদ্ধির প্রয়োজনে লাগানোর উপায়ও খুঁজে নেয়। তাই দেখি : ‘মডারেট মুসলিম পন্থার অনুসারী’ রূপে চিহ্নিত করে তারা বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী দলটিকে সমর্থন দেয়, আবার আইএস দমনের অজুহাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটানোরও সুলুক সন্ধান করে। জামায়াতে ইসলামীর মতো আইএসও তাদেরই হাতে সৃষ্ট ও পুষ্ট যদিও তবু এক পর্যায়ে আইএস তাদের বিশ্ব কর্তৃত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসেছে। আইএস আজ সাম্রাজ্যবাদের কর্তৃত্বকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজেই সেই স্থানটি দখল করে নিতে তত্পর। জামায়াতের অবস্থান তেমন নয়। জামায়াত বরং ধনতন্ত্রী শোষণ কায়েম রাখার ক্ষেত্রে সর্বত্র ও সর্বদাই সাম্রাজ্যবাদীদের সক্রিয় সহযোগী। এরকম বিশ্বস্ত সহযোগীকে তারা কোনোমতেই দূরে ঠেলে দিতে পারে না। জামায়াতিরা যে ধরনের ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচারণা চালায় এবং ইসলামের যে ব্যাখ্যা তারা হাজির করে, তাতে পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদীদের পক্ষে বেজার হওয়ার মতো কিছুই নেই। জামায়াতিদের ইসলাম-ব্যাখ্যায় সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয় ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে অধিকারকে পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয় ইসলামি বিধান’ বলে নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়ার ওপর। এ বিধান প্রতিষ্ঠাকে লক্ষ্যবিন্দুতে রেখেই পরিচালিত জামায়াতের সব কর্মকাণ্ড।

আইএসসহ সব মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনই পুঁজিবাদী ভাবনার ধারক। শুধু মুসলিম মৌলবাদের কথাইবা বলি কেন, সম্প্রদায় নির্বিশেষে সব ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদই পুঁজিবাদের রক্ষক ও পোষক। তাই কোনো ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের সঙ্গেই পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের আত্যন্তিক বিরোধ থাকতে পারে না। সমাজতন্ত্রী শিবিরের পতনের পর থেকে তো বিভিন্ন দেশে জাতীয়তাবাদের বিকাশও মন্দীভূত হয়ে গেছে। এখন ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদেরই প্রতাপান্বিত অবস্থান। ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদই একুশ শতকের নয়া ফ্যাসিবাদের ধারক ও বাহক।

তবু বিশেষ বিশেষ অবস্থায় নিজের হাতে সৃষ্ট ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের কোনো কোনো ঘরানার সঙ্গে পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। এমনটিই ঘটেছে আইএস-এর ক্ষেত্রে। এরকমটি ঘটার কার্যকারণ সূত্রটিকে অনুধাবনের জন্যই স্মরণ করতে হবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সংঘটিত টুইন টাওয়ারের ঘটনাটির কথা। সেই ঘটনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ (এবং কিছু বাস্তব ও কিছু কল্পনাপ্রসূত) অভিঘাতেই গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ঘটে চলেছে অনেক অনেক অভূতপূর্ব অচিন্তিতপূর্ব ঘটনা ও দুর্ঘটনা। আইএসের পরাক্রান্ত উত্থানও ঘটেছে এ পথ ধরেই।

আইএসের উত্থান প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে আমাদের দেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ কিউবার প্রবীণ বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোর একটি উক্তির প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সম্প্রতি একটি বক্তৃতায় ক্যাস্ট্রো বলেছেন, ‘ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী মোশাদ এবং আমেরিকান রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট বুশের অন্যতম সহযোগী সিনেটর মেককেইন— এ দুজন মিলে মিথ্যা অজুহাতে ইরাককে আক্রমণ করেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে আইএস গঠন করেন যা এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাস্ট্রোর এই বক্তব্য প্রসঙ্গেই এম এম আকাশের পর্যবেক্ষণমূলক মন্তব্য— ‘এই কথাটি যে সত্য তার প্রমাণ পাওয়া যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট ওবামার কথায়। ওবামা বলেছেন, আইএসের উদ্ভব বুশের রণকৌশলের একটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ফল’। অর্থাৎ বুশ চেয়েছিলেন ডিক্টেটর সাদ্দামের পরাজয়, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও জন্ম নিয়েছে আইএস নামক ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। আমরা আর একটু পেছনে গেলে আফগানিস্তানেও সেরকম ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তালেবান দলের সাক্ষাৎ পাই। সেখানেও সোভিয়েতপন্থি শাসক নজিবুল্লাহকে তাড়াতে গিয়ে জন্মলাভ করেছে তালেবান এবং আল কায়েদা। সিরিয়ায় আসাদকে তাড়াতে গিয়ে জন্মলাভ করেছে আইএস। এসব বিপদের গোড়ায় রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করার হীন প্রয়াস।’

[‘শিক্ষাবার্তা’ (ঢাকা) জুলাই-আগস্ট ২০১৬]

এই হীন প্রয়াস শুধু মুসলিমদের অবলম্বিত ধর্মতন্ত্র নিয়েই নয়, ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা যে ধর্মতন্ত্রী সম্প্রদায়ের অন্তর্গত সেই খ্রিস্ট ধর্মকে নিয়েও। তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রনায়ক জুনিয়র বুশ ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরপরই ঘোরতর খ্রিস্টান হয়ে উঠেছিলেন। তার বক্তৃতা-বিবৃতিতে থাকত বাইবেলের কোটেশন। বুশের চিন্তা-ভাবনায় বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতা বিল গ্রাহাম ও তার পুত্র ফ্রাঙ্কলিন গ্রাহামের শিক্ষা। ফ্রাঙ্কলিনের মতে ইসলাম মানেই সন্ত্রাস, ইসলাম হলো ‘দুষ্টদের ধর্মতন্ত্র’। সে সময়কার বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালের ২৭ মার্চ ইভানজেলিক্যাল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ১৪১ জন নেতাকে নিয়ে হোয়াইট হাউসে একটি গোপন বৈঠক বসেছিল। খ্রিস্টীয় মৌলবাদের প্রবক্তাদের মধ্যে ছিলেন জেরি ফলওয়েল আলবার্ট মেহলার, ডি জেমস কেনেডি এবং এরকম আরও কয়েকজন। তারা সবাই ছিলেন কট্টর ইসলামবিরোধী। সবচেয়ে কট্টর ছিলেন জেরি ফলওয়েল। একবার তো এই ফলওয়েল প্রকাশ্যেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)কে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে বসেছিলেন এবং তীব্র প্রতিবাদের মুখে তাকে ক্ষমা চাইতেও হয়েছিল। খ্রিস্টান ধর্মের জন্য ইসলামই বড় চ্যালেঞ্জ— এরকম অভিমত প্রকাশ করেছিলেন ডি জেমস কেনেডি। ইরাকি মুসলমানদের বাইবেল শিক্ষা দিয়েই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করতেন ‘সাদার্ন ব্যাপিস্ট থিওলজিক্যাল সোসাইটি’র সভাপতি আলবার্ট মেহলার।

সে সময়ে জুনিয়র বুশের নানা কথায় খ্রিস্টীয় মৌলবাদীদের ইসলামবিরোধী বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছিল। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছিলেন, ‘আমেরিকার বর্তমান লড়াই ভালো ও মন্দ অর্থাৎ খ্রিস্টান ও শয়তানের মধ্যে লড়াই।’ ‘শয়তান’ বলতে যে তিনি মুসলমানদেরই বুঝিয়েছেন,—সবাই এ কথা বুঝে নিয়েছিলেন। খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে যাদের তিনি শয়তান আখ্যা দিয়েছিলেন, সেই মুসলমানরা নিশ্চয়ই তা বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতে পারেনি। এই মেনে না নেওয়ারই সুস্পষ্ট অভিব্যক্তি আইএসসহ বিভিন্ন মুসলিম মৌলবাদী গোষ্ঠীর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে।

একুশ শতকের শুরু থেকে বিশ্বব্যাপী যে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ক্রমবিস্তার ঘটে চলছে তার জন্য কি এককভাবে মুসলমানরাই দায়ী? জুনিয়র বুশের কট্টর ইসলামবিরোধী খ্রিস্টীয় মৌলবাদই কি মুসলিম জঙ্গিবাদের প্রসারে অনুঘটকের কাজ করেনি? ইহুদি মৌলবাদ ও হিন্দু মৌলবাদ প্রসারের দায়ও কি বুশের ওপরই বর্তায় না?

কোনো সন্দেহ নেই, সাম্রাজ্যবাদের প্রবর্তনাতেই একালের সব ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদের উত্থান ও ভয়াবহ রূপপ্রাপ্তি। এই ভয়াবহতার হাত থেকে সাম্রাজ্যবাদীদেরও রেহাই মিলছে না। তাই বলে ধর্মতন্ত্রী মৌলবাদকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভেবে বসাও হবে একান্তই ভ্রান্তিবিলাস। সেই ভ্রান্তিবিলাস থেকে আমাদের মুক্ত থাকতেই হবে। সমাজতান্ত্রিক শিবিরে বিপর্যয় ঘটার পর পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদ যেসব অপতত্ত্বের আশ্রয় নিয়ে বিশ্বেশ্বর হয়ে উঠতে চাইছে, সেসবের স্বরূপ সম্পর্কেও অবহিত হতে হবে। খ্রিস্টীয় ও মুসলিম মৌলবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদ— এই ত্রয়ীর টানাপড়েন তথা দ্বান্দ্বিকতার প্রকৃতিটিকেও ভালো করে বুঝে নিতে হবে। তাহলেই ধর্মের নাম নিয়ে যা কিছু চলছে, সেসব যে ফ্যাসিবাদেরই নতুন রূপের প্রকাশ ছাড়া আর কিছু নয়, সে সম্পর্কেও কোনো সন্দেহ পোষণের অবকাশ থাকবে না। সেই সন্দেহ ঘোচাতে পারলেই ভ্রান্তিবিলাস থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃত সত্যের আলোতে আমাদের চিত্ত উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। অতঃপর সে পথেই হোক আমাদের অভিযাত্রা।

     লেখক : শিক্ষাবিদ।

সর্বশেষ খবর