বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

বন্ধ হোক ঈদ যৌতুক

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

বন্ধ হোক ঈদ যৌতুক

পবিত্র রমজান মাস প্রায় শেষ। মহিমান্বিত এ মাসে রোজা রাখা যেমন ইবাদত ছিল, তেমনি ইফতার করা/করানোও  ছিল মহান ইবাদত। কাউকে উপহার দেওয়া এবং আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করাও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এ ইবাদতগুলোকে বিভিন্ন কুপ্রথার রূপ দিয়েছে। যে জিনিসটি ছিল একান্তই ঐচ্ছিক তাকে করা হয়েছে বাধ্যতামূলক। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে বাবার বাড়ি থেকে সেমাই চিনি না আনতে পারলে কিংবা শ্বশুরপক্ষের সব আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত করে না খাওয়াতে পারলে শ্বশুরালয় হয়ে ওঠে যেন একখণ্ড নরক। টিপা-টিপ্পনির তো কোনো শেষই থাকে না। কোনো পরিবার এ ধরনের কুপ্রথা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে চাইলে তাদেরও রেহাই নেই। শুনতে হয় নানান ধরনের উসকানিমূলক কথাবার্তা। তাদেরই কিছু প্রাণের আত্মীয় তাদের সমালোচনায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে যান। হিংসুকের হিংসা ও নিন্দুকের নিন্দার তীরে বিদ্ধ হয়ে জর্জরিত হতে হয় যৌতুকবিরোধী পরিবারগুলোকেও। এ যেন যৌতুকবিরোধী পরিবারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন আমাদের মাঝে বাস করা হিংসুক ও নিম্ন মানসিকতার লোকগুলো।

অথচ আর্থিক লেনদেনের মৌলিক বিধান সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ কর না এবং এ উদ্দেশ্যে বিচারকের কাছে  এমন কোনো মামলা কর না যে মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে গ্রাস করার গোনাহে লিপ্ত হবে।’ (সূরা বাকারা : ১৮৮)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কর না, তবে পারস্পরিক সন্তুষ্টিক্রমে কোনো ব্যবসা করা হলে (তো জায়েজ)। এবং তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা কর না। নিশ্চিত জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সূরা নিসা : ২৯)।

উল্লিখিত আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহতায়ালা অন্যের সম্পদ তার অসন্তুষ্টিক্রমে চাপ সৃষ্টি করে ভোগ করতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং এভাবে সামাজিকতার নামে অসামাজিক চাপ সৃষ্টি করে কারও থেকে কিছু আদায় করা হারাম। হাদিসে পাকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : ‘কোনো মুসলমানের সম্পদ তার আন্তরিক সম্মতি ব্যতীত হস্তগত করলে তা হালাল হবে না।’ (বায়হাকি খ. ৮, পৃ. ৩১৬, হাদিস নম্বর : ১৬৭৫৬)।

তবে কেউ খুশি মনে কিছু দিতে চাইলে তা নেওয়া জায়েজ হবে। পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তুমি তাঁরই (আল্লাহর) মহব্বতে সম্পদ ব্যয় করবে আত্মীয়-স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য। (সূরা বাকারা : ১৭৭)।

যেহেতু যৌতুক মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তাই যৌতুকের নির্দিষ্ট সময়গুলোতে হাদিয়া লেনদেন না করাই ভালো। আপনি আপনার সন্তানকে সামর্থ্য থাকলে দুনিয়াটাও উপহার দিতে পারেন। কিন্তু তা হতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। তাতে কোনো ধরনের লোক দেখানো অপব্যয় যাতে স্থান না পায়। মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, আর (তোমরা) কোনোভাবেই অপব্যয় কর না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার প্রতিপালকের খুবই অকৃতজ্ঞ। (সূরা বনি ইসরাঈল, ২৬-২৭)।

আপনি যৌতুক গ্রহণ না করলে অনেকেই মুচকি হেসে আপনাকে অনেক উসকানিমূলক মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে। কেউ পেছনে সমালোচনা করবে, কেউ সামনেই অপয়া অলক্ষ্মী বলবে। ওদের অন্যর্থক বকনিতে কান দেবেন না। ওরা নিজেদের ব্যক্তিত্বহীনতা ও হিংসার দরুন এমন করে। যার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আবু হুরাইরাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে শুকনো কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। অপর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সে-ই মুসলিম, যার জিহ্বা ও হাত থেকে সব মুসলিম নিরাপদ এবং সে-ই প্রকৃত মুহাজির, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে ত্যাগ করে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন এবং তাঁর বান্দাদের সম্মান নিয়ে খেলা করা থেকে বিরত রাখুন। আমিন।

লেখক : প্রাবন্ধিক, গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর