পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাণ্ডব চালিয়েছে বখাটেরা। বর্ষবরণ করতে এসে সংঘবদ্ধ বখাটে কিছু যুবকের হাতে অন্তত ১৫ জন নারী শারীরিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এতে বাধা দেওয়ায় বখাটেদের হামলায় আহত হয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখা সভাপতি লিটন নন্দীসহ অন্তত আটজন।
পয়লা বৈশাখের দিন মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ তাণ্ডবলীলা। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের সামনে এসব ঘটনা ঘটলেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে তারা। এ ছাড়া ঢাবি প্রক্টরকে ঘটনার বিষয়ে বার বার অবহিত করা হলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এদিকে নারীর শ্লীলতাহানি ও যৌন হয়রানির প্রতিবাদে এবং এসব ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে গতকাল মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যার আগমুহূর্তে ঢাবিতে বর্ষবরণ করতে আসা নারীদের ওপর কিছু বখাটে যুবক সংগঠিতভাবে যৌন হয়রানি করে। বিভিন্ন স্থানে অন্তত সাত থেকে আটটি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ ছিল টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের সামনে। টিএসসি এলাকার নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী লিটন নন্দী বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কয়েকজন সঙ্গীসহ শাহবাগ থেকে টিএসসির দিকে আসছিলাম। এ সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের সামনে এসে একজন ২৫ বছরের নারীকে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। ওই নারীর ওপর কয়েকজন যুবক চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে নির্যাতন চালাচ্ছিল। আমরা চারজন গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাই। এর কিছুক্ষণ পর ওই স্থান থেকে একটু দূরে আরেকজন নারীর চিৎকার শুনতে পাই। সেখানে গিয়ে দেখি আরেক নারীকে তার ছোট্ট শিশুর সামনেই একদল যুবক ঘিরে ধরে পাশবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। যুবকদের কয়েকজন তার স্বামীকে মারধর করছিল। ওই নারীকে উদ্ধার করতে গিয়ে আমরা বখাটেদের প্রতিরোধের মুখে পড়ি। তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় পেছন থেকে আমাদের ওপর হামলা করে বখাটেরা। এতে আমার হাত ভেঙে যায়।’ ওই ঘটনার সময় দুজন বখাটে যুবককে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এদিকে এসব ঘটনার জন্য পুলিশের নির্লিপ্ততাকে দায়ী করেছেন ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এ এম আমজাদ। তিনি বলেন, কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ আরেকটু তৎপর হলে এসব ঘটত না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে উদ্যানের গেট বন্ধ করার কথা বললেও পুলিশ গেট বন্ধ রাখেনি। নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে পুলিশকে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। আমরা কয়েকটি ঘটনার কথা শুনেছি, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হবে।’
ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ : এদিকে শ্লীলতাহানি ও যৌন হয়রানির ঘটনার বিচার চেয়ে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। এ ছাড়া বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে ‘বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। গতকাল সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনের সামনে থেকে প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এরপর মিছিল বের করে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাবি শাখা। এতে লিখিত বক্তব্যে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম জিলানী শুভ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও মিলন চত্বরে পুলিশের অবস্থানের কাছাকাছি জায়গায় এ ঘটনা ঘটে, কাছেই পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা ছিল। তার পরও পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে টালবাহানা করছে। গড়িমসি না করে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ দায়সারা বক্তব্য দিয়ে একে অন্যের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি দেখায়, যা পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি হাসান তারেক, সহ-সভাপতি মারুফ বিল্লাহ তন্ময়, দফতর সম্পাদক আল আমিন, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক সুমন সেনগুপ্ত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী ও সাধারণ সম্পাদক তুহিনকান্তি দাশ প্রমুখ।
ওসিকে প্রত্যাহার ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি : নির্যাতন ঘটনার সময় ঢাবি প্রক্টর এ এম আমজাদ তার কক্ষে বসে থাকলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ছাত্র ইউনিয়নের নেতাসহ বিভিন্ন ছাত্র প্রক্টরকে টিএসসি এলাকায় যৌন হয়রানির ঘটনার বিষয়ে অবহিত করলেও প্রক্টর ঘটনাস্থলে যাননি। এ সময় তিনি দাবা খেলছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তুহিনকান্তি দাশ বলেন, “আমরা ঘটনার বিষয়ে জানাতে প্রক্টরের কক্ষে গিয়ে তাকে দাবা খেলতে দেখি। ঘটনার বিষয়ে অবহিত করার পর তিনি আমাদের বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গেলে কি এসব বন্ধ হতো?’” এদিকে ঘটনাস্থল টিএসসি চায়ের দোকানের সামনে, উদ্যানের গেটে, মিলন চত্বরসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ এবং পাঁচটিরও বেশি সিসি ক্যামেরা ছিল। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের পাশে উদ্যানের গেটেই ছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কন্ট্রোল সেল। কিন্তু ঘটনার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগ এবং শাহবাগ থানার ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো।
শিরোনাম
- হায়দরাবাদের কাছে হেরে প্লে-অফ থেকে ছিটকে গেল লখনৌ
- এক হাজার ফিলিস্তিনিকে বিনা খরচে হজের আমন্ত্রণ সৌদির
- বাংলাদেশকে হারিয়ে আরব আমিরাতের ইতিহাস
- বরিশাল সিটির মেয়র ঘোষণার মামলার আপিল করলেন ফয়জুল করিম
- টানা ৫ দিন বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দিল আবহাওয়া অফিস
- তামিম-হৃদয়ের ব্যাটে বাংলাদেশের রানের পাহাড়
- ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’ চালু করবে বিআরটিসি
- যে কারণে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে নেই সেঞ্চুরিয়ান ইমন
- নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কারগুলো গুরুত্ব দিচ্ছি: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
- এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ মামলায় দুইজনের সাক্ষ্য গ্রহণ
- ৩১ দফা বাস্তবায়ন হলে সব ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত হবে: মীর হেলাল
- অভিনেতা চঞ্চলের সঙ্গে ছবি : ক্ষমা চাইলেন ইশরাক
- পতিত ফ্যাসিস্ট আসিফদের থামাতে পারে নাই : হাসনাত
- আজকালের মধ্যে ইশরাকের শপথ না হলে বৃহত্তর আন্দোলন করতে হতে পারে : সালাহউদ্দিন
- টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে নেই সেঞ্চুরিয়ান ইমন
- জবিতে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসব
- এশিয়া কাপ থেকে ভারতের নাম প্রত্যাহারের খবর ভিত্তিহীন : বিসিসিআই
- শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর : উপদেষ্টা
- যুবলীগ নেতার দখল করা ফ্লাট উদ্ধারের দাবি নারীর
- ‘৫৪ বছরে নদীর যে ক্ষতি হয়েছে তা এক দেড় বছরে সমাধান সম্ভব না’
বখাটেদের তাণ্ডব, শ্লীলতাহানি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর