আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজারে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু জানাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দীপক চন্দ্র সাহা। তবে দুর্ধর্ষ এই ডাকাতি ও হত্যার দুই সপ্তাহ পার হলেও ঘটনার মূল হোতাদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ এখন পর্যন্ত সাতজনকে আটক করেছে। এর মধ্যে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে একজন। মূল হোতারা গ্রেফতার না হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও আশপাশের এলাকাবাসী এখনো আতঙ্কে আছেন।
অবশ্য তদন্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আশুলিয়ার ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাটি নিছক ডাকাতি নয়। এর মাধ্যমে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি ঘোলাটে করা, পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব জানান দেওয়া ও বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃত জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের মুক্ত করতে টাকা সংগ্রহই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। তিনি জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জঙ্গি সংগঠনের আরও নেতা ও কথিত ডাকাতির মূল হোতাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। এদিকে গ্রেফতারকৃত বাবুল সরদার ও মিন্টু প্রধানকে রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতে তুলে পুনরায় সাত দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বাবুল সরদার ও মিন্টু প্রধানের কাছ থেকে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ডাকাত দলে ১০ থেকে ১৫ জন ছিল, যাদের বেশির ভাগের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, জঙ্গিদের এ দলটি কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় ডাকাতির পরিকল্পনা করে কয়েক মাস আগে। এরই অংশ হিসেবে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্যরা প্রথমে ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মী সোহেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তার কাছ থেকেই তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে। ঘটনার দিন তাদের একটি দল ছদ্মবেশে ব্যাংকের আশপাশে অবস্থান নিয়ে জনসাধারণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজর রাখে। আর ছয়জনের একটি দল ব্যাংকে ঢুকে ডাকাতি ও হত্যায় অংশ নেয়। আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, আসামিরা সবাই জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্য। তারা অনেক দিন ধরেই সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় বড় ধরনের কিছু ঘটানোর জন্য পরিকল্পনা করছিল। এই দলে আরও কিছু সদস্য রয়েছে। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হাবিবুর রহমান বলেন, ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার বিষয়টি আসলে কী? তা জানতে আমরা তদন্ত করছি। তবে খুব শিগগিরই মূল হোতাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব। সূত্র জানায়, কমার্স ব্যাংকের ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ডাকাতির কোনো দৃশ্য পায়নি পুলিশ। এ কারণে সার্ভিস-১ নামের অপারেটর প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে সিসিটিভি কারসাজির সন্দেহে কম্পিউটার অপারেটর হারুন অর রশীদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাজধানী ঢাকায় হারুন-অর-রশীদের একটি কম্পিউটারের দোকান ছিল। পুলিশের দাবি তিনি তথ্যপ্রযুক্তি জানা লোক। প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার শাখায় হানা দেয় ডাকাত দল। তাদের হামলায় ব্যাংকের ভিতরে ম্যানেজার, দুই নিরাপত্তাকর্মী, এক গ্রাহক এবং বাইরে প্রতিরোধকারী চারজন প্রাণ হারান। ভয়ঙ্কর সেই আক্রমণের মুখেও তাদের ধাওয়া করে এলাকাবাসী মোটরসাইকেলে পালানোর সময় তিন ডাকাতকে ধরে ফেলেন। এ সময় আসিফ নামের এক ডাকাত ঘটনাস্থলেই গণপিটুনিতে নিহত হয়।