সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চার লেনের মহাসড়কে বদলে যাবে সিলেট

যান চলাচল খুলে দেওয়া হবে ২০১৯ সালেই

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে চীনের সঙ্গে। এ চুক্তির পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন ও পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেছেন সিলেটের মানুষ। মহাসড়কটি শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রে নয়, এর মাধ্যমে শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়া সিলেটে ঘটতে পারে শিল্পবিপ্লব। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে মহাসড়কটি অর্থনৈতিক করিডরের ভূমিকাও পালন করতে পারে— এমনটা প্রত্যাশা ব্যবসায়ী নেতাদের। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনের দাবি সিলেটের মানুষের দীর্ঘদিনের। ৯ অক্টোবর চীনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে পূরণ হতে চলেছে এ দাবি। প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২২৬ কিলোমিটার চার লেনের এই মহাসড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা শিগগিরই। আর প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ২০১৯ সালের শুরুতেই যান চলাচলের জন্য চার লেনের সড়কটি খুলে দেওয়ারও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। চার লেনের প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কমে আসবে ঢাকার সঙ্গে সিলেটের যাতায়াতের সময়। এতে একদিকে সিলেটে যেমন বাড়বে পর্যটকের সংখ্যা, তেমন বিকাশ ঘটবে পর্যটনশিল্প এবং এ খাতের ব্যবসার— এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। এ ব্যাপারে সিলেট এক্সেলসিয়র রিসোর্ট ও পর্যটন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান শাহজামাল নূরুল হুদা বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেন হলে কমে আসবে যাতায়াতের সময়। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতির কারণে বাড়বে পর্যটকদের আগমন। এতে সিলেটের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসারও প্রসার ঘটবে। সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্টহাউস ওনার্স গ্রুপের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুমাত নূরী জুয়েল বলেন, সিলেটে প্রতি বছর নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র আবিষ্কৃত হচ্ছে। এতে দেশীয় পর্যটকের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। মহাসড়ক চার লেন হলে সিলেটের পর্যটনের প্রকৃত বিকাশ ঘটবে। এ ছাড়া সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সঙ্গে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কও চার লেন করা গেলে যারা ভারতের শিলংয়ে বেড়াতে যান তাদেরও সিলেটের প্রতি আকৃষ্ট করা যাবে। এতে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত হলে শুধু যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন হবে না, এর সঙ্গে এগিয়ে যাবে সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পায়ন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও মহাসড়কটিকে অর্থনৈতিক করিডর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি সালাহ উদ্দিন আলী আহমদ। তিনি বলেন, সিলেটে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ইলেকট্রনিকস সিটি হচ্ছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কটি চার লেন হলে সিলেটের প্রবাসীরাও বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। এতে শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়া সিলেট অনেক এগিয়ে যাবে। এ ছাড়া ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই মহাসড়কটিকে অর্থনৈতিক করিডর হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। চার লেনের মহাসড়ক হলে সিলেটে পর্যটনশিল্পের যে বিকাশ ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে, তাতে অর্থনৈতিক গুরুত্বের দিক থেকে গার্মেন্টস খাতকেও এটি ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে প্রয়োজন পড়বে জমি অধিগ্রহণের। এই অধিগ্রহণে কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মহাসড়কটির কাজ শেষ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এজন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের খেয়াল রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেন।

সর্বশেষ খবর