স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে গঠিত হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। প্রথম সভাপতি প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ আলি। ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিসিবির সভাপতি ছিলেন আরও ১৪ জন। তাদের কেউই ক্রিকেটার ছিলেন না। ফারুক আহমেদ আপাদমস্তক একজন ক্রিকেটার। জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে তার অধিনায়কত্বে আইসিসি ট্রফিতে অংশ নেয় বাংলাদেশ। জাতীয় দলের পক্ষে ৭টি ওয়ানডেতে একটি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন। ক্রিকেট দলের তিন বারের নির্বাচক। প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিসিবির সভাপতি হয়েছেন। যে কোনো ক্রিকেটারের জন্য যা সর্বোচ্চ সম্মান। বিসিবির ১৫তম সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে গর্বিত ফারুক। তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বিত। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। ১৯৮২ থেকে ২০২৪ সাল, ৪২ বছরের বেশি ক্রিকেটে সম্পৃক্ত। আমি খেলেছি, অধিনায়কত্ব করেছি। নির্বাচক কমিটিতে ছিলাম। এবার এসেছি সভাপতি হিসেবে।’
ফারুক যখন সভাপতি হয়েছেন, ক্রিকেট বোর্ড তখন দুর্নীতির আখরায় পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিস্বার্থে দেশের ক্রিকেট উন্নতি থমকে দাঁড়িয়েছে। কোণঠাসা হয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেট। আগের সভাপতির ইচ্ছাতেই পরিচালিত হয়েছে বিসিবি। নতুন সভাপতি চাইছেন গোটা দেশের ক্রিকেট কাঠামোর সিস্টেমের আমূল পরিবর্তন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিকড় থেকে পরিবর্তন না আনলে ক্রিকেট উন্নয়ন সম্ভব নয়। ফারুক বলেন ‘বাংলাদেশের যতটা উন্নয়ন দরকার ছিল, আমরা ততটা পারিনি। আমাদের সাফল্য আবার কম নেই। সুনির্দিষ্টি কিছু জায়গায় আমাদের আরও উন্নতির দরকার ছিল। আমরা পারিনি। আমাদের দায়িত্ব হবে, এ সিস্টেমটাকে পুনর্গঠন করা। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই, দেশের ক্রিকেটটাকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে। এ জন্য শিকড় থেকে সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে। সিস্টেমের পরিবর্তনের মানে, গোটা দেশের ক্রিকেট কাঠামো, উইকেটসহ অপরাপর বিষয়গুলোর পরিবর্তন আনা।’ আগের সভাপতি ও কতিপয় পরিচালক নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে বিসিবি চালিয়েছেন। এসব স্বৈরাচারী কার্যকলাপের প্রতিবাদে ২০১৬ সালে পদত্যাগ করেন ফারুক। দুর্নীতির কথা মাথায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে বদ্ধপরিকর নতুন সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ডে একটা সিস্টেম চালু করতে হবে, যেখানে আমরা দুর্নীতি কমাতে পারব। আমার মেয়াদ কতদিন হবে, জানি না। তবে এ নিশ্চয়তা দিতে পারি, যতদিন থাকব, সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে জিনিসগুলোর দিকে খেয়াল রাখা।’
বিপিএল, জাতীয় ক্রিকেট লিগ চালুর পর গুরুত্বহীন হয়েছে একসময়কার জমজমাট ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ। আগে প্রিমিয়ার ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দল গঠন করা হতো। নতুন সভাপতি বলেন, ‘প্রথমেই মাইক্রো-ম্যানেজমেন্টে যাব না। জাতীয় দলের খেলা বাদ দেওয়া যাবে না। জাতীয় দল প্রাধান্য পাবেই। সঙ্গে গেম ডেভেলপমেন্ট, এইচপি, ফ্যাসিলিটিজ, গ্রাউন্ডস- এমন চার-পাঁচটা জায়গা আছে, যেগুলো ক্রিকেটের উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেসব জায়গায় আলাদা করে ফোকাস করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্নতি করতে হবে। উইকেট ভালো করতে হবে। এইচপি দল ভালো করতে হবে বা ‘এ’ দলের সফর বেশি করতে হবে।’
বাংলাদেশের দুই আলোচিত ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল এবং কোচ চন্ডিকা হাথুরাসিংহের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন সভাপতি। সাকিবের বিষয়ে বলেন, ‘বোর্ডের কিছু পলিসি থাকে। সাকিবের বিষয়ে পলিসি কি হওয়া উচিত, পরিচালকদের সঙ্গে আলাপ করব।’ তামিম সম্পর্কে বলেন, ‘আমার মনে হয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যতজন বিশ্বমানের ক্রিকেটারের জন্ম হয়েছে, তামিম তাদের অন্যতম সেরা। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে আরও দুই বছর খেলায় দেখতে চাই। যদি না খেলে, তাহলে বোর্ডে দেখতে চাই। কেননা তার মতো ক্রিকেটারের মাথা থেকে অনেক আইডিয়া আসবে।’ হাথুরাসিংহের চুক্তি দেখে তার ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত করা হবে জানান বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না হাথুরাসিংহের চুক্তিতে কি আছে। সেটা দেখব। আমি আগে যে অবস্থানে ছিলাম, এখনো সেই অবস্থানেই আছি।’ এর অর্থ, পাকিস্তান সিরিজের পর হয়তো সরে দাঁড়াতে হবে হাথুরাসিংহেকে।
বিসিবি সভাপতি নিজে একজন ক্রিকেটার। পরিচালনা পর্ষদের অনেকের ব্যাকগ্রাউন্ড ক্রিকেট। তিন-চারজন আছে, যারা এক সময় ক্রিকেট খেলেছেন। বিসিবির সভাপতির কার্যক্রমের প্রথম দিন পরিচালকের অনেকেই ছিলেন অনুপস্থিত। আগের বোর্ডের মাত্র আটজন উপস্থিত ছিলেন। নতুন দুজন- বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। পরিচালনা পর্ষদের কার্যক্রম নিয়ে নতুন সভাপতি বলেন, ‘যাদের কাজ করার আগ্রহ কম, শুধু বোর্ড পরিচালক হিসেবে থাকতে চায়, এই পরিচয় এলে গর্ব করার মতো কিছু হবে না। তাদের কাছ থেকে আশা করব, তারা সবাই দারুণ সামর্থ্যবান। তারা যদি একটু চেষ্টা করে, সময় দেয়, আমি বিশ্বাস করি ভালো একটা জায়গায় আমরা যেতে পারব।’