ফরিদপুর চরভদ্রাসনের চর ঝাউকান্দা ইউনিয়নের দুর্গম দুই চরের নাম রেহি গোপালপুর ও চর মির্জাপুর। ১৫ বছর আগে এই স্থানে ছিল কাশবন আর জঙ্গল। ছিল না কোনও জনবসতি। সেই সময়ে ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা জীবন মোল্যার পুত্র আলাল মোল্যা (৫৬) স্বপ্ন দেখেন ওই জঙ্গলে ফসল আবাদের।
ওই সময়ে জমির বিভিন্ন মালিকদের কাছ হতে বছরে পাঁচ হাজার টাকা করে বিঘা ভাড়া নিয়ে ১৫০ একর জমি নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন আলাল মোল্যা। এখন ওই স্থানে নেই কোনও কাশবন, রয়েছে শুধু সবুজের সমারোহ। বর্তমানে তিনি নিজে তিনশত একর জমি চাষাবাদ করেন এবং একশত একর জমি বরগা প্রদান করেছেন।
ওই চরে রয়েছে তার ভাওর বা বাওর বাড়ি (চরঞ্চালরে অস্থায়ী বাড়ি)। সেখানে থেকেই চাষাবাদ করেন তিনি। আলাল মোল্যা বলেন, চলতি বছর তিনি ৯৯ একর ভূট্টা, ১৭ একর কালিজিরা, ৩৬ একর সরিষা, ৩২ একর ধনিয়া, ৬ একর আলু, ৩৬ একর কলা এবং ৭৪ একর খেসারি ও মটর কলাই আবাদ করেছেন।
এর মধ্যে ৯৯ একর ভূট্টা আবাদে বীজ বাবদ ৯ লাখ টাকা, সেচ বাবদ ৯ লাখ টাকা, চাষ বাবদ ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শ্রমিক বাবদ ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, সার বাবদ ২২ লাখ টাকা, ভাঙ্গানো বাবদ ৫ লাখ টাকা, জমির ভাড়া বাবদ ১৫ লাখ টাকা অর্থাৎ মোট ৮৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হবে। ভালো ফলন হলে বিঘায় ত্রিশ মণ ভূট্টা পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য এক হাজার টাকা দরে ৯০ লাখ টাকা আসবে। ভূট্টা আবাদ থেকে উত্তোলন পর্যন্ত ছয় মাস সময় লাগে। অর্থাৎ ছয় মাসে তিনি ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা লাভ পাবেন।
এছাড়া ১৭ একর কালিজিরায় খরচ হয়েছে ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় তিন মণ করে ফলন হলে বিক্রী করা যাবে সাত হাজার টাকা দরে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাঁচ মাসে ৯৫ হাজার টাকা লাভ পাবেন।
সরিষায় খরচ ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বিঘায় চার মণ ফলন হলে এবং ২৫০০ টাকা দরে বিক্রী হলে হবে এগারো লাখ টাকা। লাভ থাকবে পঁচাশি হাজার টাকা। ধনিয়ায় খরচ হয়েছে ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিঘায় ৬ মণ ফলন হিসেবে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রী হলে হবে ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। লাভ থাকবে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আলুতে খরচ হয়েছে ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বিঘায় আট মণ হিসেবে ফলন হলে ৮০০ টাকা দরে বিক্রী হলে আসবে ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকা। লাভ আসবে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা। খেসারি ও মটর কলাই চাষে খরচ হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। খরচ বাদে ৩ লাখ টাকা আসবে বলে ধারণা করেন আলাল মোল্যা। আর এবছরই তিনি প্রথম কলা চাষ করেছেন। তাই আয়ের বিষয়ে বলতে পারেননি।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে ও ফলন ভালো হলে সব মিলিয়ে এক মৌসুমে তিনি আয় করবেন ১২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। তিতি চাষের জমি বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুনুর রহমান বলেন, আলাল মোল্যা আমাদের উপজেলার একজন আদর্শ কৃষক। আমরা তার চাষাবাদে কোনও প্রকার সমস্যা থাকলে পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি সহযোগিতা করে আসছি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ