মিষ্টি খাওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটির জেরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মওলানা ভাসানী হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় বুধবার দুপুর আড়াইটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী চলে এই সংঘর্ষ।
সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ অন্তত ৬৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সাভারের একটি বেসরকারি মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর ২টার দিকে বটতলার বেলালের দোকানে মিষ্টি খেতে যায় বঙ্গবন্ধু হলের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মী দ্বীপ বিশ্বাস (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ) ও আলিফ হাসান দীপু (বাংলা বিভাগ)। এ সময় মওলানা ভাসানী হলের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী সৌরভ কাপালীর (ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ) সঙ্গে ধাক্কা লাগে দ্বীপের। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে দ্বীপ ও দীপুকে চড়-থাপ্পড় মারে সৌরভ।
খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু হলের শতাধিক শিক্ষার্থী লাঠি, চাপাতি, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বটতলা এলাকায় অবস্থান নেয়। একই সময়ে ভাসানী হলের শিক্ষার্থীরাও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বটতলায় উপস্থিত হলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
এসময় উভয় হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়। ঘটনার পরপর সাংবাদিকদের কাছ থেকে খবর পেয়ে দুজন সহকারী প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সেখানে গেলেও পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকও সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি থামাতে ব্যর্থ হন।
দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে উপর্যুপরি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল ছোড়ার ঘটনা। এসময় আহত হয় অন্তত ৬৫ জন। সংঘর্ষ চলাকালে বঙ্গবন্ধু হলের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী লিটন (দর্শন) ও শাওন (আইআইটি) সহ কয়েকজনকে অন্তত ১২-১৫ রাউন্ড গুলি ছুড়তে দেখা যায়। বিকাল ৪টার দিকে আশুলিয়া থানার দুই প্লাটুন পুলিশ বটতলায় উপস্থিত হয়ে টিয়ারশেল মেরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ শৈবাল ও বঙ্গবন্ধু হলের ওয়ার্ডেন মেহেদী ইকবাল। সংঘর্ষের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করায় সাংবাদিক জোবায়ের কামালকে বঙ্গবন্ধু হলের ৪৪ ব্যাচের সিয়াম (নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ) সহ কয়েকজন মারধর করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের কর্তব্যরত চিকিৎসক লিখন চন্দ্র বালা জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৬৫জন শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০ জন ভর্তি রয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, সংঘর্ষে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রশাসনকেও বলবো জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের আমরা হলে ফিরিয়ে দিয়েছি। যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/০৩ জুলাই, ২০১৯/আরাফাত