বিশ্বজুড়ে তরুণরা সর্বসম্মতিক্রমে জলবায়ু পরিবর্তনকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে, কিন্তু অনেকেই অর্থবহ কোনো কার্যক্রমে যুক্ত হতে কিংবা এ ব্যাপারে কথা বলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে গত ৯ সেপ্টেম্বর এ তথ্য উঠে আসে।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ২৩টি দেশের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৮ হাজার তরুণদের মতামত, অভিজ্ঞতা, সদিচ্ছা এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি জানতে গ্লোবাল ইয়ুথ লেটারের এই রিপোর্টে মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
প্রতিবেদনে ২৩টি দেশের তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দৃঢ় ও সমবেত কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হয়েছে। এ গবেষণা প্রতিবেদন ব্রিটিশ কাউন্সিলের ক্লাইমেট কানেকশন প্রোগ্রামের অংশ। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলা এক গবেষণার ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
জরিপকৃত তরুণদের ২৫ শতাংশই প্রান্তিক অঞ্চলের, যাদের কাছে সহজে পৌঁছানো কঠিন এবং ৭৫ শতাংশ শহরাঞ্চলের। জরিপকৃতদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই ছিলেন নারী। এ প্রতিবেদন সাধারণভাবে উপেক্ষিত জনগোষ্ঠী, যেমন শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং সংখ্যালঘু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত তরুণদেরও মতামত গ্রহণ করা হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া ৬৭ শতাংশ তরুণ মনে করেন, দেশের নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি নিয়ে নিজ থেকে কিছু করেননি। তারা আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমানের জলবায়ু পরিবর্তন পলিসিতে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মতামত উপেক্ষিত রয়েছে।
প্রতিবেদনে নীতিগত সিদ্ধান্তে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি সামগ্রিক আহবানের বিষয় উঠে এসেছে। তরুণরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাদের সম্পৃক্ততা এক্ষেত্রে উদ্ভাবনী নানা ধারণা নিয়ে আসবে, যার ফলে আরও কার্যকরী উপায়ে এ বিষয়ে অনেকের কাছে পৌঁছানো যাবে।
নীতিনির্ধারকদের বাস্তবিক ও কাঠামোগত উপায়ে তরুণদের আগ্রহ ও উদ্দীপনাকে এ ব্যাপারে কাজে লাগানোর বিষয়ে এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে জানা গেছে, অনেক তরুণই অর্থবহ অবদান রাখতে চান কিন্তু এক্ষেত্রে অনেক সময় তারা পর্যাপ্ত সুযোগ পান না।
৭৫ শতাংশ তরুণ জানিয়েছেন, তাদের কমিউনিটিতে জলবায়ু পরিবর্তন সংশ্লিষ্ট বিষয় মোকাবিলায় তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা রয়েছে এবং ৬৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা জাতিসংঘের ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (কপ২৬) সম্পর্কে জানতেন। যদিও ৬৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রমে কখনও অংশগ্রহণ করেননি।
তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে কার্যক্রমে অংশগ্রহণে যেসব বিষয় বাধা হিসেবে কাজ করে তার মধ্যে রয়েছে: ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহারের সীমিত সুযোগ, জ্যেষ্ঠতার তিত্তিতে সমাজ কাঠামো যেখানে তরুণদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে এবং প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকা।
প্রতিবেদনে তরুণদের জলবায়ু পরিবর্তনে টুল হিসেবে ডিজিটাল চ্যানেলের গুরুত্ব ও সম্ভাবনার ওপর জোর দেয়া হয়। যদিও ডিজিটাল বৈষম্যের কারণে যেসব মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না এ প্রতিবেদনে তাদের বিবেচনায় নেয়ার বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে তরুণদের উদ্দীপনা এবং সুপারিশগুলি নির্ধারণের কর্ম পরিকল্পনা হচ্ছে গ্লোবাল ইয়ুথ লেটার। যেসব নীতিনির্ধারক ও বিশ্বনেতৃবৃন্দ জাতিসংঘের ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজে (কপ ২৬) অংশগ্রহণ করবেন তাদের উদ্দেশ্যে এ চিঠি লেখা হয়েছে।
এ চিঠিতে তরুণদের নিজেদের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করে চিঠিতে স্বাক্ষর করতে ও জলবায়ু পরবর্তন মোকাবিলায় অঙ্গীকারে গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়। https://www.britishcouncil.org/climate-connection/get-involved/global-youth-letter -এ লিঙ্কে গিয়ে চিঠিতে স্বাক্ষর করা যাবে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ কেট এওয়ার্ট-বিগস বলেন, 'তরুণরাই আগামীর নেতা এবং তারাই বিশ্বকে প্রভাবিত করবে; তাই তাদের কথা সরকারের কাছে কাছে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়া এবং নীতিগত সিদ্ধান্তে, যা তাদের ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করবে, তাদের সম্পৃক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।'
আগামী ১ থেকে ১২ নভেম্বর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য কপ২৬ আয়োজন করবে যুক্তরাজ্য। কপ২৬ সম্মেলনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য যুক্তরাজ্যের সরকারের উদ্দেশ্যের সমর্থনে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে উৎসাহিত করতে নিজেদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।
বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির