রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন করতে হলে নতুন করে আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইনের কোথাও ছাত্র সংসদ গঠনের কথা উল্লেখ নেই। তাই ইচ্ছে থাকলেও কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদের নির্বাচন দিতে পারছে না। অপরদিকে ছাত্র সংসদ না থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গত ১৫ বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকার বেশি সংসদ ফি আদায় করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ছাত্র সংসদ গঠনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় প্রথম থেকেই এই বিষয়ে কোনো আইনও প্রণনয়ন করা হয়নি। তবে প্রতি বছরই ছাত্র সংসদ বাবদ শিক্ষার্থীদের থেকে ফি আদায় করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসন বলছে সংসদ না থাকলেও ওই টাকা ছাত্রদের কল্যাণসহ অন্যান্য খাতে ব্যবহার হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, ছাত্র সংসদের নামে উত্তোলনকৃত টাকা কোন খাতে ব্যবহার হচ্ছে, এর কোনো পরিসংখ্যান নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশবিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী প্রায় ১১ হাজারের ওপর। প্রতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ বাবদ দু’শ টাকা করে ফি আদায় করা হয়। সে হিসাবে শিক্ষার্থীদের থেকে প্রতি বছরে ২২ লাখ টাকা আদায় করছে কর্তৃপক্ষ। গত ১৫ বছরে ছাত্র সংসদ ফি বাবদ আদায় হয়েছে ৩ কোটি টাকার ওপর।
শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই ছাত্র সংসদের ফি বাবদ আদায়কৃত টাকা খরচ করা হচ্ছে বলে দাবি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীরা বলছে অন্য কথা। তারা বলছেন, যে বিষয়ে কোনো আইন নেই, সে বিষয়ে টাকা আদায় করা আইনসম্মত হচ্ছে না। এ টাকা শুধু ছাত্র সংসদের খাতেই ব্যবহার হওয়া উচিত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে ওই টাকা ছাত্রদের কল্যাণে ব্যবহার হচ্ছে। ছাত্রদের কোন কল্যাণে ব্যবহার হচ্ছে এটাও স্পষ্ট নয় বলে দাবি করছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা প্রতিবছর ছাত্র সংসদের ফি বাবদ দু’শ টাকা প্রদান করে আসছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্রসংসদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাহলে কেন আমাদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদের নামে টাকা আদায় করা হচ্ছে।
তারা আরো জানায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলকভাবে ফি’র পরিমাণ কম থাকার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ফি আদায় করলে তা পরিশোধ করা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। তারা নতুন আইন করে ছাত্র সংসদের নির্বাচন দাবি করেন। অন্যথায় ছাত্র সংসদের নামে টাকা আদায় বন্ধ করার দাবি জানান। এমতাবস্থায় ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ গঠন অপরিহার্য। অবিলম্বে ছাত্র সংসদের আইন পাস করে নির্বাচনের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক প্রফেসর হাফিজুর রহমান বলেন, বেরোবি ছাত্র সংসদের কোনো আইন নেই। আদায়কৃত অর্থ অভ্যন্তরীণ আয় দেখানো হয় এবং সেই হিসেবে ব্যয় হয়। এছাড়া ইউজিসি প্রতি বছর অভ্যন্তরীণ আয়সহ হিসাব করে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাজেট দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের নাম সরাসরি উল্লেখ নাই।
বিডি প্রতিদিন/এমআই