৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ১২:২৮

জাবিতে বহিরাগত নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ: মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জাবিতে বহিরাগত নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ: মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৪

জাবি ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক‌ ও মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) বহিরাগত এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অন্যতম মূল অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃত মূল অভিযুক্তের নাম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর শাখার আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তবে ঘটনার পরপরই তাকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এছাড়া অভিযুক্তদের পালাতে সহযোগিতা করায় আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান, ৪৬ ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী এবং বোটানি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের সাব্বির হোসেন। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের পদধারী নেতা এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জানা গেছে, রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সকালে তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে হেফাজতে নিয়ে যায় আশুলিয়া থানা পুলিশ।

হলের সিসিটিভি ফুটেজে গ্রেফতারকৃতদের ধর্ষণে অভিযুক্ত মোস্তাফিজসহ অন্যদের পালাতে সহযোগিতা করতে দেখা গেছে।

এর আগে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল সংলগ্ন জঙ্গলে বহিরাগত ওই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণে অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন (৪৫)। তাদের মধ্যে মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।

জানা গেছে, ওই দম্পতির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। এর প্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগীর স্বামীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে আনেন তিনি। পরে ক্যাম্পাসে আসলে তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন অভিযুক্তরা। এরপর তার স্ত্রীকে দিয়ে নিজের রেখে আসা জিনিসপত্র আনতে বলেন মামুন। মামুনের কথা মতো তার জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে আসেন ভুক্তভোগী নারী। পরে জিনিসপত্র নিয়ে মামুন হলের ভিতরের ওই কক্ষে রেখে আসেন। এরপর তার স্বামী অন্যদিক থেকে আসবে বলে ওই নারীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে যান অভিযুক্তরা। সেখানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই নারী।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, “মামুন ভাই আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো। তিনি আমার স্বামীর মাধ্যমে ফোন দিয়ে আমাকে তার জিনিসপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে বলেন। আমি জিনিসপত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। তখন তিনি আমাদের বাসায় থাকবেন না বলে জানান। এছাড়া তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের মোস্তাফিজ ভাইয়ের কাছে থাকবে বলেও জানান।”

“এরপর মামুন আমার কাছ থেকে তার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে হলে রেখে আসে। পরে আমার স্বামী অন্যদিকে থেকে আসবে বলে আমাকে হলের সামনে থেকে পাশের জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়। তার সাথে মোস্তাফিজ ভাইও ছিল। তখন তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে,” বলেন ভুক্তভোগী।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে জানা যায়, তিনি সাভার মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন।

এদিকে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম বলেন, “ঘটনা শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, “ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যত ধরনের সহায়তা চাইবে আমরা দিব। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি বাস্তবায়নে কাজ করব।”

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানায় একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আব্দুর রাসিক বলেন, “ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানিয়েছেন। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিডি প্রতিদিন/আজাদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর