রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) কান্ট্রি ট্যুরে নিয়ম ভঙ্গ করে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে। এ কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বেহাত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে শেকৃবির এসভিএম অনুষদের সব শিক্ষার্থীর কান্ট্রি ট্যুরের টাকা উত্তোলন করলেও মোট ৫৩ জন অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে ফেরত যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও শিক্ষার্থীরা এবং স্ব স্ব গ্রুপের ট্যুর গাইড শিক্ষক টাকা উত্তোলন করে ট্যুরে অতিরিক্ত খরচ, জনপ্রতি টাকা ভাগ করে নেওয়াসহ ট্যুর পরবর্তী বুফে খাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেকৃবির এএসভিএম অনুষদের কান্ট্রি ট্যুরে যাওয়ার জন্যে ১২৮ শিক্ষার্থীকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। গ্রুপ তিনটির গাইড হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মাসুম, অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্ত এবং অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। শিক্ষার্থী প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ৫০০ টাকা। গাইড প্রতি ২৮ হাজার টাকা। ট্যুরের রুট নির্ধারিত ছিল ঢাকা-কক্সবাজার শহর সিলেটের জাফলং-ঢাকা, ঢাকা-গাজীপুর-ঈশ্বরদী-রাজশাহী-ঢাকা এবং ঢাকা-সাতক্ষীরা-খুলনা-বাগেরহাট-ঢাকা। ট্যুর হিসেবে তিনটি রুটের যেকোন দুইটিতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে অভিযোগ রয়েছে অনুষদের তিনটি গ্রুপই নিয়ম মেনে রুট অনুসরণ করেনি।
টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে জানা যায়, প্রথম গ্রুপের ৪২ জনের জনপ্রতি ৭৫০০ টাকা করে ৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করলেও ট্যুরে যায় মাত্র ২৫ জন। উত্তোলিত টাকা থেকে গ্রুপের মোট ৪২ জনের জনপ্রতি ১ হাজার টাকা ভাগ করে নেওয়া হয়। বাকি টাকা ট্যুরের উদ্দেশ্যে খরচ করেন ট্যুরে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় গ্রুপের ক্ষেত্রে ৪২ জনের মোট ৩ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা উত্তোলন করলেও মোট ট্যুরে যায় ২৬ জন। ট্যুরে খরচ হয় জনপ্রতি ১১ হাজার ৫০০ টাকা তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ছিল ৭ হাজার ৫০০ টাকা। এই গ্রুপে প্রতিজন জমা দিয়েছে ১ হাজার টাকা এবং বাকি জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে ট্যুরে না যাওয়া শিক্ষার্থীদের থেকে। এরপেরও বেচে যাওয়া অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ট্যুর পরবর্তীতে বুফে খাওয়া হয়। গ্রুপ তিনের ক্ষেত্রেও ৪৪ জনের টাকা উত্তোলন করলেও মোট ট্যুরে গেছে ২০ জন। উত্তোলিত বাকি ২৪ জনের টাকা ট্যুরে যাওয়া শিক্ষার্থীরা খরচ করেছেন তবে নেপালি শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গ্রুপ গাইডদের সাথে যোগাযোগ করলে ড. মো. আব্দুল মাসুম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার গ্রুপের প্রায় সকল কাজ দায়িত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা করেছে, টাকার ব্যাপারে কিভাবে তারা ম্যানেজ করেছে এটা তাদের কাছেই জানা যাবে। অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্ত বলেন, কোনো টাকা বেহিসাব হয়নি। সকল টাকা শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশেই খরচ করা হয়েছে। ট্যুরে যারা যায়নি তারাই টাকা তুলে তাদের বন্ধুদের জন্য খরচের অনুমতি দিয়েছে। ট্যুর শেষে ২২ হাজারের মত টাকা বেচেছিল, সেখান থেকেই ব্যুফেতে খরচ করা হয়েছে। অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার গ্রুপে যারা যায়নি তাদের মোট ৫২ হাজার টাকা কোষাগারে ফেরত দিয়েছি।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল লতিফ বলেন, বিষয়টি অনৈতিক। ট্যুরটি সম্ভবত আমার দায়িত্ব পাওয়ার আগে হয়েছে। আমার সময় চেষ্টা করব সবকিছু যেন রুলস মেনে হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল