দেশের ক্যাম্পাসগুলো ফ্যাসিবাদের কবলে থাকায় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির যে ধারা গড়ে উঠেছিল— এর পরিবর্তন করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক মুক্ত আলোচনায় এমন প্রত্যাশার কথা উঠে আসে।
স্টুডেন্টস এল্যায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির (স্যাড) উদ্যোগে 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সংকট ও সম্ভাবনা' শীর্ষক এই আলোচনা সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে বিকেল ৩টায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৭ টি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা হলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শাহরিয়ার ফারুক ভূঁইয়া, রাষ্ট্রচিন্তার আল- মাসনুন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর জশদ জাকির, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ঈশা দে, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের আজাদ হোসেন, স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসির আবির বিন জাবেদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মোনাল চাকমা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রিজাউর রহমান, নারী অঙ্গনের সমাইয়া শিকদার, গাউসিয়া কমিটির মুনতাসীর মাহমুদ, ক্লাব অ্যালায়েন্স অফ সিইউ এর সাজ্জাদ হোসেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের ধ্রুব বড়ুয়া, ছাত্র অধিকার পরিষদের তামজিদ উদ্দীন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিশের সাকিব মাহমুদ রুমী, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের তারেক মনোয়ার, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের আমিনুল ইসলাম রাকিব।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর প্রতিনিধি জশদ জাকির বলেন, আমি ছাত্র রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন কারণ দেখি না। কারণ মহাবিশ্বের একটি বালুও রাজনীতি বহির্ভূত না। এখানে প্রশ্ন হওয়া উচিত কোন ধরনের রাজনীতি থাকবে বা থাকবে না। ছাত্ররাজনীতির সবচেয়ে বড় সংকট কোন সিনিয়র সংগঠনের লেজুড় থাকা। ছাত্র হয়েও সিনিয়র কোন সংগঠনের উদ্দেশ্য সার্ভ করা।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের আজাদ হোসেন বলেন, ছাত্র রাজনীতি ও গুন্ডামী দুইটা আলাদা বিষয়। ছাত্র রাজনীতি মানে গুন্ডামী, মাস্তানী, হল দখলদারি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি না। আমরা এতদিন রাজনীতির নামে এসব দেখে এসেছি। তাই ছাত্র রাজনীতি সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠবে ছাত্র রাজনীতি তাহলে কি? আমার মতে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান যে সংকট তা সংশোধনের জন্য লড়াই করাই ছাত্র রাজনীতি।
রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিনিধি আল মাশনুন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের নিপীড়ন চলেছে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে। আমরা দেখেছি শিবির করার কারণে এবং শিবির ট্যাগ দিয়ে ছাত্রদের মারধর করে তুলে নেওয়া হতো। প্রশাসন ছাত্রদের রক্ষা না করে উল্টো পুলিশে দিয়ে দিতো। ছাত্রলীগ এতবড় দানব হতে পারতো না যদি প্রশাসন সাহায্য না করতো। আমরা বিশ্বাস করি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী তার নূন্যতম অধিকার ভোগ করবে। হলে তার একটি সিট থাকবে, খাবারের মান ভালো হবে। তাহলে শিক্ষার্থী কে হলের সিটের জন্য অনিচ্ছাসত্বেও কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে হবে না। বরং শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক দল কে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিনিধি শাহরিয়ার ফারুক ভূঁইয়া বলেন, আমরা রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছি। এখন আর মানুষ গতানুগতিক রাজনীতি চায় না। আমরা চাই সুস্থ রাজনীতি, মেধা বিকাশের রাজনীতি। আগের রাজনীতি ছিলো কে কার থেকে বড় মুজিবাবাদী তা প্রমাণের রাজনীতি। এসব জায়গা থেকে দূরে সরিয়ে দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতার রাজনীতি করবে ছাত্রদল। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ক্যাম্পাসে শোডাউন ও দখলদারিত্বের রাজনীতি ছাত্রদল করবে না।
বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক সাইদ বিন হাবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির অন্যতম বড় সংকট ভিন্ন দল ও মতকে সহ্য করতে না পারা। আমরা ইতিপূর্বে দেখতাম একক আধিপত্য বজায় রাখতে অনুগত দলদাস তৈরি করা হতো। কিন্তু ইসলামি ছাত্রশিবির মনে করে রাজনৈতিক আদর্শ কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না। আদর্শের ক্ষেত্রে জোর-জবরদস্তি করা যাবে না। প্রত্যেক দল ও মত তার আদর্শ প্রচার করবে, শিক্ষার্থীরা যে আদর্শ পছন্দ করবে তা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যেও সহিষ্ণুতা থাকবে যেন যেন অন্য মত কে সুযোগ করে দিতে পারে।
মুক্ত আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশত শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে করা প্রশ্নেরও জবাব দেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক