বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রয়োজন মোটিভেশন

শামছুল হক রাসেল

প্রয়োজন মোটিভেশন

কর্মক্ষেত্রে একটা সময় প্রায়ই মনে হয়, হয়তো ডেটলাইন মেনটেইন করাই জীবনের মূল লক্ষ্য। আর এই ইঁদুর দৌড়ে পিছিয়ে পড়লেই আঁকড়ে ধরে ডিপ্রেশন আর হেরে যাওয়ার যন্ত্রণা। তাহলে কি এই স্ট্রেস থেকে নিস্তার পাওয়ার কোনো রাস্তা নেই? অবশ্যই আছে। স্ট্রেস, টেনশন, অ্যাংজাইটি মোকাবিলার অস্ত্র হলো পজিটিভ আউটলুক বা জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং মোটিভেশন।

ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি : আমরা মনে যা ভাবছি তার ওপর নির্ভর করে আমাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ এমনকি বিভিন্ন বিষয়ে নেওয়া বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও। ধরা যাক কারও ব্যবহারে আপনি খুব অপমানিতবোধ করেছেন। সারাদিন সেই অপমানবোধটাই আপনার মধ্যে জাগিয়ে তুলছে রাগ, বিদ্বেষ, সন্দেহের মতো নানা খারাপ অনুভূতি। দিনের শেষে হয়তো দেখা গেল অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছেন, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন এবং নিজেকে আরও সমস্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ঠিক এ সময়ই কাজ দেবে পজিটিভ থিঙ্কিং। জীবনের নানা চ্যালেঞ্জ, প্রতিকূলতার মধ্যে এই পজিটিভ আউটলুকই ফিরিয়ে আনে আশা, আনন্দ এবং স্বস্তি।

কি করে হবেন : নিজের চিন্তাভাবনার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন। কোনো মন্তব্য বা ঘটনা আপনার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার আগেই সেটা মনে মনে একবার কাটাছেঁড়া করে নিন। ঠিক যে কথা বা ঘটনা আপনার মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করছে সেটাকে যুক্তি দিয়ে সাজিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। যদি আপনার কোনো দোষ থেকে থাকে তাহলে সেটাকে একটা লার্নিং হিসেবে নিন যাতে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার না হতে হয়। যদি আপনার আদৌ কোনো ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে অন্তত নিজের কাছে নিজে পরিষ্কার আছেন জেনে নিশ্চিন্তে থাকুন। অপরের ভুলের জন্য নিজের মনকে কলুষিত করা কোনো কাজের কথা নয়। বন্ধু বা কলিগদের মধ্যে যারা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত, তাদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। কোনো সমস্যায় পড়লে তাদের থেকে পরামর্শ চান। এরা আপনার কর্মক্ষমতা বাড়াবে, সাহস দেবে এবং জীবনকে ভালোভাবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করবে। যারা নেগেটিভ টেম্পারমেন্টের মানুষ অর্থাৎ সব কিছু অহেতুক সমালোচনা করেন, অন্যের সাফল্য সন্দেহের চোখে দেখেন তাদের এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন সকালে

উঠে নিজেকে নিজে বলুন, ‘আমি ভালো আছি। আমি ভালো থাকব’। দৃঢ়বিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে বলা এই কথাগুলো আপনাকে নতুন সাহস জোগাতে সাহায্য করবে।

অন্যদিকে, কর্মজীবনে সফলতা পেতে প্রয়োজন মোটিভেশন। মোটিভেশনের অভাব শুধু কাজের ইচ্ছাই কেড়ে নেয় তা নয়, ব্যক্তিজীবনেও ডিপ্রেশন ডেকে আনে। কাজের চাপ, নানা জটিলতা, সহকর্মীদের অসহযোগিতা, মনের মতো কাজের অভাব ইত্যাদি কারণে মোটিভেশনের জাঁতাকলে পড়তে পারেন। কিন্তু সুস্থভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কী করে ফিরিয়ে আনবেন হারিয়ে যাওয়া মোটিভেশন-

কী করবেন : নেতিবাচক চিন্তাভাবনাই মোটিভেশন নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ। সে জন্য প্রথমেই নিজের চিন্তাভাবনাগুলো ভালো করে বিশ্লেষণ করুন। প্রতিটি মন্তব্য শোনার পর রিঅ্যাক্ট করার আগে সেটা একবার মনে মনে কাটাছেঁড়া করে নিন। কোনো বিশেষ কথা কি আপনার অপছন্দ? নাকি মন্তব্যকারীকে আপনি একেবারেই পছন্দ করেন না বলেই তার কথা শুনতে বিরক্তি লাগছে? যতটা সম্ভব যুক্তি দিয়ে নিজের মনের ভাবটা বোঝার চেষ্টা করুন। নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকলে চট করে নেগেটিভ হয়ে ওঠা মুশকিল। আপনার ফ্রেন্ড সার্কেল বা কলিগদের মধ্যে যারা ইতিবাচক মনোভাবাপন্ন তাদের সঙ্গে বেশি ইন্ট্যার‌্যাক্ট করুন। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে পরামর্শ চান। একসঙ্গে অফিসের নানা সমস্যার সমাধান করুন। তারা পরোক্ষভাবে আপনাকে পজিটিভ থিঙ্কিংয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাবেন। ফলে কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়বে। যেসব কলিগ স্বভাবতই সন্দেহপ্রবণ এবং সমালোচনাপ্রিয়, তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কয়েকটি পজিটিভ পার্সোনাল হ্যাবিট মোটিভেশন বাড়াতে সাহায্য করে। ব্যালেন্সড ডায়েট, ফিটনেস রেজিম, হেলদি লাইফস্টাইল আপনাকে সুস্থ শরীরের সঙ্গে সঙ্গে এক সুস্থ মনেরও অধিকারী করে তোলে। ছোট ছোট টার্গেট অ্যাচিভ করতে পারলে, আত্মবিশ্বাস আপনাআপনি মজবুত হবে। এই আত্মবিশ্বাসই আপনাকে ভালো কাজের দিকে মোটিভেট করবে।

তাই ডিপ্রেশন নয়, প্রত্যেকের প্রয়োজন এই মোটিভেশন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর