২৬ মে, ২০২২ ১৩:১৫

সিলেটে করোনার পর বন্যার ধাক্কা, হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

সিলেট ব্যুরো

সিলেটে করোনার পর বন্যার ধাক্কা, হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

প্রাণঘাতী করোনা সিলেটে পুরো দুই বছর তাণ্ডব চালিয়েছে। এরপর ভাইরাসটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নিস্তেজ হতে শুরু করে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সিলেটের মানুষ যখন কোমর সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন, ঠিক তখনই প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। ভয়াল বন্যায় সিলেটের জনপদ ফের লণ্ডভণ্ড। 

বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ এখন চরম বিপাকে। বিধ্বস্ত বাড়ি-ঘর সংস্কারের সামর্থ্য নেই, নেই একবেলা খেলে আরেক বেলা খাবারের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে বন্যার কারণে সিলেটে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এটি প্রাথমিক তথ্য। পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ার সমূহ আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিলেট জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগর এবং জেলার ১৩টি উপজেলার সড়ক ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ খাতে প্রায় ৪০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ও কৃষি খাতে ১৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গবাদিপশু-পাখি, খড়-ঘাসসহ এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ টাকা।

এছাড়াও জেলার প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কলেজ ডুবে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জেলায় ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো জমি, ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর আউশ বীজতলা ও ১ হাজার ৫৩৮ হেক্টর সবজি খেত নিমজ্জিত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় এলজিইডি’র আওতাধীন ১২০টি রাস্তার ২৭৭ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২৪৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, এ দপ্তরের আওতাধীন ৭২ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এর বাইরে আরও ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৭৫ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।
 
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী- মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার তিন উপজেলায় এক হাজার দুইশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১৩০টি ঘর। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তিনটি উপজেলার মধ্যে কানাইঘাটে বন্যার পানিতে ভেঙে গেছে ৩৫১টি ঘর। এর মধ্যে ২৮৯টি আংশিক ও ৬২টি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৮৩টি বাড়িঘর। এর মধ্যে ৬৮টি পুরোপুরি ও ৪১৫টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৩৬৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, বাড়ি-ঘর ও বিভিন্ন খাতে বন্যায় সিলেট নগর এবং জেলায় অন্তত হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এখনই পুরোপুরি হিসেব পাওয়া যাচ্ছে না। বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ হিসাব মিলবে। তখন ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে।

উল্লেখ্য, ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে গত ১১ মে থেকে বন্যার সৃষ্ট হয়। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল- সবখানেই হানা দেয় বন্যা। ১০-১২ দিন তাণ্ডব চালিয়ে গত ২০ মে থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার পানি নেমে গেলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে এখনও অনেক রাস্তা-ঘাট এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। ফলে বন্যার্তরা এখনও পোহাচ্ছেন দুর্ভোগ। 

বুধবার (২৫ মে) বিকালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট জানিয়েছে, সিলেটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুটি পয়েন্টে এখনো পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর