বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র সম্ভাব্য আঘাত মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দা ও পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠী প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার।
শুক্রবার থেকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করেছে জেলা প্রশাসন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি। উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, পৌর ও ইউনিয়ন ওয়ার্ড কমিটির সভা করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামের উপকূলীয় সন্দ্বীপ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই উপজেলাসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১নং পতেঙ্গা ওয়ার্ড, ৩৯নং হালিশহর ওয়ার্ড, কাট্টলী ওয়ার্ড, রাণী রাসমনিঘাট, আকমল আলী ঘাট এলাকায় ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় জোর প্রচারণা চালানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা হুসাইন মুহাম্মদ বলেন, ৫৩০টি স্থায়ী এবং ৫০০টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ লাখ ১ হাজার ১১০ জন আশ্রয় নিতে পারবে। এছাড়া ৮ হাজার ৮৮০ জন সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত সরঞ্জামসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, নেভি ও কোস্ট গার্ডের রেসকিউ বোট এবং মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নগরে ৯৪টি স্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাগর এখনও উত্তাল হয়নি, যার কারণে উপকূলীয় এলাকাবাসীকে সরানো হয়নি, তবে তারা প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় ৬০৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ করা হয়েছে। শুকনা খাবারের মধ্যে ৩.৫ মেট্রিক টন টোস্ট বিস্কুট, ৩.৪০২ মেট্রিক টন ড্রাই কেক, ৩০ হাজার প্যাকেট ওরস্যালাইন ও ৬০ হাজার প্যাকেট পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ফটিকছড়িতে অস্থায়ী ১১২টি, হাটহাজারীতে ১৮টি, মীরসরাইয়ে স্থায়ী ৮৫টি, রাঙ্গুনিয়ায় অস্থায়ী ২১৭টি, রাউজানে স্থায়ী ২টি, সন্দ্বীপে স্থায়ী ১১৬টি স্থায়ী, সীতাকুণ্ডে স্থায়ী ২৫টি, বাঁশখালীতে স্থায়ী ১২২টি, বোয়ালখালীতে স্থায়ী ৮টি, চন্দনাইশে স্থায়ী ৬টি, পটিয়ায় অস্থায়ী ১২৬টি, সাতকানিয়ায় স্থায়ী ৪টি, আনোয়ারায় স্থায়ী ৫৮টি, লোহাগাড়ায় অস্থায়ী ২৮টি, কর্ণফুলীতে স্থায়ী ১০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি)। চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ বলেন, ‘ক্ষতি কমাতে ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। নগরীর দামপাড়ায় কন্ট্রোল রুমের ০২৩-৩৩৩-৬৩০-৭৩৯ এই জরুরি সেবা নম্বরে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও সেবা পাবেন চট্টগ্রামবাসী।
এছাড়া নাগরিকদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করছে চসিক। পাশাপাশি আরবান মেডিকেল টিম, আরবান ভলান্টিয়ার ও উদ্ধারকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় যানবাহন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সড়কবাতি নির্বিঘ্ন রাখার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল