ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। গত দুইদিন ধরে গ্যাস সরবরাহ না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে গ্যাস ফিলিং স্টেশনও। ফলে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পু উধাও হয়ে গেছে নগর থেকে। পুরো চট্টগ্রাম এখন রিকশার নগরীতে পরিণত হয়েছে। আর এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষের রিকশা করে যাতায়াত করতে হচ্ছে কর্মস্থলে। আগামীকাল মঙ্গলবার এসএসসি পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে প্রভাব পড়বে যানবাহন সংকট, এমন মনে করছেন অভিভাবকরা।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বেলায়েত হোসেন বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে ৭০ শতাংশ সিএনজি অটোরিকশা, ৪০ শতাংশ হিউম্যান হলার ও প্রায় ১৫ শতাংশ বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গ্যাস সংকট শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতি চলবে। এসব গণপরিবহনে গ্যাস না থাকলে তো আর সড়কে নামিয়ে কোনো কাজে আসবে না। আমাদেরও লোকসান হচ্ছে, কি আর করার মানিয়ে নিতে হবে। অথচ এ সুযোগে রিকশা ভাড়া দ্বিগুণ করে নেওয়া হচ্ছে। গ্যাস সংকট কেটে গেলে এ সমস্যাও সমাধান হবে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে দৈনিক ২৭৫ থেকে ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে বাসা-বাড়িতে গ্যাসের চাহিদা ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। আমরা প্রথমে বাসা-বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করছি। এরপর শিল্পাঞ্চল ও বাণিজ্যিক গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। আশা করছি এ সমস্যা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হবে।
এদিকে মঙ্গলবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা রয়েছে। লোকাল পরিবহন না থাকার কারণে পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একজন পরীক্ষার্থীর সাথে একজন অভিভাবক থাকেন, সে হিসেবে নগরে গাড়ির সংকটের কারণে অনেক পরীক্ষার্থীর সময় মতো কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
নাজমা সাইদ নামে এসএসসি পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, মোখার অজুহাতে গ্যাস বন্ধ করে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। রান্না করার জন্য গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই। ছেলের এসএসসি পরীক্ষা চলছে। কিন্তু সিএনজি সংকটে পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই। সাইক্লোন তো আরো বহুবার এসেছে। কিন্তু এভাবে গ্যাস বন্ধ তো অতীতে কখনো হয়নি। এতো ভোগান্তির শেষ কোথায়? শুধু আমার নয়, বেশিরভাগই এসএসসি পরীক্ষার্থীর সমস্যা হবে কেন্দ্রে যেতে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা উচিত।
চকবাজার এলাকায় কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী ইবরাহিম খলিল নামে একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাসায় খাবারের সংকট, রাস্তায় গাড়ি সংকট। সাধারণ মানুষ যাবে কই। একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরো চট্টগ্রামে এ অবস্থা হওয়ার কথা নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতেই পারে। তাই বলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা থাকবে না, তা হতে পারে না।
নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মোড়ে মোড়ে গাড়ির অপেক্ষা করছে যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর একটি বাস কিংবা টেম্পু আসলেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন সবাই। কার আগে কে উঠবে, এ প্রতিযোগিতা করে উঠতে হচ্ছে। আর নারী যাত্রীদের বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে এক্ষেত্রে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে গণপরিবহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে আবার অনেককে রিকশা করে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। যে সব যানবাহন চলছে, তাতেও বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আবার রিকশাও অন্য দিনের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে।
নগরের বহদ্দার হাট থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত সিটি বাসের ভাড়া ৫ টাকা ও টেম্পুর ভাড়া ১০ টাকা। রিকশা নিয়মিত ৬০-৭০ টাকা করে যাতায়াত করে। কিন্তু যানবাহন সংকটের অজুহাতে এবার সে ভাড়া দাবি করে ১০০-১২০ টাকা পর্যন্ত। এভাবে নগরের প্রায় সবক’টি সড়কে বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশা করে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই