চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘ জো বাইডেন ও বাঘিনী জয়া দম্পতির ঘরে জন্ম নিল তিন শাবক। সোমবার দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের উপস্থিতিতে বাঘ শাবকগুলোকে প্রথম জনসম্মুখে আনা হয়। জন্মের এক মাস পর শাবক তিনটির নাম রাখা হয়- প্রকৃতি, স্রোতস্বিনী ও রূপসী। আগামী ঈদে বাঘ তিনটির সৌন্দর্য দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন।
জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চিড়িয়াখানার বাঘিনী তিনটি শাবক জন্ম দেয়। তিনটিই মেয়ে শাবক। এতদিন তাদের চিড়িয়াখানায় জনসম্মুখে আনা হয়নি। বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মোট ১৭টি বাঘ আছে। এর আগে এ খান থেকে প্রাণী বিনিময় পদ্ধতির মাধ্যমে দুটি বাঘ রংপুর চিড়িয়াখানায় পাঠিয়ে সেখান থেকে আনা হয় জলহস্তি।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, জন্ম নেয়া তিনটি বাঘ শাবকের নাম রাখা হয় রূপসী, প্রকৃতি ও স্রোতস্বিনী। এক মাস আগে জন্ম নিলেও আজই তাদের জনসম্মুখে আনা হয়। বর্তমানে এখানে মোট ১৭টি বাঘ আছে। তিনি বলেন, চিডিয়াখানায় যে বাঘগুলো আছে তার মধ্যে সাদা বাঘগুলো বিরল প্রজাতির। এই চিড়িয়াখানায় বাঘ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এখানকার কর্তকর্তারা বেশ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। চিড়িয়াখানার পাশে উদ্ধার করা প্রায় ১০ একর খাস জমিতে একটি বার্ডসপার্ক করা হবে। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে কিছু পাখিও অর্ডার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনটি শাবক জন্ম দেয় বাঘিনী জয়া। এক সপ্তাহ পর তিনটি শাবকই মেয়ে বলে নির্ধারণ করা হয়। শাবকগুলো মা জয়ার সঙ্গে থাকছে। মাও ভালো সাড়া দিচ্ছে। আজকে বাঘগুলোকে প্রথমবারের মত প্রকাশ্যে আনা হয়। আশা করছি সামনে ঈদে এই বাঘ তিনটি দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, বাঘিনী জয়ার জন্ম ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এবং বাঘ জো বাইডেনের জন্ম ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ সালে। জন্মের পর মায়ের ভালোবাসা পায়নি এই বাঘটি। বাঘটি চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনায় বেড়ে উঠে। এক বছর লালন-পালন করার পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় খাচায় অবস্থিত অন্যান্য বাঘ পরিবারের সঙ্গে সোশালাইজেশনের মাধ্যমে সদস্য হিসেবে রি-ইন্ট্রোডাকশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এই প্রথমবারের মত সে নিজের পরিবার তৈরি করলো। মানুষের হাতে লালন পালন হয়ে পুনরায় বাঘ পরিবারের সঙ্গে একত্রিকরণের মাধ্যমে বংশবিস্তার করার চক্র একটি বিরল ঘটনা।
প্রসঙ্গত, প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তিতে স্বাক্ষর করায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্মানার্থে বাঘটির নাম রাখা হয় ‘জো বাইডেন’।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এটি প্রতিষ্ঠা হয়। তবে ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য সচিবের উদ্যোগে টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে আমূল পরিবর্তন হয় চিড়িয়াখানার। বর্তমানে এখানে ৭০ প্রজাতির ৬২০টি পশু-পাখি আছে। এর মধ্যে বাঘ, সিংহ, কুমির, জেব্রা, ময়ূর, ভালুক, উটপাখি, ইমু, হরিণ, বানর, গয়াল, অজগর, শিয়াল, সজারু, বিভিন্ন জাতের পাখি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নতুন করে নির্মাণ করা হয় নান্দনিক সিড়ি, পুরাতন খাঁচাগুলো ফেলে দিয়ে বানানো হয়েছে নতুন খাঁচা। কুমিরের খাঁচা সম্প্রসারণ করে করা হয় দ্বিগুণ। ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে প্রধান ফটক। বাড়ানো হয়েছে পশু পাখির সংখ্যা। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে নির্মিত হয়েছে ৩২ হাজার ১৬৪ বর্গফুট আরসিসি ঢালাইয়ের রাস্তা। পুরো চিড়িয়াখানা এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে বিস্তৃত পরিসরের কিডস জোন। দর্শনার্থীদের জন্য বানানো হয়েছে নান্দনিক রূপের বসার স্থান এবং শৌচাগার। চিড়িয়াখানার তাপমাত্রা সঠিক রাখতে লাগানো হয়েছে হাজারেরও বেশি ফলদ ও ফলজ বৃক্ষ। প্রাণিখাদ্য সংরক্ষণের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আলাদা স্টোর রুম, কোয়ারেন্টাইন রুম এবং অপারেশন থিয়েটারসহ আধুনিক প্রাণি হাসপাতাল। দর্শনার্থী ফি দিয়ে চিড়িয়াখানার পশু-পাখির খাদ্য যোগান ও নতুন প্রাণি সংগ্রহ করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/এএম