এক সময় উত্তরবঙ্গ থেকে সবজি এনে চাহিদা মেটাতে হতো চট্টগ্রামের চাহিদা। তবে এখন পরিবর্তন হয়েছে সময়ের। গত ১০ বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রামে সবজির চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে উৎপাদনও। তবে বাজারে তার যেন কোন প্রভাব পড়ছে না। চাষাবাদ আর উৎপাদন বাড়লেও সবজির বাজারে মিলছে না স্বস্তি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সবজি চাষে লাভবান বেশি হওয়ার কারণে বেশিরভাগই কৃষক ঝুঁকছে সবজি উৎপাদনে। যার কারণে এক দশকের ব্যবধানে বেড়েছে সবজির উৎপাদন। তবে উৎপাদন বাড়লেও বাজারে সবজির যেভাবে দাম চড়া সে অনুযায়ী লাভবান হচ্ছে না কৃষকরা। মূলত ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা মধ্যস্থতা করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। আর সেই লাভের ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান বলেন, চট্টগ্রামের এবার ৩৩ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবজি আবাদ বাড়ানোর জন্য সরকার প্রতি বছর সহায়তা দিয়ে আসছে। চলতি মৌসুমের শুরুতে বন্যায় কৃষিতে বড় ক্ষয়-ক্ষতি হয়। সবজি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ৬৬ হাজার কৃষককে ৮ ধরনের সবজি বীজসহ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। হাইব্রিডসহ নানা জাতে বীজের মাধ্যমে কম সময়ে সবজি উৎপাদনে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বাজারে দাম ভালো থাকায় লাভ বেশি হয়। আমরা মূলত কৃষককে লাভবান করার যে লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছি, তাতে আমরা ভালো সফল হচ্ছি। যার কারণে কৃষকরা দিন দিন সবজি উৎপাদনে আগ্রহ বাড়ছে।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে পাইকারী সবজির বাজার রিয়াজুদ্দীন বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দীন মিন্টু সওদাগর বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর সবজির দাম অনেক কমেছে। সর্বোচ্চ ৫০ টাকার মধ্যে কেজি প্রতি সবজি আমরা বিক্রি করছি। উৎপাদন বাড়ার কারণে বাজারে তার প্রভাব পড়ছে। কিন্তু খুচরা বাজারে হয় তো নানা কারণে দাম বাড়ছে। তবে কেন দাম বাড়ছে সেটা বলতে পারি না। পাইকারি বাজারে সবজির দাম এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসেছে।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষক থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা সবজি নিয়ে আসছে। এরপর সে খুচরা বাজারে যাচ্ছে। এই যে কয়েক দফা হাত বদল হচ্ছে তাতেই মূলত দামটা বাড়ছে। কারণ খুচরা ব্যবসায়ীদের হাতে আসার পর পরিবহন খরচ, স্টাফ বেতন, দোকান ভাড়া যুক্ত হচ্ছে। যার কারণে প্রতিটি সবজিতে ১০-২০ টাকা দাম বেড়ে তা স্বাভাবিকের তুলনায় অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সীতাকুণ্ডে দুই উপজেলাকে সবজি ভাণ্ডার বলা হয়। এছাড়াও বাঁশখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, রাঙ্গুনিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর সবজির চাষাবাদ হয়। গ্রামাঞ্চল ছাড়াও নগরীর হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায়ও ব্যাপক হারে সবজির চাষাবাদ করা হয়। এখানকার উৎপাদিত সবজি এখন চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৪-১৫ মৌসুমে চট্টগ্রামে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ১৭৬ হেক্টর। চলতি মৌসুমে ৩৩ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। ১০ বছরে সবজি উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে।
সবজি ভাণ্ডারখ্যাত চন্দনাইশ ঘুরে দেখা যায়, শঙ্খ নদীর উভয় পাড়ে পাহাড়ি টিলা, সমতল, নদী তীরবর্তী জমিতে বেগুন, মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বরবটি, টমেটো, লাউ, শিমসহ নানা প্রকারের শাক-সবজির চাষ করা হয়েছে। পাহাড় ও শঙ্খ নদীর তীরে দুই চোখজুড়ে শুধু সবজি ক্ষেত আর সবজি ক্ষেত। কৃষক-কৃষণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজি উৎপাদন, পরিচর্যা আর সবজি উত্তোলনে। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে কৃষকেরা উৎপাদিত সবজি আনেন দোহাজারী রেলওয়ে বাজারে। এখান থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদার সবজি নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন বাজারে। কারো যেন দম ফেলানোর ফুসরত নেই
চন্দনাইশের চাষি মো. হাসান বলেন, গত বছর দুই কানি জমিতে সবজি চাষ করেছেন। এবার চার কানি জমিতে চাষ করেছে। প্রতি কানিতে সবজি রোপণে খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। আরও দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশা করছেন তিনি। একই কথা বললেন আরেক চাষি মো. মারূপ। তিনি বললেন, এবার আড়াই কানি জমিতে সবজির চাষ করেছেন। প্রতিদিন দোহাজারী বাজারে সবজি বিক্রি করেন। সবমিলে পৌনে দুই লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশা করছেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল